দীপ্তি শর্মার বলে নাদিন ডি ক্লার্কের ক্যাচ ধরেই দুই হাত দুই দিকে প্রসারিত করে ছুটতে শুরু করেন হারমানপ্রীত কাউর। তার পেছন পেছন ছুটছেন স্মৃতি মান্ধানা, জেমিমা রদ্রিগেজ, শেফালি ভার্মা, রিচা ঘোষ, রেনুকা, দীপ্তিরা। সবাই ছুটছেন জয়ের আনন্দে। সবাই ছুটছেন ওয়ানডে বিশ্বকাপে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার উচ্ছ্বাসে। ক্রিকেটারদের সঙ্গী হয়েছেন নাবি মুম্বাই ডি পাতিল স্টেডিয়ামের ৫০ হাজার দর্শক এবং দেড় শ কোটি ভারতবাসী। ২০০৫ ও ২০১৭ সালের পর তৃতীয় প্রচেষ্টায় ভারত বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হলো। ক্রিকেটবিশ্ব পেল নতুন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপে এখন নতুন চ্যাম্পিয়ন ভারত। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়ের তালিকায় নাম লিখল ভারত। শুরুতে শেফালি ভার্মার ব্যাটিং এবং শেষ দিকে দীপ্তি ভার্মার স্পিন জাদুতে ভারত ফাইনালে লরা উলভার্টের দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়েছে ৫২ রানে। ফাইনাল সেরা শেফালি ভার্মা ও টুর্নামেন্ট সেরা হয়েছেন দীপ্তি শর্মা।
শুরুতে বিশ্বকাপের মূল স্কোয়াডে ছিলেন না মারকুটে ব্যাটার শেফালি ভার্মা। এমনকি রিজার্ভ বেঞ্চেও ছিলেন না। তারপরও ভারতীয় ক্রিকেট টিম ম্যানেজমেন্ট সেমিফাইনালের আগে দলভুক্ত করে ২১ বছর বয়সি হার্ডহিটার শেফালিকে। ডান হাতি ওপেনার তখন সুরাটে একটি টি-২০ টুর্নামেন্ট খেলছিলেন হরিয়ানার পক্ষে। সেখান থেকে দলের সঙ্গে যোগ দেন বাংলাদেশ ম্যাচে আহত প্রাতিকা রাওয়ালের বদলে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম সেমিফাইনালে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেও ২ চারে ১০ রানের বেশি করতে পারেননি। ফাইনাল খেলে বাজিমাত করেন। মুম্বাই নাবির পাতিল স্টেডিয়ামে ৫০ হাজার দর্শকের সামনে শেফালি নিজেকে মেলে ধরেন চার-ছক্কার রঙের মেলায়। আফ্রিকান বোলারদের শাসন করে ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরির আশা জাগিয়েও ক্লান্তির কাছে হেরে যান। অবশ্য ৮৭ রানের ইনিংস খেলেন ৭৮ বলে ৭ চার ও ২ ছক্কায়। শেষদিকে দীপ্তি শর্মা ৫৮ বলে ৫৮ রান করেন। দুজনের উদ্বোধনী জুটির রেকর্ডে ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ২৯৮ রান করে ভারত। ২৯৯ রানের টার্গেট ছোড়া ম্যাচে শেফালি-মান্ধানা উদ্বোধনী জুটিতে ১০৪ রানের জুটি গড়েন ১৭.৪ ওভারে। অবশ্য নারী বিশ্বকাপের ফাইনালে উদ্বোধনী জুটিতে রেকর্ড স্কোর অস্ট্রেলিয়ার অ্যালিসা হিলি ও র্যাচেল হেইন্সের, ১৬০ রান।
মুম্বাইয়ে গতকাল সকাল থেকে বৃষ্টি হয়েছে মুষলধারায়। এজন্য খেলা শুরু হয় নির্ধারিত সময়ের ২ ঘণ্টা পর। ২ ঘণ্টা বাড়তি সময় যোগ হওয়ায় খেলা হয়েছে ৫০ ওভার। ফাইনালে টস হেরে ব্যাটিং করে ভারত। হঠাৎ সুযোগ পাওয়া শেফালি ও আসরে স্বাগতিকদের সবচেয়ে ধারাবাহিক ব্যাটার স্মৃতি মান্ধানা বিশ্বকাপে উদ্বোধনী জুটিতে রেকর্ড গড়েন। দুজনে ১৭.৪ ওভারে ১০৪ রানের জুটি গড়েন। যা বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারতের রেকর্ড। শেফালি হাফসেঞ্চুরি করেন। দুর্ভাগ্য মান্ধানার। মাত্র ৫ রানের জন্য আসরে চতুর্থ সেঞ্চুরি বঞ্চিত হন। ৪৫ রানে কাট শট খেলে উইকেটরক্ষক জাফতার গ্লাভসবন্দি হন। ৫৮ বলের ইনিংসটিতে ছিল ৮টি চার। ৯ ম্যাচে তার স্কোর ৪৩৪। সেমিফাইনালে ম্যাচ জেতানো ১২৭ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলা জেমিমা রদ্রিগেজ ৩৭ বলে ১ চারে ২৪ রান করেন। শেষদিকে ভারতকে লড়াকু স্কোর গড়ে দেন বাঁ-হাতি দীপ্তি শর্মা। রানআউট হওয়ার আগে ৫৮ বলে ৫৮ রান করেন ৩ চার ও ১ ছক্কায়। উইকেটরক্ষক ব্যাটার রিচা ঘোষ ১৪১.৬৬ স্ট্রাইকরেটে ৩৪ রানের ইনিংস খেলেন ২৪ বলে। অধিনায়ক হারমান ২০ রান করেন।
টার্গেট ২৯৯ রান। ওভারপ্রতি প্রায় ৬ রান। ‘ওয়ান ওম্যান টিম’ দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং পুরোপুরি নির্ভরশীল অধিনায়ক লরা উলভার্টের ওপর। আকাশসমান টার্গেটে সতীর্থ তাজমান ব্রিটসকে নিয়ে ৯.৩ ওভারে ৫১ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েন উলভার্ট। ব্যক্তিগত ২৩ রানে রানআউট হন ব্রিটস। ১৪ বলে সাজঘরে শূন্য রানে ফেরেন আনিকা বস। এরপর উলভার্ট-শুনে লুস তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৫২ রান যোগ করেন। স্কোয়াডের বাইরে থেকে আসা শেফালি ব্যাটিংয়ের পর বল হাতেও দুরন্ত ছিলেন। ২০.২ ওভারে লুস ব্যক্তিগত ২৫ রানে কট অ্যান্ড বোল্ড করেন। ৫ বল ফের আঘাত হানেন শেফালি। এবার আউট করেন ক্যাপকে। উলভার্ট একাই দলকে টানতে থাকেন। সেঞ্চুরিও করেন। সেমিফাইনালে ১৬৯ রানের পর ফাইনালে ১০১ রান করেন। দীপ্তি শর্মাকে ছক্কা মারতে গিয়ে আমানজিত কাউরের তৃতীয় প্রচেষ্টায় ক্যাচ হন। ১০১ রানের ইনিংসটি খেলেন ৯৮ বলে ১১ চার ও ১ ছক্কায়। ৯ ম্যাচে তার রান ২ সেঞ্চুরি ও ৩ হাফসেঞ্চুরিতে ৫৭১।