গ্রীষ্ম-বর্ষা-শীত এই তিনের মিশ্রণ রয়েছে শরতে। আসমানি রঙে সাদা মেঘের যাতায়াত, কাশবনে হাওয়ার দুলুনি, শিশির-ধোয়া শিউলির পড়ে থাকা মানেই... শরৎ এসেছে। এর প্রভাব মনে যেমন পড়ে তেমনি পড়ে পোশাকেও। তবে সবকিছু হওয়া চাই শান্ত আর সাবলীল।
রোদের মাঝেও বৃষ্টিধারায় শরতের সাদা মেঘ। কবি-সাহিত্যিকরা নানা গল্প, কবিতা, উপন্যাসে শরতের যে সৌন্দর্য তুলে ধরেছেন, সেই শরতের প্রকৃতিকে অনুভবের সুযোগ এই শহরে ছিল না। বেশ নিভৃতেই শরৎ আসত শহরে। তবে খুব বেশি দিন আগের কথা নয়, এই বছর ছয় কি সাত। মানুষের মধ্যে বেড়ে যায় ভ্রমণের শখ। দল বেঁধে সবাই ঘুরে বেড়ায় শহরের আশপাশে থাকা কাশবনে, এই শরৎকালে। এই কাশবনে ঘুরে বেড়ানোর পোশাকে যদি থাকে শরতের আবহ, তাহলে কেমন হয়- এই ভাবনাকে কাজে লাগালেন ফ্যাশন ডিজাইনাররা। স্বল্প পরিসরে শরতের পোশাকের কাজ শুরু হলেও ক্রেতারা তা গ্রহণ করলেন সাদরেই। সেই থেকে শরৎ হয়ে উঠল শহুরে প্রাণোচ্ছল উৎসব।
শরতে পোশাকের কাপড়, রং এবং ডিজাইন নির্বাচন করা হয় বিশেষভাবে। তবে সেক্ষেত্রে মানা হয়, শরৎ আবহাওয়ার আবহ। কেননা, শরতের আছে নিজস্ব বর্ণ আর গন্ধ। শরৎ মূলত শুভ্রতার ছবি। পবিত্রতার প্রতীক। বর্ষাকালে লাগাতার বৃষ্টি প্রকৃতিকে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করে দেয়। এরপর আসে শরৎ, তাই শরৎকে যেন একটু বেশি শুভ্র পবিত্র মনে হয়। তাই তো ফ্যাশন হাউসগুলো নীল-সাদার সমন্বয়ে বানিয়েছে রকমফের পোশাক। শুধু শাড়ি বা কামিজে নয়, শরতের অন্যান্য পোশাকেও প্রাধান্য পায় শুভ্র সাদা আর আকাশের নীলাভ রং। বেশির ভাগ পোশাকের নকশায় ঠাঁই পায় ফুলেল ও জ্যামিতিক মোটিভ। ব্লক, স্ক্রিন প্রিন্ট, হালকা অ্যামব্রয়ডারি থাকতে পারে পোশাকগুলোয়।
শরতের হাওয়ায় প্রকৃতি যেন শিল্পীর তুলির আঁচড়ে আঁকা জীবন্ত এক ক্যানভাস। প্রকৃতির এই ক্যানভাসের অংশ হতে পোশাকের রংটি হওয়া চাই মানানসই। কারণ, শরৎকালে সবকিছুতেই একটা হালকা মিষ্টি ব্যাপার থাকে। সাদা কাশফুলে থাকে হালকা বাদামির ছোঁয়া, সেটাও তাঁর কাছে শরতের রং বলেই মনে হয়। সকালের মিঠে সোনালি রোদজুড়ে থাকে শরতের আমেজ, আবার শিউলিবোঁটার যে কমলা রং, সেটা তো শরতেরই। তাই এভাবেই নতুন নতুন শরতের রং খুঁজে বেড়াচ্ছেন ডিজাইনাররা। তাই