পাকিস্তান ও ভারতের সামরিক সংঘাতের ইতিহাস বেশ পুরোনো। এর প্রধান কারণ কাশ্মীর ভূখণ্ড নিয়ে বিরোধ। এ ছাড়া দেশ ভাগ, ধর্ম ও আদর্শিক কিছু বিভেদ দেশ দুটিকে বারবার যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিয়েছে। সম্প্রতি কাশ্মীর ইস্যুকে কেন্দ্র করে আবারও সংঘাতে জড়াল তারা। পেহেলগামে হামলার মধ্য দিয়ে শুরু; এখন রীতিমতো বেজে উঠেছে যুদ্ধের দামামা। এ সংঘাতের শুরু, অস্থিতিশীলতা, প্রত্যেকের সামরিক অবস্থানসহ প্রাসঙ্গিক নানা বিষয়ে আজকের আয়োজন-
দুই দেশের মধ্যে যত যুদ্ধ
হিন্দু-মুসলিম দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভাগ হওয়ার পর থেকে পাকিস্তান ও ভারত একে অপরের সঙ্গে বেশ কয়েকটি যুদ্ধে জড়িয়েছে...
১৯৪৭ সালের দেশভাগ : দুই শতাব্দীর ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট জন্ম নেয় হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারত ও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পাকিস্তান। এ বিভাজন বিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে ঘটে। ফলে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারান। প্রায় দেড় কোটি মানুষ স্থানচ্যুত হন। কাশ্মীরের শাসক তখন সিদ্ধান্ত নিতে না পারায়, পাকিস্তানপন্থি যোদ্ধারা কাশ্মীরে ঢুকে পড়ে। রাজা ভারতের সহায়তা চাইলে ভারতও সামরিক হস্তক্ষেপ করে। শুরু হয় দুই দেশের প্রথম যুদ্ধ। ১৯৪৯ সালের জানুয়ারিতে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে একটি যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে কাশ্মীরকে বিভক্ত করা হয় ‘যুদ্ধবিরতি রেখা’ দিয়ে; যা পরবর্তীতে ‘নিয়ন্ত্রণ রেখা’ বা এলওসি নামে পরিচিতি পায়।
১৯৬৫ সালের দ্বিতীয় যুদ্ধ : পাকিস্তান ১৯৬৫ সালের আগস্টে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে হামলা চালালে যুদ্ধ শুরু হয়। হাজার হাজার প্রাণহানির পর ওই বছরের সেপ্টেম্বরে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।
১৯৭১ সালের বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ : ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানে স্বাধীনতার দাবিতে শুরু হয় গণআন্দোলন। পাকিস্তান সেনাবাহিনী তা দমন করতে অভিযান চালায়। ৯ মাসব্যাপী সশস্ত্র সংগ্রামে লাখ লাখ মানুষ প্রাণ হারান। লক্ষাধিক মানুষ ভারতে শরণার্থী হন। পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে ভারত যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। স্বাধীন হয় বাংলাদেশ।
১৯৮৯-৯০ সালে কাশ্মীরের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা : ১৯৮৯ সালে কাশ্মীরে বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে। ভারতের বিরুদ্ধে ক্ষোভ থেকে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তী দশকগুলোতে বিপুলসংখ্যক সেনা, বিদ্রোহী ও সাধারণ মানুষ প্রাণ হারায়। ভারত অভিযোগ করে আসছে, পাকিস্তান এ বিদ্রোহীদের আর্থিক সহায়তা ও অস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করছে।
১৯৯৯ সালের কারগিল সংঘাত : কারগিল অঞ্চলে পাকিস্তান-সমর্থিত বাহিনী ভারতের সামরিক পোস্ট দখলে নেয়। এ সংঘর্ষের সময় পাকিস্তান তাদের পারমাণবিক অস্ত্র আংশিক প্রস্তুত রেখেছিল বলে গোয়েন্দা তথ্য উঠে আসে। ওয়াশিংটনের চাপ ও আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের কারণে পাকিস্তান শেষ পর্যন্ত পিছু হটে। ১০ সপ্তাহের সংঘর্ষে প্রায় এক হাজার প্রাণহানি হয়।
