একপেশে লড়াইয়ে বাংলাদেশকে পাত্তাই দিল না শ্রীলঙ্কা। টি-২০ এশিয়া কাপের হেভিওয়েট ম্যাচে লিটনদের ৬ উইকেটে হারিয়েছে চারিথ আশালাঙ্কার শ্রীলঙ্কা। খেলাটা যখন শেষ হয়েছে, তখনো বল বাকি ছিল ৩২টি। এই হারে টাইগারদের সুপার ফোরে খেলা শঙ্কায় পড়ে গেছে। অবশ্য টানেলের শেষপ্রান্তে আলো দেখার মতো অল্প একটু আশা টিকে আছে লিটনদের। এজন্য ১৬ সেপ্টেম্বর শেষ ম্যাচে অবশ্যই হারাতে হবে আফগানিস্তানকে। আবার ১৮ সেপ্টেম্বর আফগানিস্তানকে হারতে হবে শ্রীলঙ্কার কাছে। ২০২২ সালে সর্বশেষ টি-২০ এশিয়া কাপের সুপার ফোরে খেলেনি বাংলাদেশ। ১৪০ রানের টার্গেটে শ্রীলঙ্কাকে জয় উপহার দেন ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কা ৩৪ বলে ৬ চার ও এক ছক্কায় ৫০ রানের ইনিংস খেলে। ম্যাচসেরা কামিল মিশারা অপরাজিত থাকেন ৩২ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় ৪৬ রানে। শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক আশালাঙ্কাকে উইনিং মানি পুরস্কার তুলে দেন বাংলাদেশের ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের হেভিওয়েট ম্যাচটি ছিল নানান নাটকীয়তায় ভরা। বিশেষ করে টাইগারদের ইনিংসটি ছিল দীর্ঘদিন মনে রাখার মতো! ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে লিটন বাহিনীর ইনিংসে কোনো হাফ সেঞ্চুরি নেই। স্কোর বোর্ডে রান ওঠার আগে বাংলাদেশ হারিয়ে বসে দুই ওপেনারকে। ইনিংসের শুরুর ১০ বলে (১.৪ ওভার) সাজঘরে ফেরেন দুই ওপেনার তানজিদ তামিম ও পারভেজ হোসেন ইমন। দুজনেই রানের খাতা খুলতে পারেননি। ০ রানে ২ উইকেট হারানোর পর জুটি বাঁধেন টাইগার অধিনায়ক লিটন ও তাওহিদ হৃদয়। দুজনের জুটিতে টাইগারদের স্কোর কার্ডে প্রথম রান লেখা হয় ২.২ ওভার বা ১৪তম বলে লিটনের ব্যাটে। ৪.৩ ওভারে দলীয় ১১ রানে রানআউট হন হৃদয়। পঞ্চম ওভারের দ্বিতীয় বলে শ্রীলঙ্কান অধিনায়কের কল্যাণে বেঁচে যান তিনি। পরের বলে ৩ রান নিতে গিয়ে সরাসরি থ্রোয়ে রান আউট হন হংকং ম্যাচে ৩৫ রানে অপরাজিত থাকা হৃদয়। চরম বিপর্যয়ে পড়া বাংলাদেশের স্কোর তখন ৩ উইকেটে ১১। ওই ওভারের পঞ্চম বলে প্রথম চার মারেন শেখ মেহেদি। টি-২০ ফরম্যাটের ক্রিকেটে ৬ ওভারের পাওয়ার প্লেতে টাইগাররা সংগ্রহ করে ৪ উইকেটে ৩০ রান। সেটাও এসেছে ষষ্ঠ ওভারের শেষ ৪ বলে অধিনায়ক লিটনের ৩ চার হাঁকানোয়। অবশ্য ওভারের প্রথম বলে দাশুন শানাকা ক্যাচ ধরতে ব্যর্থ হওয়ায় বেঁচে যান লিটন। অধিনায়কের ব্যক্তিগত স্কোর তখন ৬ এবং দলের ৩/১৮। জীবন পেয়েও ইনিংসটি বড় করতে পারেননি। দশম ওভারের পঞ্চম বলে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে সুইপ খেলেন টাইগার অধিনায়ক। বল গ্লাভসে লেগে ওপরে উঠে যায়। শ্রীলঙ্কান উইকেটরক্ষ কুশল মেন্ডিস বল গ্লাভসবন্দি করে আউটের আবেদন করেন। আম্পায়ার শুরুতে আউট দেননি। দ্বীপরাষ্ট্রের অধিনায়ক আশালাঙ্কা রিভিউ নেন। তখন দেখা যায় স্নিকোমিটারে বল গ্লাভস ছুঁয়ে গেছে। ২৬ বলে ৪ চারে ২৮ রান করা লিটন হাঁটা ধরেন সাজঘরে। অবশ্য ওই ওভারে হাসারাঙ্গার বল লিটনের ব্যাটের কানায় লাগলে রিভিউতে বেঁচে যান। ওই ওভারে মেহেদিকে লেগ বিফোর করেন হাসারাঙ্গা। ১০ ওভার শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৫ উইকেটে ৫৪ রান। দলীয় ৫৩ রানে অধিনায়কের বিদায়ের পর হাল ধরেন জাকের আলি অনীক ও শামীম হোসেন পাটোয়ারি। দুজনে পঞ্চম উইকেট জুটিতে টি-২০ ক্রিকেটে বাংলাদেশের পক্ষে নতুন রেকর্ড গড়েন। ২০২২ সালে দুবাইয়ে আরব আমিরাতের বিপক্ষে পঞ্চম উইকেট জুটিতে ৫৪ বলে ৮১ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েছিলেন আফিফ হোসেন ও নুরুল হাসান সোহান। আফিফ অপরাজিত ৭৭ ও সোহান অপরাজিত ৩৫ রান করেছিলেন। গতকাল জাকের-শামীম জুটি ৬৫ বলে ৮৬ রানে অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন। শামীম ৩৪ বলে অপরাজিত ৪২ ও জাকের ৩৪ বলে অপরাজিত ৪১ রান করেন। দুজনের দৃঢ়তায় লিটন বাহিনী শেষ ৫ ওভারে যোগ করেন ৪৬ রান। ইনিংসে টাইগাররা বাউন্ডারি মারে ১০টি এবং ছক্কা একটি। মেহেদি প্রথম বাউন্ডারি মারেন ইনিংসের ২৯তম বলে এবং শামীম প্রথম ছক্কা মারেন ইনিংসের ১০৯ নম্বর বলে। ষষ্ঠ উইকেট জুটির রেকর্ডে বাংলাদেশ স্কোর করে ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৩৯ রান।