মঙ্গলবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

কেনাকাটার ব্যস্ততা মার্কেট শপিং মলে

রাশেদ হোসাইন

কেনাকাটার ব্যস্ততা মার্কেট শপিং মলে

ছবি : জয়ীতা রায়

পবিত্র ঈদুল ফিতরের আর কয়েকদিন বাকি। ঈদ উপলক্ষে ব্যস্ততা বাড়ছে রাজধানীর বিভিন্ন শপিং মল ও মার্কেটে। এরই মধ্যে জমে উঠেছে ঈদ কেনাকাটায় রাজধানীবাসীর আস্থার জায়গা বসুন্ধরা সিটি শপিং মল। সকাল থেকেই তিল ধারণের ঠাঁই হচ্ছে না দেশের এ মেগা শপিং মলে। হরেক পণ্যে ক্রেতারা ঈদবাজারে মন মজাচ্ছেন বসুন্ধরায় সিটি শপিং মলে। ঈদ উপলক্ষে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এখন কেনাকাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। রাজধানীর ফুটপাত থেকে মার্কেট-শপিং মল কোথাও পা রাখার জায়গা নেই। কেউ জুতা কিনতে ছুটছেন এলিফ্যান্ট রোডে, কেউ থ্রি পিস কিনতে যাচ্ছেন চাঁদনীচকে। পাঞ্জাবি কিনতে ছুটছেন পুরান ঢাকার শরীফ মার্কেটে। আর জিন্সের প্যান্ট কিনতে যাচ্ছেন কেরানীগঞ্জের কালীগঞ্জ। ক্রেতারা শহরের এপাশ থেকে ওপাশ ঈদের পোশাক কিনতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। পবিত্র রমজান মাস শুরুর পর থেকেই রাজধানীর শপিং মলগুলোতে ক্রেতাদের সরব উপস্থিতি চোখে পড়ছে। রোজা শুরুর পর থেকে জ্যামিতিক হারে এ ভিড় বৃদ্ধি পেয়েছে। বিপণিগুলোতে বিকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত দেখা গেছে ক্রেতাদের আনাগোনা।

সরেজমিন দেখা যায়, ঈদ শপিংয়ে আসা ক্রেতাদের ভিড়ে বসুন্ধরা শপিং মলের গেটে লম্বা লাইনের সৃষ্টি হয়েছে। চলন্ত সিঁড়িগুলোতে উঠতে গেলেও মানুষের ঠেলাঠেলি। আটতলা মার্কেটের প্রতিটি ফ্লোরে লোকে লোকারণ্য। সবাই ছুটছেন সেরাটা লুফে নেওয়ার প্রতিযোগিতায়। তবে সবচেয়ে বেশি ভিড় নারীদের পণ্যের দোকানগুলোতে। এ ছাড়া রাজধানীর মৌচাক মার্কেট, এলিফ্যান্ট রোড, গাউছিয়া, চাঁদনীচক, নিউমার্কেট, পলওয়েল মার্কেট, কর্ণফুলী মার্কেটসহ রাজধানীর বিভিন্ন শপিং মলে ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে। এ ছাড়া দোকানগুলোতে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন রং ও ডিজাইনের পোশাকের পসরা সাজিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। পছন্দ ও দরদামে মিলে গেলেই কিনে নিচ্ছেন ক্রেতারা।

বিক্রেতারা জানিয়েছেন, ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে ক্রেতাদের ভিড় ততই বাড়ছে। তবে দেশে নিত্যপণ্যসহ সবকিছুর দাম বৃদ্ধির ফলে ক্রেতারা ঈদবাজারে এসে একটু চিন্তাভাবনা করেই কেনাকাটা করছেন। ঈদের আগ মুহূর্তে কেনাবেচা আরও বাড়বে বলে আশা করছেন বিক্রেতারা। মেয়েদের বিভিন্ন রকমের পোশাক এবার ঈদ উপলক্ষে ক্রেতাদের চাহিদা বেড়েছে। এবারের ঈদ উপলক্ষে নায়রা ড্রেস, সারারা, গারারা, গ্রাউন সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