২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলা ও বিমান হানা : কাশ্মীরের পুলওয়ামায় আত্মঘাতী হামলায় ৪০ জন ভারতীয় নিরাপত্তা সদস্য নিহত হন। সে সময় ভারতে জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে আসছিল। ভারত এর জবাবে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে একটি জঙ্গি প্রশিক্ষণ ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালানোর দাবি করে। পাকিস্তান একটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান গুলি করে নামিয়ে দেয়। পাইলটকে আটক করে। পরে কয়েক দিনের মধ্যে তাকে ফেরত পাঠানো হয়।
২০২৫ সালের অপারেশন সিঁদুর : সর্বশেষ গত ২২ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর হামলার জেরে পাকিস্তানে ‘অপারেশন সিঁদুর’ পরিচালনা করে ভারত। হামলায় ৭০ জন সন্ত্রাসী নিহত হওয়ার দাবি করে ভারত। অন্যদিকে পাকিস্তানের পাল্টা হামলায় ১০ জন নিহত হয় বলে দাবি করে ইসলামাবাদ।
কী নিয়ে বিরোধ
১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্টের কথা। বিভক্তির মধ্য দিয়ে ভারত প্রজাতন্ত্র ও ইসলামি প্রজাতন্ত্রী পাকিস্তান স্বাধীন দুটি রাষ্ট্রের জন্ম হয়। এরপর থেকে দুটি দেশের মধ্যে বিভিন্ন যুদ্ধ হয়। মূলত ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধের মূল কারণ কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে। ভারত-পাকিস্তান প্রথম যুদ্ধ হয় ১৯৪৭-১৯৪৮ সালে। জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি হয়। জম্মু ও কাশ্মীর দেশীয় রাজ্যের অবসান ঘটে।
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে অস্থিরতার কারণ
কাশ্মীরের ভারত নিয়ন্ত্রিত অংশ আসলে কার অধীনে থাকা উচিত, তা নিয়ে মতভেদ গভীর ও তীব্র। কেউ চান স্বাধীনতা, কেউ চান পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত হতে। ধর্ম একটা বড় কারণ। জম্মু-কাশ্মীর ভারতের একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্য। সেখানে মুসলিমদের সংখ্যা ছিল ৭০ শতাংশের ওপরে। এখন তা কমে ৬০ শতাংশের কাছাকাছি। ১৯৮৯ সাল থেকে অঞ্চলটিতে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র আন্দোলন চলছে। এতে বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। কাশ্মীরে সশস্ত্র আন্দোলনে জড়িতদের জঙ্গি আখ্যা দেয় ভারত। ভারত দীর্ঘদিন ধরে তাদের মদত দেওয়ার অভিযোগ করে আসছে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। যদিও ইসলামাবাদ তা অস্বীকার করে। ২০১৯ সালে দিল্লির কেন্দ্রীয় সরকার কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ভারত-শাসিত কাশ্মীরের বিশেষ স্বায়ত্তশাসনের মর্যাদা বাতিল করে।
পাল্টাপাল্টি হামলা নিয়ে আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
জাতিসংঘ : জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র বলেন, ‘নিয়ন্ত্রণরেখা ও আন্তর্জাতিক সীমান্তে ভারতের সামরিক অভিযানের বিষয়ে মহাসচিব খুবই উদ্বিগ্ন। তিনি দুই দেশকে সামরিক দিক থেকে সর্বোচ্চ সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন। কারণ, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক সংঘাতের ভার বিশ্ব বহন করতে পারবে না।’
যুক্তরাষ্ট্র : ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। আশা করি, এ পরিস্থিতি দ্রুত শেষ হবে। ভারত ও পাকিস্তানের নেতৃত্ব একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের দিকে এগোবে।’
