রবিবার, ৩১ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনার পর প্রাণ ফিরছে যেসব শহরে

তানভীর আহমেদ

করোনার পর প্রাণ ফিরছে যেসব শহরে

করোনায় লকডাউন শিথিল করেছে বেশির ভাগ দেশ। বড় বড় শহরগুলোতে চলছে গাড়ি, রাস্তায় বেরিয়েছে মানুষ। অফিস, রেস্টুরেন্ট, দোকানপাট খুলছে স্বাস্থ্য সতর্কতা মেনে। কর্মচাঞ্চল্য ফিরে আসতে শুরু করেছে। দেশে দেশে খুলে দেওয়া হয়েছে পার্ক, পর্যটন। বিমানবন্দর, সীমান্তে বিধিনিষেধও তুলে নিতে শুরু করেছে অনেক দেশ। জুনের মাঝামাঝিতে বেশির ভাগ দেশই পর্যায়ক্রমে লকডাউন তুলে নিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরতে যাচ্ছে। তবে মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার আদেশ থাকবে। কর্মচাঞ্চল্য ফিরে আসায় প্রাণ ফিরতে শুরু করেছে করোনার সঙ্গে লড়াইয়ে থাকা বড় দেশগুলোর প্রধান শহরগুলোতে-

 

 

লন্ডনে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের আমেজ

করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে তিন মাসেরও বেশি সময় পর ফিরছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ। ১৭ জুন শুরু হবে স্থগিত হওয়া মৌসুমের বাকি অংশ। দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে চলতি মৌসুমে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের বাকি ৯২ ম্যাচ। প্রথম দিন মাঠে নামবে ম্যানচেস্টার সিটি-আর্সেনাল ও অ্যাস্টন ভিলা-শেফিল্ড ইউনাইটেড। করোনাভাইরাস সংক্রমণ কমে আসায় ইংল্যান্ডে এখন ফুটবলপ্রেমীরা নড়েচড়ে বসেছে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের পক্ষ থেকে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, করোনাসংক্রান্ত সব ধরনের বিধিনিষেধ মেনেই খেলা হবে। এ মৌসুমের বাকি থাকা ৯২টি ম্যাচ ‘ক্লোজ-ডোর’ বিধি অর্থাৎ, দর্শকহীন স্টেডিয়ামে খেলা হবে। এসব খেলা বিশ্বের কোটি কোটি দর্শক টিভিতেই উপভোগ করতে পারবেন। ইংলিশ ক্লাবগুলো এখনো পুরোদমে অনুশীলন শুরু করতে পারেনি। শিগগিরই পুরো দল একসঙ্গে অনুশীলনে ফেরার আশা করছে তারা। এরই মধ্যে ফুটবলারসহ ১২ জনের করোনা পজিটিভ হওয়ার খবর এসেছে। তবু অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছে বড় দলগুলো।

তিন মাস বন্ধ থাকার পর খেলা শুরু করার ঘোষণা দিয়ে যুক্তরাজ্য জানান দিল তারা করোনাভাইরাসের সঙ্গে লড়াইয়ে অনেকটাই এগিয়েছে। লকডাউন শিথিল করা হয়েছে দেশটিতে। লন্ডনে লকডাউন শিথিল করার পর মানুষজন বাইরে বেরোতে শুরু করেছে। যুক্তরাজ্যে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় হ্রাস পেয়েছে করোনাভাইরাস সংক্রমণের মাত্রা তথা রিপ্রডাকশন রেট। দেশটির মহামারী সংক্রান্ত সর্বশেষ তথ্যে দেখা গেছে, মহামারীর প্রসারণ সংকুচিত হতে শুরু করেছে এবং তা ১ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। এরপরই যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, এখন থেকে সর্বোচ্চ ৬ জন ব্যক্তিগত বাগানগুলোতে পরস্পরের থেকে ২ মিটার দূরত্বে জমায়েত হতে পারেন, অবশ্য যদি বিভিন্ন পরিবারের সদস্যরা সামাজিক দূরত্বের নিয়মগুলো যথাযথভাবে মেনে চলতে থাকেন তাহলে। ইংল্যান্ডের স্থানীয় লোকালয়গুলোতে করোনা আক্রান্তের গড় সংখ্যা তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল। গত ১৩ মে বরিস জনসন প্রথমবারের মতো নিষেধাজ্ঞাগুলো শিথিল করে দেন। বাড়িতে থেকে কাজ না করতে পারলে লোকদের কর্মস্থলে ফিরে যেতে উৎসাহিত করা হয়। মে মাসের শুরুতে লকডাউনের নিষেধাজ্ঞা কঠোর নিয়মনীতি মেনে ছোটখাটো সংস্কার চালান। এতে করে মানুষ এখন বাইরে পার্কে নিরাপদ দূরত্বে অন্য পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার স্বাধীনতা লাভ করেছে। তবে যুক্তরাজ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পুরোপুরি শেষ হতে আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। সিঙ্গাপুর ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির একটি দলের করোনার মহামারীতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত দেশগুলো নিয়ে তৈরি করা এক পরিসংখ্যানে এ তথ্য উঠে এসেছে। পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, দেশটি থেকে করোনা সম্পূর্ণভাবে নির্মূল হতে আগামী সেপ্টেম্বরের শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এর পর থেকে ব্রিটেনে নতুন করে সংক্রমণ বা পুরনোদের মধ্যে ভাইরাসটি আবার ফিরে আসার প্রবণতা থাকবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে।