তো গাঢ় নীল, হালকা নীল, আসমানি নীল, ময়ূরকণ্ঠী নীল, রয়েল ব্লু, নেভি ব্লু আরও কত শত রং ফুটে উঠেছে পোশাকের জমিনে। সঙ্গে সাদা কিংবা অফ হোয়াইটের মিশেল এবং নকশার বৈচিত্র্য; এ নিয়ে অনেক ফ্যাশন হাউস সাজিয়েছে শরৎ সংগ্রহ। এর বাইরেও পোশাকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ফিরোজা, ছাই, সোনালি, খয়েরি, সবুজ, হলুদ, গোলাপি রঙের নান্দনিক ডিজাইন। সুতি ছাড়াও সিল্ক, অ্যান্ডি সিল্কসহ নানা ফেব্রিকে নীল-সাদা ধরা দিয়েছে নানাভাবে।
বাংলাদেশে এখন হালকা সোনালি, হালকা কমলা, হালকা বাদামি, হালকা সবুজের মতো রংগুলো অনেকেই তুলে ধরছেন শরতের পোশাকে। শরৎ সংগ্রহ ফ্যাশন হাউস রঙ বাংলাদেশের স্বত্বাধিকারী ও প্রধান ডিজাইনার সৌমিক দাশ বলেন, প্রকৃতির হালকা মেজাজের সহগামী হয়ে মানুষের মনেও লেগেছে হালকা আমেজ। এ আমেজ ধরে রাখতে আমার মনে হয় হালকা নীল রং অনেক বেশি কার্যকর। আমরা তাই শরতের আয়োজন করেছি হালকা মেজাজের সাদা, নীল, বেগুনি ও সবুজ রঙের সমন্বয়ে। আর পোশাকের নকশাকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে নানা ভ্যালু অ্যাডেড মিডিয়ার ব্যবহারে। এর মধ্যে রয়েছে স্ক্রিন প্রিন্ট, ব্লক প্রিন্ট, টাইডাই, মেশিন অ্যামব্রয়ডারি, হাতের কাজ ইত্যাদি।
শরতে সিল্ক কিংবা জর্জেট পরার উপযুক্ত সময়। আরামদায়ক হবে লিনেন, ধুপিয়ান, ভয়েল, মসলিন, তাঁতের কাপড়ও। জর্জেট, জয়সিল্ক, সিল্ক কাপড়ের লং কামিজ, গাউন ধাঁচের পোশাক এখনকার উৎসবের জন্য ফ্যাশনেবল এবং আরামদায়ক। থ্রিপিস, কামিজ, কুর্তি, স্কার্ট টপস, ফ্রক ইত্যাদি বেছে নিতে পারেন ক্যাজুয়াল পোশাক হিসেবে। আর শাড়ি পরতে চাইলে এখন অনায়াসে পরতে পারেন তসর, অ্যান্ডি, তাঁত কিংবা কটন শাড়ি। রাতের দাওয়াতে সিল্ক, কৃত্রিম মসলিন বা কাতান শাড়ি এ আবহাওয়ায় দারুণ লাগবে।
তবে শরৎকাল মানেই যে, মেঘ-বায়ুর মেজাজ খোশ থাকবে এমনটাও নয়, মাঝে মাঝে মেঘের তর্জন-গর্জন আর প্রখর রোদের দাপটও থাকবে। পরিস্থিতি বিবেচনায় সর্বাবস্থার সাজ-পোশাকে নিজেকে মানিয়ে নিতে হবে। তাই যে কোনো অবস্থায় নিজেকে মানিয়ে নিতে হালকা সাজের বিকল্প নেই। আর সাজের উপকরণটি হতে হবে অবশ্যই নিরোধক। এ সময় ত্বকের ধরন বুঝে ব্যবহার করতে হবে প্রসাধন।
লেখা : ফেরদৌস আরা