চীন : চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ‘ভারত ও পাকিস্তান এমন দুই প্রতিবেশী, যাদের আলাদা করা যায় না। তারা চীনেরও প্রতিবেশী। চীন সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের বিরোধিতা করে। আমরা ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশকেই শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার, শান্ত ও সংযত থাকার এবং জটিল পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।’
রাশিয়া : রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি বিবৃতি প্রকাশ করে জানিয়েছে, ‘রাশিয়া সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও তার যে কোনো বহিঃপ্রকাশের তীব্র নিন্দা করে। এটিকে কার্যকরভাবে মোকাবিলা করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘রাশিয়া দ্বিপক্ষীয় সমাধানের পক্ষে। আমরা আশা করছি, দিল্লি ও ইসলামাবাদের মধ্যে চলমান মতবিরোধ শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধান হবে।’
ফ্রান্স : ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-নোয়েল ব্যারো দিল্লি ও ইসলামাবাদকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে একটি ফরাসি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদের অভিশাপ থেকে নিজেদের রক্ষার জন্য ভারতের আকাক্সক্ষা আমরা বুঝি। কিন্তু উত্তেজনা বৃদ্ধি হওয়া থেকে এড়াতে এবং অবশ্যই বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষার জন্য ভারত ও পাকিস্তান উভয়কেই সংযমের আহ্বান জানাচ্ছি।’
জাপান : বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জাপানও সাম্প্রতিক পরিস্থিতির বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে। জাপানের চিফ ক্যাবিনেট সেক্রেটারি ইয়োশিমাসা হায়াশি বলেন, ‘আমাদের দেশ এ ধরনের সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের তীব্র নিন্দা করে। কিন্তু এ পরিস্থিতি আরও প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার দিকে দুই দেশকে পরিচালিত করতে পারে। একটি পূর্ণমাত্রার সামরিক সংঘাতের দিকে তারা এগিয়ে যেতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করছি। দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য আমরা ভারত ও পাকিস্তান উভয়কেই সংযম প্রদর্শনের এবং নিজেদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি স্থিতিশীল করার আহ্বান জানাচ্ছি।’
কাশ্মীরের কত অংশ কার দখলে
পাকিস্তান কাশ্মীরের এক-তৃতীয়াংশ নিয়ন্ত্রণে নেয়। বাকি অংশের নিয়ন্ত্রণ নেয় ভারত। অধিকৃত এলাকার লাইন অব কন্ট্রোল জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিভক্ত করে। ভারত জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের (১ লাখ ১ হাজার ৩৮৭ বর্গ কিলোমিটার) নিয়ন্ত্রণ লাভ করে। পাকিস্তান আজাদ কাশ্মীর (১৩ হাজার ৩৯৭ বর্গ কিলোমিটার) ও গিলগিত-বালতিস্তান (৭২ হাজার ৪৯৫ বর্গ কিলোমিটার) অঞ্চলদ্বয়ের ওপর নিয়ন্ত্রণ লাভ করে।
সামরিক শক্তিতে কে এগিয়ে
বিভিন্ন দেশের সামরিক শক্তি-সংক্রান্ত ইউরোপভিত্তিক বিশ্লেষণধর্মী সংবাদমাধ্যম আমর্ডফোর্সেসডটইইউ জানায়, ১২৭ কোটি জনসংখ্যার দেশ ভারতের বর্তমান সামরিক বাজেট প্রায় ৫৬ বিলিয়ন ডলার। পক্ষান্তরে ১৯ কোটি লোকের দেশ পাকিস্তানের সামরিক বাজেট ১০ বিলিয়ন ডলার।
পরমাণু বোমা : সংবাদমাধ্যমটির হিসাবে ভারতের হাতে রয়েছে ১১০ থেকে ১২০টি পরমাণু বোমা। আর পাকিস্তানের হাতে রয়েছে ১২০ থেকে ১৩০টি পরমাণু বোমা।
সৈন্য সংখ্যা : ভারতের সক্রিয় সৈন্য সংখ্যা ২১ লাখ ৪০ হাজার। রিজার্ভে রয়েছে ১১ লাখ ৫৫ হাজার সৈন্য। এ ছাড়া যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে মিলবে ৩১ কোটি সেনা। অপরদিকে পাকিস্তানে সক্রিয় সৈন্য রয়েছে ৬ লাখ ৫৩ হাজার। রিজার্ভে রয়েছে ৫ লাখ ১৩ হাজার সৈন্য। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে দেশটিতে মিলবে ৪ কোটি সেনা।
স্থলবাহিনী : ভারতের স্থলবাহিনীর হাতে রয়েছে ৪ হাজার ৪২৬টি ট্যাঙ্ক। সামরিক যান রয়েছে ৫ হাজার ৬৮১টি। রকেট আর্টিলারি রয়েছে ২৯২টি। পাকিস্তানের স্থলবাহিনীর রয়েছে ২ হাজার ৭৩৫টি ট্যাঙ্ক। সামরিকযান রয়েছে ৩ হাজার ৬৬টি। রকেট আর্টিলারি রয়েছে ১৩৪টি।
বিমান বাহিনী : ভারতের যুদ্ধবিমান রয়েছে ২ হাজার ২১৬টি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে রাশিয়ায় তৈরি মিগ-২১, মিগ-২৭, মিগ-২৯, সুখোই-৩০এমকেআই, ব্রিটেন-ফ্রান্সের তৈরি জাগুয়ার এবং ফ্রান্সের তৈরি মিরেজ ২০০০। পাকিস্তানের যুদ্ধবিমান রয়েছে ১ হাজার ১৪৩টি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে চীনের তৈরি এফ-৭পিজি এবং যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এফ-১৬ ফেলকন।
নৌবাহিনী : ভারতের নৌবাহিনীর রয়েছে ১৫টি সাবমেরিন, ১৫টি ফ্রিগেট, ১১টি ডেস্ট্রয়ার এবং বিমানবহনকারী জাহাজ ২টি। পক্ষান্তরে পাকিস্তানের রয়েছে ৫টি সাবমেরিন এবং ৯টি ফ্রিগেট।
ভারতের অপারেশন সিঁদুর পাকিস্তানের পাল্টা হামলা
কাশ্মীরকে বলা হয় ভূস্বর্গ। ভারত-শাসিত এই কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলা হয় চলতি বছরের এপ্রিলের ২২ তারিখ। ওই হামলার জন্য পাকিস্তানের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছে ভারত। এর ঠিক ১৫ দিন পরে মাঝরাতে ২৫ মিনিট ধরে পাকিস্তানের নির্দিষ্ট কিছু স্থাপনা লক্ষ্য করে আকাশপথে হামলা চালিয়েছে ভারত। ভারত তাদের এ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার নাম দিয়েছে ‘অপারেশন সিঁদুর’। ভারতের বিরুদ্ধে গত বৃহস্পতিবার ভোর থেকে নতুন মাত্রায় এক সামরিক অভিযান শুরু করার কথা জানায় পাকিস্তান। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন বুনইয়ান-উন-মারসুস’। দুটি দেশের পাল্টাপাল্টি হামলা অব্যাহত রয়েছে। সীমান্তবর্তী অঞ্চলে একাধিক ড্রোন হামলার অভিযোগ করেছে দুই দেশই।
পরমাণু যুদ্ধের পূর্বাভাস!
ভারত, পাকিস্তান দুই দেশের হাতেই রয়েছে পরমাণু অস্ত্র। সাধারণ মানুষ তো বটেই সমর বিশেষজ্ঞরাও মনে করেন, বড় আকারে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়লে পরমাণু যুদ্ধের আশঙ্কা রয়েছে। পাকিস্তানি বিজ্ঞানী পারভেজ হুডভাই বলেন, ‘ভারত ও পাকিস্তানের পরমাণু যুদ্ধের আশঙ্কা সবসময় আছে। অন্যান্য কারণ থাকলেও কাশ্মীরই হবে যুদ্ধের প্রধান কারণ।’ কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার জেরে পাকিস্তানে ভারতের হামলা এবং পাল্টা জবাবের উত্তেজনার মধ্যে অনলাইনে ঘুরে বেড়াচ্ছে বিবিসি বাংলার বছর ছয়েক আগের এক প্রতিবেদন। যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণার তথ্যে পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশী দেশ দুটির মধ্যে ২০২৫ সালে পরমাণু যুদ্ধ লেগে যাওয়া ও প্রাণহানির পূর্বাভাস রয়েছে সেই প্রতিবেদনে। কাকতালীয়ভাবে ২০২৫ সালে এসেই যুদ্ধাবস্থার মুখোমুখি দুই দেশ। প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারত-পাকিস্তান পারমাণবিক যুদ্ধে জড়াতে পারে ২০২৫ সালে; যার সূত্রপাত হবে কাশ্মীর বিরোধের জের ধরে। আর যুদ্ধ কীভাবে শুরু হবে, তার কিছু কাল্পনিক দৃশ্যপটও দেখান গবেষকরা। যেমন- কাশ্মীরে আক্রমণ করবে ভারত। তারপর শুরু