একটা সময় ছিল যখন মাঠে বড় দলের বিরুদ্ধে এক ম্যাচে দুইবার হারতো বাংলাদেশ! ম্যাচের শুরুতে একবার, শেষে আরেকবার! চূড়ান্ত ফলাফলে পরাজিত হওয়ার আগে 'শরীরী ভাষা'য় ম্যাচের শুরুতেই হেরে যেতেন টাইগাররা। কিন্তু এখন তা অতীত। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপ থেকেই আমূল পাল্টে গেছে বাংলাদেশ দল। বড় দলকে সমীহ করলেও 'বডি ল্যাঙ্গুয়েজে' ভয়ের কোনো আভা ফুটে ওঠে না। সর্বদা উৎফুল্ল থাকেন ক্রিকেটাররা। এটাই তো পেশাদারিত্বের বড় লক্ষণ!
ক্রিকেটে 'শরীরী ভাষা' ইতিবাচক থাকা খুবই জরুরি। এতে নিজেদের আত্মবিশ্বাস যেমন বেড়ে যায়, তেমনি প্রতিপক্ষের ক্রিকেটারদের মনেও আতঙ্ক ঢুকে যায়। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে টাইগারদের শরীরী ভাষা ছিল দেখার মতো। প্রত্যেক ক্রিকেটারকেই দেখে মনে হয়েছিল প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী। তারপর ম্যাচের ফলে তো তারা পরিষ্কার বুঝিয়েই দিলেন। এ সম্পর্কে কাল বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা বলেন, 'আমি অধিনায়ক হওয়ার পর সব সময় চেষ্টা করেছি দলের সবার শরীরী ভাষাটা ভালো রাখতে। এখন ভালো সময় যাচ্ছে আমাদের। কঠিন পরিস্থিতিতে আমাদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ কেমন থাকে সেটা দেখতে হবে। সবাই এটা নিয়ে কাজ করছি। আসলে বডি ল্যাঙ্গুয়েজ মাঠে কাজ করার বিষয় না। এটা নিজের সঙ্গে নিজের কাজ।'
১৬ বছর পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মধুর এক জয়। তিন ম্যাচের সিরিজে এখন ১-০তে এগিয়ে বাংলাদেশ। আজ টাইগাররা দ্বিতীয় ম্যাচে পাকিস্তানের মুখোমুখি হচ্ছে। জিতলেই ইতিহাস। প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সিরিজ জয়! মাশরাফিকেও হয়তো বিষয়টি রোমাঞ্চিত করছে! তবে টাইগার দলপতির ভাবনায় সিরিজ জয়ের পাশাপাশি হোয়াইটওয়াশের বিষয়টিও মাথায় আছে। মাশরাফি বলেন, 'আমাদের সামনে খুব ভালো একটি সুযোগ পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের। এই মুহূর্তে পরবর্তী ম্যাচটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের ফোকাস এখন পরের ম্যাচে। পরের ম্যাচটা জিতেলেই সিরিজ জেতা হয়ে যাবে। তারপর শেষ ম্যাচে আমরা নিশ্চয়ই হারার জন্য নামব না।'
প্রথম ও দ্বিতীয় ম্যাচের মধ্যে মাত্র একদিনের বিরতি। তাই গতকাল অনুশীলন করেনি বাংলাদেশ দল। টিম হোটেলেই সংবাদ সম্মেলন করেছেন মাশরাফি। প্রথম ম্যাচে ৭৯ রানের বড় জয় সম্পর্কে অধিনায়ক বলেন, 'যেভাবে আমরা কালকের (পরশু) ম্যাচ খেলেছি অলমোস্ট পারফেক্ট। কোথাও বড় কোনো ত্রুটি ছিল না। হয়তো বোলিংয়ে আরেকটু ভালো করতে পারতাম আমরা। সব মিলে আমরা পারফেক্ট ম্যাচ খেলেছি। খেলতে পারলে যে কোনো প্রতিপক্ষের বিপক্ষেই জেতা যায়। ভুল-ত্রুটি কম করলে অবশ্যই কালকের (আজ) ম্যাচে সুযোগ থাকবে।'
বিশ্বকাপে স্লো-ওভাররেটের কারণে এক ম্যাচে নিষেধাজ্ঞা ছিল মাশরাফির ওপর। তাই প্রথম ম্যাচে খেলতে পারেননি। এ নিয়ে নড়াইল এঙ্প্রেসের কোনো আক্ষেপ নেই। ড্রেসিং রুমে থেকে দলের দুর্দান্ত জয় দেখে খুশিই হয়েছেন তিনি। মাশরাফি বলেন, 'দলের অংশ হতে পারলে ভালো লাগে -এটা আমি সব সময়ই বলে এসেছি। মাঠে খেলতে পারিনি, কিন্তু টিম যেভাবে খেলেছে তাতে আমি খুশি। ১৬ বছর পর আমরা পাকিস্তানের বিপক্ষে জিতলাম, এই দলের অংশ হতে পেরে আমি আনন্দিত।'
বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি পরিণত। কন্ডিশন কিংবা ব্যাটিং অর্ডারে পরিবর্তনও দলের পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলতে পারে না। বিশ্বকাপে এনামুল হক বিজয়ের ইনজুরির পর তার জায়গা সুযোগ পাওয়া ইমরুল কায়েস সুবিধা করতে পারেননি। তাই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দলেই সুযোগ পাননি। তামিমের সঙ্গী বিবেচনা করে রনি তালুকদারকে নেওয়া হলেও প্রথম ম্যাচে তাকে নামানো হয়নি। ওপেন করেছেন নিয়মিত তিন নম্বরে নামা সৌম্য সরকার। এ কারণে পুরো ব্যাটিং অর্ডারেই পরিবর্তন এসেছিল। তারপরও রান করতে সমস্যা হয়নি। বরং দলীয় সর্বোচ্চ রানের নতুন রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। এ সম্পর্কে মাশরাফি বলেন, 'প্রতিপক্ষ ও মাঠের কন্ডিশন অনুযায়ী ভারসাম্য করেই খেলতে হবে। সৌম্য ওপেনিং করাতে সবাই এক ধাপ উপরে উঠেছে। মেন্টালি এভাবেই সবাইকে বলা আছে।'
বড় জয় পাওয়ায় অনেকের ধারণা এই পাকিস্তান অনেক দুর্বল দল। কিন্তু তা মনে করেন না মাশরাফি, 'ওদের যে বোলিং সাইডডা আছে, এটা বিশ্বকাপেও ছিল। ব্যাটিংয়ে মিসবাহ নাই। আহমেদ শেহজাদ নাই। আফ্রিদিও নাই। অনেকবারই আফ্রিদি আমাদের ?সঙ্গে গেইম চেঞ্জ করে দিয়েছে। কিন্তু তারা তো অবসর নিতোই। নতুনরা আসবে এটাই স্বাভাবিক। আমাদেরও তো অনেক নতুন খেলোয়াড় আছে। তাই আমি বলবো, ভারসাম্যের দিক থেকে ওরা তেমন পিছিয়ে নেই। নতুন একটা টিম, গুছিয়ে উঠতে হয়তো একটু সময় লাগছে। আমার মনে হয় না স্ট্রেন্থের দিক থেকে কোনো অংশে কম আছে।'