সাইবার নিরাপত্তায় সেনা
সাবেক সেনাদের মধ্যে শৃঙ্খলা, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং দলগতভাবে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। ফলে তারা সত্যিকার অর্থেই বিশেষভাবে উপযুক্ত। যেমন : ‘ব্লু টিম’; সিকিউরিটি অপারেশনস, ইনসিডেন্ট রেসপন্স এবং ফরেনসিকস ইত্যাদি ক্ষেত্রে এদের ভূমিকা দেখা যায়...
বিশ্বব্যাপী সাইবার আক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে, আর দক্ষ কর্মীর ঘাটতি মেটাতে অনেক সাবেক সেনা এখন সাইবার নিরাপত্তা খাতে যোগ দিচ্ছেন। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের তথ্যানুযায়ী, এ খাতে প্রায় চার মিলিয়ন পেশাজীবীর ঘাটতি রয়েছে। আসলে কোনো সংঘাতপূর্ণ এলাকায় টহল দেওয়া একজন সৈনিকের কাজ আর সাইবার সিকিউরিটি সেন্টারে বসে কাজ করার মধ্যে হয়তো আপাতদৃষ্টিতে কোনো মিল নেই। কিন্তু সাবেক সেনা সদস্যদের মতে, এই দুটি পেশার মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। সামরিক প্রশিক্ষণ তাদের মধ্যে যে তীক্ষè সতর্কতা ও সমস্যা সমাধানের দক্ষতা তৈরি করে, সাইবার নিরাপত্তা শিল্পে সে ধরনের গুণাবলির চাহিদা রয়েছে।
সামরিক দক্ষতা, সাইবার নিরাপত্তা
সাবেক সেনারা কেন সাইবার নিরাপত্তায় সফল হন তার মূল কারণ নিচে দেওয়া হলো :
স বিপদের পূর্বাভাস : সাবেক সৈনিকরা বিপদ আঁচ করার সহজাত ক্ষমতা রাখেন। যেমন- কোনো সৈনিকের কাছে রাস্তার পাশে একটি পরিত্যক্ত বস্তু অস্বাভাবিক মনে হতে পারে, ঠিক তেমনই একজন সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ একটি নেটওয়ার্কে সামান্য অস্বাভাবিক কার্যকলাপ দেখলেই সতর্ক হয়ে যান।
স চাপের মুখে শান্ত থাকা : সামরিক প্রশিক্ষণ সৈন্যদের চরম চাপের মধ্যেও শান্ত ও সংযত থাকতে শেখায়। সাইবার হামলার মতো দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে ঠান্ডা মাথায় দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার এই দক্ষতা অত্যন্ত মূল্যবান।
স দলগত কার্যক্রম : সাবেক সেনারা দলগত কাজের জন্য বিশেষভাবে পারদর্শী। সাইবার নিরাপত্তা দল, বিশেষ করে ‘ব্লু টিম’-এর সদস্যদের জন্য এটি অপরিহার্য, কারণ এখানে দলের হয়ে আক্রমণ প্রতিহত করতে হয়।
স ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা : সামরিক বাহিনীতে সব কাজই ঝুঁকি, প্রতিরক্ষা এবং একাধিক স্তরবিশিষ্ট সুরক্ষার ওপর ভিত্তি করে হয়। সাইবার নিরাপত্তা ক্ষেত্রেও একই মানসিকতা প্রয়োজন, যেখানে ক্রমাগত ঝুঁকি পর্যবেক্ষণ ও মোকাবিলার জন্য কৌশল গ্রহণ করা হয়।
স সমস্যা সমাধানের মানসিকতা : মো আহদুউদের মতো সাবেক কর্মকর্তারা বলেন, সামরিক প্রশিক্ষণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতিতে কীভাবে ভেঙে যাওয়া সরবরাহ ব্যবস্থা বা যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার মতো সমস্যাগুলো সমাধান করা যায়। এই মানসিকতা সাইবার দুনিয়ার জটিল সমস্যা সমাধানের জন্য আদর্শ।
সুযোগ ও পারস্পরিক সম্পর্ক
সাইবার নিরাপত্তা শিল্পে কর্মীর ঘাটতি রয়েছে, যা সাবেক সেনাদের জন্য নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। যুক্তরাজ্যে ‘টেকভেটস’র মতো কর্মসূচিগুলো প্রতি মাসে বহু সাবেক সৈনিককে সাইবার নিরাপত্তা পেশায় প্রবেশে সহায়তা করছে। অন্যদিকে, সাইবার জগতের পেশাজীবীরাও সাবেক সামরিক কর্মীদের স্বাগত জানান, কারণ তাদের মধ্যে শৃঙ্খলা, কর্মোদ্যম এবং এক ধরনের আন্তরিক বন্ধুত্ব লক্ষ্য করা যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে সামঞ্জস্যের প্রয়োজন হতে পারে, যেমন সুসংগঠিত সামরিক জীবনের তুলনায় বেসরকারি সংস্থার ভিন্ন কর্মপরিবেশ বা কাজের ধরনের ভিন্নতা। কিন্তু ক্রিস্টাল মরিনের মতো বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সাইবার সিকিউরিটি সেন্টারে কাজের পরিবেশ, অ্যাড্রেনালিন এবং খারাপ লোকদের বিরুদ্ধে লড়াই করার অনুভূতি অনেকটা সামরিক জীবনের মতোই। যদিও বেসরকারি ক্ষেত্রে সন্ত্রাসীদের জেলে পাঠানো সম্ভব না হলেও, তাদের অশুভ উদ্দেশ্য প্রতিহত করার সুযোগ এখানেও থাকে। নিয়োগকর্তারাও এখন বুঝতে পেরেছেন যে, একজন সাবেক সৈনিককে চাকরি দিলে তার কাছ থেকে অনেক বেশি ডেডিকেশন এবং দক্ষতা আশা করা যায়, যা এই পেশার জন্য অপরিহার্য।
তথ্যসূত্র : বিবিসি