হয়ে যাবে পারমাণবিক যুদ্ধ। তবে উভয় দেশে যদি বিচার-বুদ্ধিসম্পন্ন নেতারা ক্ষমতায় থাকেন, তাহলে হয়তো এ রকম কিছু হবে না। গবেষণার সঙ্গে জড়িত যুক্তরাষ্ট্রের রাটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক অ্যালান রোবোক বলেন, ‘ভারত ও পাকিস্তান তাদের পরমাণু অস্ত্রভান্ডার বাড়িয়ে চলেছে। শুধু সংখ্যার বিচারেই নয়, এসব অস্ত্রের বিস্ফোরণের শক্তিও তারা ক্রমাগত বৃদ্ধি করছে। ফলে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যেই এ যুদ্ধের আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি।’ যুদ্ধ শুরুর দৃশ্যকল্প কীভাবে তৈরি করা হয়েছে? এমন প্রশ্নে অ্যালান রোবোক বলেন, ‘কিছু পেশাজীবীকে নিয়ে ওয়ার্কশপ করা হয়েছে; যেখানে এসব সম্ভাব্য কারণের কথা উঠে এসেছে।’ তবে তিনি বলেন, ‘এগুলো কিছু দৃশ্যকল্প। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই হয়তো কিছু হয় না। নেতারা ঠান্ডা মাথায় সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রাখেন। কিন্তু কখনো কখনো পরিস্থিতি তো নিয়ন্ত্রণের বাইরেও চলে যেতে পারে!’
রাফায়েল বিশ্বে প্রথম শ্রেণির অত্যাধুনিক এবং মূল্যবান যুদ্ধবিমান। সম্প্রতি সীমান্ত সংঘর্ষে পাকিস্তান একটি ভারতীয় রাফায়েল ভূপাতিত করেছে বলে ফ্রান্সের গোয়েন্দা সূত্র নিশ্চিত করেছে। এই ফাইটার জেটের গৌরবময় ইতিহাসে প্রথমবার যুদ্ধক্ষেত্রে ধ্বংসের ঘটনা এটি।
পরমাণু যুদ্ধ হলে কী হবে
পারমাণবিক বোমা শুধু মানুষই নয়, গোটা বিশ্বের জন্যই হুমকি। এর ব্যাখ্যায় জলবায়ু বিজ্ঞানী অ্যালান রোবোক বলেন, ‘পারমাণবিক বোমার ফলে আগুন লেগে যাবে। সেই আগুন থেকে যে পরিমাণ ধোঁয়া তৈরি হবে, সেটা ছড়িয়ে পড়বে সারা পৃথিবীতে। এ ধোঁয়ার কারণে আমাদের এ গ্রহে সূর্যের আলোও ঠিকমতো এসে পৌঁছাতে পারবে না। ফলে পৃথিবী অনেক ঠান্ডা আর অন্ধকারময় হয়ে পড়বে। ধোঁয়া যখন পৃথিবীর আরও ওপরের আবহমণ্ডলে চলে যাবে, তখন সেটা সূর্যের আলোতে উত্তপ্ত হয়ে আরও বেশি ছড়িয়ে পড়বে; যা সেখানে স্থায়ী হবে কয়েক বছর। বৃষ্টিপাত কমে যাবে। তেজস্ক্রিয়তার ঘটনা ঘটবে। এসবের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে খাদ্য উৎপাদনের ওপর। ফলে যুদ্ধের পরও অনাহারে আরও বহু মানুষের মৃত্যু হবে।’
কোন দেশের মিত্র কে
চলমান ভারত-পাকিস্তান সামরিক সংঘাতে ভারতের আত্মরক্ষার অধিকারের প্রতি দৃঢ় সমর্থন জানিয়েছে ইসরায়েল। ভারতে নিযুক্ত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত রিউভেন আজার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক বার্তায় বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের জানা উচিত, নিরীহদের বিরুদ্ধে জঘন্য অপরাধ করে লুকিয়ে থাকার কোনো স্থান নেই।’ ভারতের হামলার পরপরই ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূতের এ মন্তব্য এসেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। বিপরীতে পাকিস্তানের প্রতি সংহতি জানিয়ে পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে তুরস্ক। ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের চরম উত্তেজনায় তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারকে টেলিফোন করেছেন। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসহাক দারের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপকালে আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে তুরস্ক। এ সংকটে উভয় দেশ অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ে থাকতে রাজি হয়েছে।