যে উইকেটে প্রথম ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে ৩২৯ রান করেছিল বাংলাদেশ, শেরে বাংলার সেই ৫নং উইকেটে কাল পাকিস্তান করল মাত্র ২৩৯ রান। সৌরভ ছড়ানো বোলিং করলেন বাংলাদেশের বোলাররা। স্পিন-পেসের যৌথ আক্রমণে দিশেহারা করে হয়ে গেল পাকিস্তান। বাংলাদেশের বোলিংয়ে এই বিপ্লব ঘটেছে হিথ স্ট্রিক (পেস বোলিং কোচ) ও রুয়ান কালপাগের (স্পিন বোলিং কোচ) ছোঁয়ায়। দুই কোচ বোলারদের অ্যাকশনে একটু করে পরিবর্তন এনে ক্ষুরধার করে দিয়েছেন। বাংলাদেশের বোলিং এখন বিশ্বের যেকোনো শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপের জন্য বিপজ্জনক।
এখন শুধু স্পিনে নয়, পেসেও দুর্বার টাইগাররা। বাংলাদেশের এই বোলিংয়ে নববিপ্লবের যাত্রা শুরু বিশ্বকাপে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সিরিজেও চলছে সেই ধারাবাহিকতা। উইকেট না পড়লে সাকিব-মাশরাফিরা ব্যাটসম্যানদের আটকে রাখেন রানে! প্রথম ম্যাচে তো বটেই, কাল দ্বিতীয় ম্যাচেও শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানদের চাপে রেখেছিলেন বাংলাদেশের বোলাররা। নিচে কালকের ম্যাচে পাকিস্তানের পতন ঘটা ছয় উইকেটের বিবরণ : 'গেম চেঞ্জ হিরো' রুবেল (প্রথম উইকেট) : বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে রুবেলের সেই স্পেল ক্রিকেটপ্রেমীদের ভোলার কথা নয়! ৪৯ তম ওভারে বোলিং এসেই দুই উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে জিতিয়ে দেন। তারপর থেকেই বাংলাদেশের এই পেসার 'গেম চেঞ্জ হিরো' হয়ে যান। কাল মিরপুরে তো খেলা পট পরিবর্তন করে দেন তিনি। শুরুটা ভালো ছিল পাকিস্তানের। ৭ ওভারে তারা কোনো উইকেট হারায়নি। কিন্তু অষ্টম ওভারে মাশরাফি রুবেলকে নিয়ে আসেন। আর প্রথম বলেই উইকেট। তবে এ উইকেটে বড় অবদান অবশ্য সরকারের। দ্বিতীয় স্লিপে তিনি শূন্যে উড়ে বলটি তালুবন্দি করেন পাকিস্তানি ওপেনার সরফরাজ আহমেদের ক্যাচ।
সানির চমক (দ্বিতীয় উইকেট) : মোহাম্মদ হাফিজকে উইকেটে থীতু হতেই দেননি আরাফাত সানি। নবম ওভারের শেষ বলটি কিছুটা জোর দিয়ে করেন। আর তাতেই সফল। সানির গুডলেন্থ ডেলিভারি হাফিজের পায়ে লেগে স্ট্যাম্পে আঘাত করে। শূন্য রানে বিদায় ফিরে যান হাফিজ। ৩৬ রানে প্রথম উইকেটের পর ৩৭ রানে দ্বিতীয় উইকেটের পতন পাকিস্তানের।
সাকিবের ক্যারিশমা (তৃতীয় উইকেট) : উইকেটে সেট হয়ে গিয়েছিলেন পাক অধিনায়ক আজহার আলী। ব্যক্তিগত ৩৬ রানে তাকে ফিরিয়ে দেন সাকিব আল হাসান। সুইপ করতে গিয়ে মুশফিকের হাতে ধরা পড়েন। সাকিবের ক্যারিশমায় হতভম্ব পাক অধিনায়ক।
'গোল্ডেন বয়' নাসির (চতুর্থ উইকেট) : বিশ্বকাপ থেকে আমূল বদলে গেছেন নাসিরও। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বোলিংয়ের দাপট তার। নাসির এখন 'গোল্ডেন বয়'। কাল পাকিস্তানের তারকা ব্যাটসম্যান ফাওয়াদ আলমকে যেভাবে সরাসরি বোল্ড করলেন তা দেখার মতো। নাসিরের ৮৫ কি.মি গতির বল কাট করতে গিয়ে মিস করেন ফাওয়াদ। বল আঘাত করে মিডল স্ট্যাম্পে। শূন্য রানে সাজঘরে ফেরেন ফাওয়াদ।
আবারও সাকিব (পঞ্চম উইকেট) : আগের ম্যাচে পাকিস্তান হারলেও স্বপি্নল অভিষেক হয়েছে মোহাম্মদ রিজওয়ানের। ৬৭ রানের দারুণ ইনিংস। কিন্তু কাল তিনি সাজঘরে ফিরলেন সাকিব আল হাসানের দ্বিতীয় শিকার হয়ে। সেটাও আবার 'অপয়া' ১৩-তে। তুলে মারতে গিয়ে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন।
মাশরাফির বুদ্ধিমত্তা (ষষ্ঠ উইকেট) : হারিস সোহেল ও সাদ নাসিম জুটি ক্রমশ বিপজ্জনক হয়ে উঠছিল। ষষ্ঠ উইকেটে তারা ৭৭ রানের জুটি গড়েন। প্রথম দিকে তারা ধীরগতিতে রান তুললেও পাওয়ার প্লেতে দ্রুতগতিতে রান উঠাতে থাকেন। এই জুটি নিয়ে যেন ভাবনাতেই পড়েছিলেন টাইগাররা। অধিনায়ক ম্যাশ বল হাতে নিয়ে প্রয়োগ করতে থাকেন তার বুদ্ধিমত্তা। ৩৯তম ওভারের শেষ বলে হারিস সোহেলকে বোকা বানিয়ে দেন মাশরাফি। ধীরগতির বল রক্ষণাত্দক ভঙ্গিতে খেলতে গিয়ে বোলার মাশরাফির হাতেই ক্যাচ তুলে দেন হারিস।