 

নিউইয়র্কে খুলে যাচ্ছে দোকানপাট, ক্যাসিনো

৮ জুন থেকে সচল হচ্ছে নিউইয়র্ক। বিশ^বাণিজ্যের ফুসফুস যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটিকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছিল করোনা ভাইরাস। পুরোপুরি অচল হয়ে পড়া শহরটিতে দুই লাখেরও বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। গত দুই সপ্তাহ ধরে নতুন করে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কমতে থাকায় লকডাউন তুলে নেওয়ার দিকে এগোচ্ছে তারা। দুই ধাপে এই লকডাউন শিথিল করা হচ্ছে। নিউইয়র্কের গভর্নর ও মেয়র এরই মধ্যে জানিয়েছেন ৮ জুন থেকে লকডাউন তুলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার চেষ্টা করবে দেশটি। বিশে^র সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্র করোনার বড় ধরনের অর্থনৈতিক ধাক্কায় কাবু। দুই মাসে সেখানে কাজ হারিয়েছেন ২ লাখেরও বেশি মানুষ। কর্মহীন মানুষদের কাজে ফিরিয়ে নিতে লকডাউন শিথিল করে দোকানপাট খুলে দেওয়া হচ্ছে। সেলুন, ছোট রিটেইল শপ, হার্ডওয়্যার, দালান তৈরির সঙ্গে যুক্ত অনেকেই এখন থেকে দোকান খুলতে পারবেন, কাজে ফিরতে পারবেন। অফিসগুলোও নিজেদের মতো স্বাস্থ্য সতর্কতা মেনে খুলে যাচ্ছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোও পুরোপুরি কার্যক্রমে আসার পরিকল্পনা তৈরি করছে। সরকারি নির্দেশনা পাওয়ার পর গণপরিবহন চালু হতে যাচ্ছে সেখানে। কীভাবে মানুষকে করোনার সংক্রমণ থেকে বাঁচিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা শতভাগ সচল করা যায় সেটি নিয়েও ভাবা হচ্ছে। রাস্তায় সাইকেল, মোটরসাইকেল তো চলছেই। এখন ভাড়ায় ক্যাব চলবে সেখানে। স্কুল সীমিত পরিসরে চালু হচ্ছে। ডে-কেয়ার সেন্টারগুলো খুলে দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছে। কয়েকটি প্রদেশে লকডাউন এরই মধ্যে শিথিল করে দেওয়ায় সেখানে ক্যাসিনোগুলো খুলে দেওয়া হচ্ছে। জুনের ১৫ তারিখের মধ্যে সবাইকে কাজে ফিরে যাওয়ার সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে নিউইয়র্কে। ঘুমিয়ে পড়া নিউইয়র্ক আবার ব্যস্ত হয়ে উঠবে দুই সপ্তাহের মধ্যেই। ১২ জুনের মধ্যে মসজিদ, গির্জাসহ সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। জুলাই থেকেই ঘরের বাইরে ঘুরতে যাওয়া, ছুটি কাটানো, ক্যাম্পিং করাসহ সব ধরনের পর্যটন খুলে দেওয়ার কথা রয়েছে। নিউইয়র্ক শহরে দৈনিক প্রাণহানির সংখ্যা ১০০-এর নিচে নেমে এসেছে। এই পরিসংখ্যানকে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সাফল্য হিসেবেই দেখছেন গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো।

পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় নিউইয়র্ক শহর এবং অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দাদের সর্বোচ্চ ১০ জন একত্রিত হওয়ার অনুমতি দিয়েছেন গভর্নর কুমো। তবে খুব প্রয়োজন না হলে এ ধরনের জমায়েত এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।

 

বার্লিনে খুলেছে মদের দোকান উঠছে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা

জার্মানির রাজধানী বার্লিন। করোনায় কাবু শহরটিতে ফের প্রাণ ফিরেছে। করোনায় ইউরোপের অন্যান্য দেশের চেয়ে জার্মানিকে সফল বলে বিবেচনা করা হয়। করোনা সংকট কাটিয়ে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু হয়েছে সেখানে। কমেছে প্রতিদিনের আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা। ফলে বিধিনিষেধ তুলে নিয়ে রেস্টুরেন্ট, বার, সেলুনসহ সব  দোকানপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে সবক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্বের বিধান মেনে চলতে হবে। গণপরিবহন ও কেনাকাটাসহ সব জনসমাগম স্থানে মাস্ক ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। রাস্তায় বেরিয়েছে মানুষ। অফিস খুলেছে। শিথিল করা হয়েছে করোনা প্রতিরোধ সংক্রান্ত বিধিনিষেধ। জার্মানিতে করোনা মহামারী নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগ।  স্টেডিয়ামে দর্শক ছাড়া শুরু হয়েছে জার্মান ফুটবল লিগ ‘বুন্দেসলিগা’। খুলে দেওয়া হচ্ছে শহরের সব মদের দোকান ও ফিটনেস স্টুডিও। এখন একসঙ্গে আগের চেয়ে বেশি মানুষ সমবেত হতে পারবেন। আগামী ৬ জুন থেকে জনসমাগমের ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় দেওয়া হবে। ওই সময় থেকে একসঙ্গে ১০ জন মানুষ একত্রিত হওয়ার অনুমতি পাবেন। বার্লিনের উপাসনালয়গুলোতে অনির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষ সমবেত হতে পারবেন। খ্রিস্টানদের বিশেষ ধর্মীয় অনুষ্ঠান ‘পেন্টেকোস্টে’ উপলক্ষে সরকারি ছুটির ঠিক আগমুহূর্তে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে নগর কর্তৃপক্ষ। ২ জুন থেকে মদের দোকানগুলো খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে দোকানের পাশে কেউ যেতে পারবেন না। ক্রেতাদের একজন থেকে অন্যজনের মধ্যে অন্তত দেড় মিটার অর্থাৎ ৫ ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। তবে এখনো শহরের নাইট ক্লাবগুলো পুনরায় খোলার অনুমতি দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া খোলা মাঠে কনসার্ট ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা যাবে ২ জুন থেকে। তবে তাতে অংশ নিতে পারবে সর্বোচ্চ ২০০ জন। এ ছাড়া ধীরে ধীরে তা আরও বাড়ানো হবে। ১৬ জুন তা হবে সর্বোচ্চ ৫০০ জন এবং এক হাজার মানুষ এসব অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারবে ৩০ জুন থেকে। সিনেমা হলে সিনেমা দেখার সুযোগ তৈরি হবে আগামী ৩০ জুন থেকে। তবে মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। দেশের সব খেলার মাঠ এবং জাদুঘর এবং চিড়িয়াখানার মতো সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলো পুনরায় খুলে দেওয়া হবে। স্কুল, শিশুসেবা কেন্দ্র ও খেলাধুলার প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার বিষয়ে বিধিবিধান শিথিল করা হবে। করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সামাজিক দূরত্ব বিধিসংক্রান্ত নির্দেশনা আগামী ২৯ জুন পর্যন্ত বাড়ানোর ব্যাপারে একমত হয়েছে জার্মান কেন্দ্রীয় সরকার ও দেশটির রাজ্য সরকারের প্রধানরা। দেশটির উন্নত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং সরকারের গৃহীত সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারণেই করোনা নিয়ন্ত্রণে জার্মানি কিছুটা সফলতা লাভ করেছে। করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে গত ২৩ মার্চ থেকে পুরোদমে লকডাউন কার্যকর করে ইউরোপের দেশ জার্মানি। করোনা সংক্রমণ এবং প্রাণহানির চূড়া পেরিয়ে আসায় ধীরে ধীরে অচলাবস্থা কাটিয়ে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফিরতে শুরু করেছে দেশটি। সর্বশেষ দেশটির গির্জাগুলো পুনরায় চালু করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আগামী ১৫ জুন থেকে ইউরোপের ৩১ দেশের ওপরে জারি করা ভ্রমণসংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা তুলে নিচ্ছে জার্মানি। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অধীনে থাকা ২৬টি দেশসহ যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বাইরের দেশ আইসল্যান্ড ও নরওয়ে যারা কিনা শেনজেন জোনের বর্ডার মুক্ত দেশ, এই দেশগুলোর ওপরই মূলত ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়া হচ্ছে। আসছে গ্রীষ্মে পর্যটকদের জন্য এটা বড় এক সিদ্ধান্তই নেওয়া হলো।