বসুন্ধরা সিটিতে লা রিভের সেলস অ্যাসোসিয়েট হাসিবুল ইসলাম অনিক বলেন, আমাদের এবার প্রিমিয়াম কালেকশন হলো নার্গিসাস। এটা আমাদের এখানে প্রিমিয়াম ওয়ান পিস ও থ্রি পিস হয়ে থাকে। এতে ন্যাচারাল ডিজাইন ও কারচুপির কাজ রয়েছে। এ ছাড়া অন্য পোশাক হলো টিউনিক কামিজ, নায়রা কার্ড ওয়ান পিস। আমাদের নার্গিসাস ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা বাজেটের মধ্যে হয়ে থাকে। টিউনিক ২২০০ থেকে ৬ হাজার পর্যন্ত হয়ে থাকে। টপস ১৬০০ থেকে ৩ হাজার পর্যন্ত বাজেটের মধ্যে। এ ছাড়া প্লাজু, ডেনিমের প্যান্ট রয়েছে।

বসুন্ধরা সিটি শপিং মলের সোলমেটের বিক্রেতা ইফাত মাহমুদ বলেন, এবার আমাদের পোশাক বিক্রির ৮০ শতাংশ বিক্রি হয়েছে নায়রা ড্রেস। এ ড্রেস ৭ হাজার থেকে ১৪ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। আমাদের এখানে এখন স্টক আউট হয়ে গেছে। এই ড্রেসের এবার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এরপর গ্রাউন, সারারা, গারারা বিক্রি হয়েছে। সারারা ৭ হাজার থেকে দাম শুরু হয়েছে। গারারা ৭ হাজার, ১০ হাজার ও ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। এ ছাড়া লেহেঙ্গা ১০ হাজার থেকে শুরু করে ৩০ হাজার টাকার পর্যন্ত রয়েছে। গ্রাউন ৮ হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগুনে আংশিক পুড়ে যাওয়া নিউমার্কেটসহ ঢাকার অন্যান্য মার্কেটে মানুষের ঢল নেমেছে। এমনকি ঈদকে কেন্দ্র করে ঈদবাজারে প্রতিদিন বাহারি ডিজাইনের পোশাক আসছে। ইতোমধ্যেই বাজারে এসেছে দেশি-বিদেশি নতুন নতুন পোশাক। বিক্রেতারা বলেন, সন্ধ্যার পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ক্রেতাদের ভিড় থাকে। এ বছর পাঞ্জাবি ভালোই বিক্রি হচ্ছে। আশা করছি, ঈদ ঘনিয়ে এলে বিক্রি আরও বাড়বে। কেরানীগঞ্জের গার্মেন্ট ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুসলিম ঢালী বলেন, এবার ব্যবসা ভালো হয়েছে। ব্যবসায়ীরা করোনার ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন। এরপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বড় বিপর্যয় হয়েছে। তবে বিদেশি পোশাক কম আসায় দেশীয় পোশাকের চাহিদা বেড়েছে।

আমাদের দেশীয় তৈরি পোশাকের ৮০ শতাংশ চাহিদা মেটাচ্ছে কেরানীগঞ্জের এই গার্মেন্ট পল্লী। এবার আমাদের প্রোডাকশনও ভালো হয়েছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের কারণে এবার ভালো উৎপাদন হয়েছে। এ ছাড়া পদ্মা সেতুর কারণে ব্যবসার পরিধি বৃদ্ধি পেয়েছে। যাতায়াত সুবিধার কারণে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ক্রেতারা এখানে এসে পণ্য ক্রয় করতে পারছে। তাই এ বছর আমাদের রেকর্ড পরিমাণ বিক্রি হয়েছে। এবার পাঞ্জাবির চাহিদা তুলনামূলক বেড়েছে। এর মধ্যে কাতানের কাতান, মালার কাতান, সুপার, এবং এনডি কাপড়ের পাঞ্জাবির অনেক চাহিদা বেড়েছে। শার্টের মধ্যে ক্যাজুয়াল শার্ট এবার বেশি চলছে। এ ছাড়া হাফ হাতার শার্টের প্রতি ক্রেতাদের মনোযোগ বেড়েছে। গরমের কারণে এবার সুতি কাপড়কে ক্রেতারা বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে।

সর্বশেষ খবর