মঙ্গলবার, ৭ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

বছর শেষে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের সুফল

রফিকুল ইসলাম রনি

বছর শেষে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের সুফল

দীর্ঘদিন চলা মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজের ফলে নগরবাসীকে পোহাতে হচ্ছে নানা ঝক্কি-ঝামেলা। তবে, এ বছরের শেষ নাগাদ মিলবে সুফল। ছবি : জয়ীতা রায়

মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার নির্মাণের শুরু থেকেই বাংলামোটর-মগবাজার-মৌচাক-রামপুরা-রাজারবাগ-শান্তিনগরের প্রধান সড়কের যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। রাজধানীবাসীর ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দেখা দিয়েছে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের নিচে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি। তিন বছর ধরে চলা এ ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার সময়ও পার হয়েছে বেশ কয়েকবার। তারপরও শেষ হয়নি কাজ, শেষ হয়নি জনভোগান্তি। সম্প্রতি সেই ভোগান্তির মাত্রা আরও বেড়ে গেছে। দীর্ঘদিন চলা ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজের কারণে এমনিতেই ভয়াবহ দুর্ভোগে পড়েছেন নগরবাসী, তার ওপর নতুন করে রাস্তা খোঁড়ার কারণে বিপর্যয় নেমে এসেছে। এ সড়ক ব্যবহারকারী লাখ লাখ নগরবাসীকে দীর্ঘ যানজটে পড়তে হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে বিপুল কর্মঘণ্টা। সরেজমিন রাজারবাগ, মালিবাগ মোড়, শান্তিনগর, মৌচাক, মালিবাগ রেলগেট, এফডিসি মোড় ঘুরে দেখা গেছে, একদিকে ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ অন্যদিকে সিটি করপোরেশনের ড্রেন নির্মাণের কাজ চলছে। রাস্তা দিয়ে চলাচলের উপায় নেই। কোথাও চলছে ফ্লাইওভারের স্লাবের কাজ আবার কোথাও আই গ্রাডার, বিম, ঢালাইয়ের কাজ। নির্মাণ শ্রমিকরা জানিয়েছেন, যেভাবে কাজ চলছে আরও কয়েক মাস সময় লাগতে পারে। ওই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করা বাসচালকরা জানান, ফ্লাইওভারের কাজ চলাতে সড়কের নিচে থাকা বিভিন্ন ড্রেন ও স্যুয়ারেজের লাইনগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে বৃষ্টির পানি জমে থাকে ও স্যুয়ারেজের ময়লা পানি সড়কের ওপর ভেসে ওঠে। কাদা পানিতে চলতে গিয়ে কিছুক্ষণ পর পর রিকশা, মোটরসাইকেল, অটোরিকশার মতো ছোট গাড়ি নষ্ট হয়ে আটকে পড়ছে।  রাজধানীর যানজট নিরসনে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার প্রকল্পটি ২০১১ সালের ৮ মার্চ একনেকে অনুমোদন পায়। চারলেনের ৮ দশমিক ২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ ২০১৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চুক্তি অনুযায়ী ৭৭৩ কোটি টাকায় দুই বছরে নির্মাণ কাজ শেষের কথা থাকলেও প্রকল্পের নকশা সংশোধন এবং সময়সীমা ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। কাজ শেষ না হওয়ায় আবার জুন ২০১৭ পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছিল। বর্তমানে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে ১ হাজার ২১৯ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের দুই অংশ খুলে দেওয়া হয়েছে আগেই। রমনা থেকে তেজগাঁও সাতরাস্তা পর্যন্ত দুই কিলোমিটার অংশ ও ইস্কাটন থেকে ওয়্যারলেস (মৌচাক ক্রসিং) পর্যন্ত ফ্লাইওভার এক কিলোমিটার অংশে যানবাহন চলছে।

মিনারুল নামের চালক বলেন, রাস্তায় পানি জমে থাকে। এর মধ্য দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলতে হয়। অনেক সময় গাড়িও নষ্ট হয়ে যায়। এখন নতুন করে ডিপিডিসির খোঁড়াখুঁড়ির কারণে ভোগান্তির মাত্রা বেড়ে গেছে।

এদিকে ফ্লাইওভারের নির্মাণ সামগ্রী সড়ক ও পার্শ্ববর্তী ফুটপাথে রাখার কারণে সরু হয়ে গেছে রাস্তা। রড, বিম, ঢালাই বোর্ড, লোহার এঙ্গেল, খুঁটি রাখার কারণে রাস্তার একপাশ থেকে আরেক পাশে পথচারীরা চলতে পারে না। সরু রাস্তার কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লেগে থাকে যানজট। খোঁড়াখুঁড়ির কারণে কিছু রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। নির্মাণ কাজের জন্য রাস্তায় সৃষ্টি হয়েছে ছোট বড় অনেক গর্ত। গর্তগুলোতে সব সময় পানি জমে থাকে। নোংরা কাদা থাকায় পায়ে হাঁটা পথচারী, এমনকি রিকশা-গাড়ি চলাচলেও সমস্যা হচ্ছে। ঘটছে অহরহ দুর্ঘটনা। গর্তে পানি জমে থাকায় গভীরতা বোঝা যায় না। আবার কিছু কিছু জায়গায় এলোপাতাড়ি রড থাকায় রিকশায় চলাচলকারী অনেক মানুষ উল্টে হাত পা ভেঙেছে। মালিবাগ-মৌচাকের নাম শুনলে মানুষ এখন ভয় পায়। ফরচুন মার্কেটের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, মানুষের জন্য আতঙ্কের এক নাম হচ্ছে মালিবাগ-মৌচাক। ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা গ্রুপের এক কর্মকর্তা বলেন, কাজ শেষ হতে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। তবে আমরা অক্টোবরে শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছি। নির্মাণ কাজের জন্য বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। সিটি করপোরেশন ও ডিপিডিসির কাজ চলছে। যার কারণে সমস্যা একটু বেশি হচ্ছে। এখন উপরের কাজ চলছে। উপরের কাজ শেষ হলেই নিচের নির্মাণ সামগ্রী আর থাকবে না।

সর্বশেষ খবর