 

ইতালি খুলছে সীমান্ত, স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছে সবাই

করোনাভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে ইতালি। রোম, ভেনিস, মিলানসহ ইতালির প্রতিটি বড় শহর আবার সচল হয়েছে। সেখানে করোনার প্রকোপ কমতে থাকায় গত ৪ মে প্রথম ধাপে লকডাউন শিথিল করা হয়। সেদিন থেকেই পার্ক খুলে দেওয়া হয়, কারখানাও চালু হয় হয়। এরপর কাজে যোগ দিয়েছেন প্রায় ৫০ লাখ মানুষ। ফের চালু হয়েছে উৎপাদন শিল্প, নির্মাণ খাত, পাইকারি দোকান, ফুল-ফলের দোকান। এরপর দ্বিতীয় ধাপে ১৮ মে থেকে খুলেছে দোকানপাট, রেস্তোরাঁ ও হেয়ার সেলুন। খুলে দেওয়া হয়েছে উপাসনালয়গুলো। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হতে থাকায় ইতালির প্রায় ৭৪ শতাংশ ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে। ৩ জুন থেকে সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। সেই সঙ্গে পর্যটনের হাল ফিরিয়ে আনতে ইতিমধ্যে পরিকল্পনা শুরু করেছে ইতালি সরকার। ৩ জুন থেকে ইতালিতে অবাধে চলাচলের সুযোগ পাবে দেশটির ৬ কোটি নাগরিক। সেদিন খুলে দেওয়া হচ্ছে ইতালির সব বিমানবন্দর। আগামী ৩ জুন থেকে আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের অনুমতি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ইতালির পরিবহনমন্ত্রী ডি মিশেলি। দীর্ঘ দুই মাসেরও অধিক সময় পর অবাধে যাতায়াত করতে পারবেন ইতালিবাসী। ইতালির এক অঞ্চল থেকে আরেক অঞ্চলে ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। তবে সবাইকে সতর্ক ও সচেতনতার সঙ্গে সব আইনকানুন মেনে চলতে হবে। নিরাপত্তার স্বার্থে সবাইকে মাস্ক ব্যবহার করতে পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

বিমানবন্দরের পাশাপাশি খুলে দেওয়া হবে ইতালির সব সীমান্ত। দোকানপাট খুলে দেওয়া হলে সেখানে চালু হয় সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার বিধি। সেলুন এবং পারলারের কর্মীরা নিয়ম করে তাদের সব যন্ত্রপাতি স্যানিটাইজ করছেন। পাশাপাশি জামা-কাপড়ের দোকানেও কর্মীরা জিনিসপত্র বাধ্যতামূলকভাবে স্যানিটাইজ করছেন। খুলেছে জিম, সুইমিং পুল এবং খেলাধুলার কেন্দ্রগুলো। সিনেমা ও থিয়েটার ১৫ জুন থেকে খুলবে। এখন ইউরোপীয় পর্যটকদের জন্য দুই সপ্তাহের কোয়ারেন্টাইনের প্রয়োজন হবে না। স্থগিত হয়ে থাকা ইতালিয়ান সিরি এ আগামী ২০ জুন থেকে ফের চালু করার ব্যাপারে সবুজসংকেত দেওয়া হয়েছে। ইতালির ক্রীড়ামন্ত্রী ভিনসেনজো স্পাদাফোরা আসর শুরুর তারিখ জানান। ইতালিয়ান ফুটবল ফেডারেশনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার পর স্পাদাফোরা বলেছেন, ‘ইতালিতে সবকিছু ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে এবং ফুটবল চালু করার জন্য এটাই সঠিক সময়।’ খেলোয়াড়দের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ইতালিয়ান ফুটবল ফেডারেশন যেসব ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে, তা অনুমোদন করেছে দেশটির সরকার। লিগ চালু করার লক্ষ্য নিয়ে একক পর্যায়ের অনুশীলনে ফিরেছে ক্লাবগুলো। এখন ফুটবলাররা শুরু করেছেন দলীয় অনুশীলন।

