মঙ্গলবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

শাপলা চত্বরে আন্ডারপাস

আলী রিয়াজ

শাপলা চত্বরে আন্ডারপাস

ব্যাংকপাড়া মতিঝিলের শাপলাচত্বরে আন্ডারপাস করবে দক্ষিন সিটি ছবি : জয়ীতা রায়

রাজধানীর ব্যাংকপাড়া খ্যাত মতিঝিলের বহুল পরিচিত ‘শাপলা চত্বর’-এ নিত্যদিনের যানজট লাঘবে আন্ডারপাস নির্মাণ করা হচ্ছে। শাপলা চত্বরের চারদিক ঘিরে বিশাল আয়তন নিয়ে এ আন্ডারপাস তৈরি হবে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) আন্ডারপাস তৈরির এ উদ্যোগ নিয়েছে। শুধু মানুষের চলাচলের জন্য নয় আন্ডারপাসে থাকবে মার্কেট। চত্বর ঘিরে ফুটপাথে যেসব হকার রয়েছে তাদেরও পুনর্বাসন করা হবে এই আন্ডারপাসের মধ্যে। ঢাকার মধ্যে এটি হবে সর্ববৃহত্ সুপরিকল্পিত আন্ডারপাস। ইতিমধ্যে ডিএসসিসির বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

প্রাথমিকভাবে সিটি করপোরেশন আন্ডারপাসের স্থান নির্ধারণ, সম্ভাব্যতা নিয়ে যাচাই-বাছাই করছে। ডিএসসিসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৯ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ জানিয়েছেন, এই এলাকায় যাতায়াতকারীদের দীর্ঘদিনের দাবি আমরা পূরণ করার উদ্যোগ নিয়েছি। ভবিষ্যতে এখানে মেট্রোরেলের স্টেশন হলে যানজট আরও বেড়ে যাবে। তাই আন্ডারপাস তৈরি করা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে বলে আমরা মনে করি। সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে খুব দ্রুত আমরা এই আন্ডারপাসটি করব। রাজধানীর গুলিস্তানের আন্ডারপাসের আদলে তৈরি করা হবে এই আন্ডারপাসটি। বর্তমানে শাপলা চত্বরের উত্তর দিকে একটি ফুটওভার ব্রিজ রয়েছে। বাকি দুই দিকে মানুষ চলাচলের জন্য কোনো বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় মূল রাস্তা দিয়ে বিশৃঙ্খলভাবে মানুষ পারাপার হয়। এতে ওই এলাকায় সারাক্ষণই যানজট লেগে থাকে। এ ছাড়া চত্বরের চারদিকে বাস, রিকশা দাঁড়িয়ে থাকায় অফিস চলাকালে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়। পুরো চত্বরজুড়ে ফুটপাথে হকারদের দোকান থাকায় রাস্তার মধ্য দিয়ে সাধারণ অফিসগামী লোকজনকে চলাচল করতে হয়। এ ছাড়া নির্মাণাধীন মেট্রোরেল প্রকল্পের স্টেশন হবে ওই এলাকাতেই। এতে ওই এলাকায় বর্তমান যানজট ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। এজন্য সিটি করপোরেশন এখনই বিষয়টি সমাধানের চিন্তা-ভাবনা করছে। এই চিন্তা থেকেই দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নিজস্ব অর্থায়নে এই আন্ডারপাস তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে।

সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে শাপলা চত্বরের উত্তর দিকে যে ফুটওভার ব্রিজটি রয়েছে সেটি সরিয়ে ফেলা হবে। এরপর শাপলা চত্বরের তিন পাশ ঘিরে আন্ডারপাস তৈরি করা হবে। আন্ডারপাসটি শুধু মানুষ চলাচলের জন্য নয়। এখানে থাকবে বড় আন্ডারগ্রাউন্ড মার্কেট। মার্কেটে পণ্যভিত্তিক দোকান বরাদ্দ দেওয়া হবে। পুরো আন্ডারপাসে কয়েকশ দোকান তৈরি করে তার মতিঝিল এলাকার হকারদের মধ্যে বরাদ্দ দেওয়া হবে। ফুটপাথে কোনো হকার থাকবে না।

বর্তমানে সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে ফুটপাথে হকারদের দোকানগুলোর জন্য হাঁটতে পারে না সাধারণ মানুষ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে রাস্তার ওপরেই দোকান বসিয়ে সারা দিনে বিকিকিনি চলে। সড়কের পাশ ঘিরে রিকশা দাঁড়িয়ে থাকায় মানুষ দাঁড়ানোর আর স্থান থাকে না। অপরিকল্পিত যানবাহন ব্যবস্থাপনার কারণে বাণিজ্যিক এলাকার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত শাপলা চত্বরে বর্তমানে জনদুর্ভোগ মারাত্মক পর্যায়ে রয়েছে। শাপলা চত্বরের দুই পাশে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংক অবস্থিত।

এই দুটি প্রতিষ্ঠানে যেতে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষকে ঝুঁকি নিয়েই রাস্তা পার হতে হয়। চত্বরের পশ্চিম দিকেও একই চিত্র। সেখানেও রাস্তার ওপর দিয়েই দুই পাশে পার হতে হয় সবাইকে। দীর্ঘদিন বিভিন্ন মহল থেকে এখানে ফুট ওভারব্রিজ করার দাবি থাকলেও তা করা হয়নি। ফলে মতিঝিল শাপলা চত্বরে প্রায়ই দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটছে।

রাজধানীর গুলিস্তান, কাওরানবাজার ও গাবতলীর পর এটি হবে চতুর্থ আন্ডারপাস। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, শাপলা চত্বর একটি ব্যস্ততম এলাকা।

ওই এলাকায় যানজট নিরসন ও মানুষের রাস্তা পার হতে ভোগান্তি কমানোর উদ্যোগ আমরা নিয়েছি। সেজন্য আন্ডারপাস করার চিন্তা-ভাবনা চলছে। এটা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। প্রাথমিকভাবে আমরা স্থান নির্বাচন, সম্ভাব্যতা যাচাই করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব। শাপলা চত্বরে ঢাকার সবচেয়ে বড় ও আধুনিক আন্ডারপাস করব আমরা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর