চলমান আন্দোলন ও সহিংসতায় রংপুরের বিনোদন কেন্দ্রগুলো খাঁ খাঁ করছে। বিনোদন কেন্দ্র্র রংপুর নগরীর তাজহাট জমিদারবাড়ি, বিনোদন উদ্যোন, চিড়িয়াখানা, ভিন্ন জগত, বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্র জনশূন্য হয়ে পড়েছে। দর্শনার্থীদের অভাবে জমিদারবাড়িটি খাঁ খাঁ করছে। রংপুর তাজহাট জমিদারবাড়ি ১৯৯৫ সালে এ ভবনটিকে প্রত্নতত্ত্ব সম্পদ হিসেবে গণ্য করা হয়। ২০০২ সালে এটিকে জাদুঘরে রূপান্তরিত করা হয়। এর নাম রাখা হয় রংপুর জাদুঘর। বর্তমানে এটি ১৬ দশমিক ৬ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত। এই জাদুঘরে তিনশয়ের বেশি মূল্যবান নিদর্শন রয়েছে। প্রতিদিন এখানে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা এই বাড়ির সৌন্দর্য দর্শনে আসেন।
এই জমিদারবাড়ির ইতিহাস সম্পর্কে যে টুকু জানা গেছে তা হলো, তাজহাট জমিদারবাড়ি প্রতিষ্ঠা করেন মান্নালাল রায়। তিনি ভারতের পাঞ্জাব থেকে এসেছিলেন। পেশায় ছিলেন একজন স্বর্ণকার। স্বর্ণখচিত টুপি বা তাজ নির্মাণ করায় এই অঞ্চলের নাম তাজহাট হয়েছে। জাতিতে ক্ষত্রিয় হলেও তার শিখ ধর্মের প্রতি দুর্বলতা ছিল। মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সঙ্গে শিখদের সংঘাতের সময় স্বর্ণ ব্যবসায়ী মান্নালাল পাঞ্জাব থেকে পালিয়ে রংপুরের মাহিগঞ্জে বসতি স্থাপন করেন। মাহিগঞ্জে তিনি হীরা মনি মুক্তা খচিত টুপি (তাজ) বিক্রি করতেন। আর এভাবেই প্রতিষ্ঠিত হয় তার জমিদারি। রংপুর শহর থেকে পুব দিকে ৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থান এই জমিদারবাড়ির। ১৮৯৭ সালে ভূমিকম্পে ভবনটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে পরে বাড়িটি নতুন করে তৈরি করা হয়। ৫৬ একর এলাকাজুড়ে এই কমপ্লেক্সটি। পুবমুখী দোতলা এই জমিদারবাড়িটির সামনের দিকে প্রায় ৭৭ মিটার দৈর্ঘ্য। বাড়ির সামনের দিকে রয়েছে বড় একটি দরদালান। এই দরদালানে ওঠার জন্য শ্বেতপাথরে আবৃত রয়েছে দৃষ্টিনন্দন সিঁড়ি। বাড়ির ছাদের মূল অংশে আট কোণা পিলারের ওপর অবস্থিত রেঁনেসা গম্বুজ। এই গম্বুজের বৈশিষ্ট্য হলো এটি আংশিকভাবে সরু পিলারের ওপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। প্রাসাদের গৃহমুখের দুই প্রান্তে অষ্টাভুজাকৃতির বাইরে বেরিয়ের যাওয়ার অংশ রয়েছে। প্রাসাদটির গাড়ি বারান্দা প্রায় ১০ মিটার দীর্ঘ। গাড়ি বারান্দার ওপরে যে ঝুল বারান্দা রয়েছে তার ছাদ চারটি পিলারের ওপর অবস্থিত। এই প্রাসাদের দুই প্রান্তের বারান্দাতেও ত্রিকোণাকৃতির ছাদ রয়েছে। প্রাসাদের ভূমি নকশা অনেকটা ইংরেজি ট-এর মতন। প্রাসাদে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে চোখ পড়ে ১৪/১৯ মিটার বিশাল হলঘর। হলঘরের দুই দিকে একটি করে ঘর রয়েছে। প্রাসাদটির ভিতর তিন মিটার প্রশস্ত একটি টানা বারান্দা রয়েছে। প্রধান ব্লকের উত্তর দিকে দোতলায় বিশাল একটি কাঠের সিঁড়ি রয়েছে। পুরো ভবনে মোট ২২টি ঘর রয়েছে। গোপাল লাল রায় জমিদারি দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি বর্তমান ভবনটির নির্মাণ কাজ করেন। ১৯১৭ সালে ভবনটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। ইতালি থেকে আমদানিকৃত শ্বেতপাথর দিয়ে তৈরি করা হয় বাড়ির সম্মুখভাগের সিঁড়ি। ভবনের সামনে মার্বেল পাথরের সুদৃশ্য একটি ফোয়ারা আজো বিদ্যমান।