 

চীনে খুলেছে সব, শহরে শহরে কর্মচাঞ্চল্য

করোনায় ঘুরে দাঁড়ানো দেশগুলোর তালিকায় উপরের দিকে রয়েছে চীন। বেইজিং, সাংহাই, ওয়াংজু এখন পুরোপুরি স্বাভাবিক, কর্মচাঞ্চল্যে ফিরেছে। সম্প্রতি আরও ৭ দেশের সঙ্গে বিমান চলাচল শুরু হয়েছে চীনের। ওই সাত দেশের মধ্যে রয়েছে ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, সিঙ্গাপুর এবং সুইজারল্যান্ড। ডিসেম্বরের শেষে দেশটিতে নতুন করোনাভাইরাসের উৎপত্তির পর বেইজিং ভ্রমণ সংক্রান্ত যেসব বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল, তা ধীরে ধীরে প্রত্যাহার করা হয়। এরপরই কাজে ফিরতে শুরু করে সবাই। ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার পর প্রায় দুই মাস চীনের বড় শহরগুলো অবরুদ্ধ ছিল। লকডাউন তুলে নেওয়ায় ইতিমধ্যে দেশটির সব বড় শহরে কাজে ফিরেছে মানুষ। একই সঙ্গে জীবনযাত্রাও স্বাভাবিক রয়েছে। চীন থেকে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটলেও গত কয়েক মাস ধরে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে তারা। কর্মীরা কাজে ফিরেছেন। কারখানা, স্কুল, জনসমাগম এবং পর্যটন স্থানগুলো আবার খুলেছে। করোনার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় গ্রেট ওয়াল খুলে দেওয়া হয়। গ্রেট ওয়ালের যে অংশে পর্যটকদের আনাগোনা বেশি থাকে সে অংশ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। পর্যটকদের আগে থেকেই অনলাইন টিকিট রিজার্ভ করতে হবে, কিউআর কোডে তাদের নিশ্চিত করতে হবে তাদের স্বাস্থ্য ঠিক আছে। পাশাপাশি মাস্ক পরতে হবে এবং গ্রেট ওয়াল পরিদর্শনের সময় একে অপরের কাছ থেকে ১ মিটার দূরত্ব রাখার নির্দেশনা রয়েছে। এ ছাড়া দেশটির সব সিনেমা হল ও থিয়েটার খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। হলিউডের বিখ্যাত ‘হ্যারি পটার’ চলচ্চিত্রের আট কিস্তি থ্রিডি আকারে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে চীনে। থাকছে আরও বেশ কয়েকটি পশ্চিমা ছবির চাইনিজ সংস্করণ। আর এ কারণে প্রেক্ষাগৃহগুলো নতুন করে সাজানো হয়েছে। এতে এখন শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন ছবির পোস্টার। সিনেমা হলগুলো খুললেও দর্শকদের সচেতন থাকতে বলা হয়েছে। মাস্ক ছাড়া সিনেমা হলে ঢোকার অনুমতি  নেই। হলে ঢোকার আগের সবার শরীরের তাপমাত্রাও মাপা হবে। করোনাভাইরাসের আতঙ্ক ঝেড়ে খেলাধুলার ওপর বিধি শিথিল করা হয়। প্রশাসন সবুজসংকেত দেওয়ার পরেই অনুশীলনে নেমে পড়েন সে দেশের ফুটবলাররাও। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসায় সেখানে জনপ্রিয় চাইনিজ সুপার লিগের প্রস্তুতি শুরু হয়। লিগে অংশ নিতে চলা ফুটবল ক্লাবগুলোতে চলছে অনুশীলন। চীনের যে শহর থেকে করোনা ছড়িয়েছে সেই উহান শহরের জীবনযাত্রাও এখন স্বাভাবিক। ভ্রমণের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার পরই হুবেই প্রদেশের অনেক বাসিন্দা, যারা অন্য অঞ্চলে অবস্থান করছিলেন, তারা অবশেষে ঘরে ফিরতে শুরু করেন। সেখানের শিক্ষার্থীরা ক্লাসে যাওয়া শুরু করেছে। অন্যদিকে শ্রমিকরা ফিরেছেন কাজে।

সর্বশেষ খবর