যথাসময়ে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু না হওয়া ও সময়মতো শেষ না হওয়ায় পিছিয়ে পড়ছেন ছাত্রছাত্রীরা। পিছিয়ে যেতে বসেছে একাডেমিক শিক্ষা বছরও। অনেক ক্ষেত্রে ভর্তি হতেই কয়েক মাস পিছিয়ে পড়ছেন শিক্ষার্থীরা। উচ্চমাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা পর্যায়েই বেশি পিছিয়ে পড়ছেন ছাত্রছাত্রীরা। তথ্যমতে, ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি ও সমমান এবং এপ্রিলে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল গত কয়েক বছর ধরেই। গত বছরও মাধ্যমিক পর্যায়ের পাবলিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে যথাসময়ে ফেব্রুয়ারিতে। উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের পরীক্ষা দুই মাস পিছিয়ে শুরু হয়েছিল জুনে। চলতি বছরে এসে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয়েছে এপ্রিলে। এইচএসসি পরীক্ষা গতবারের মতো শুরু হয়েছে জুন মাসে। দুই পাবলিক পরীক্ষা শুরু হওয়ার তারিখে ছন্দপতন হওয়ায় এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে অন্য শিক্ষাসূচিও।
চলমান ২০২৫ শিক্ষা সেশনে এসএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশের পর শুরু হয়েছে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি প্রক্রিয়া। ভর্তি নির্দেশিকার তথ্যমতে, উচ্চমাধ্যমিকে একাদশ শ্রেণিতে ক্লাস শুরু হবে ১৫ সেপ্টেম্বর। যদিও বেশির ভাগ কলেজই নির্ধারিত তারিখে ক্লাস শুরু করতে পারে না। সে হিসাবে এইচএসসি ও সমমানের দুই বছরের শিক্ষাবর্ষে ছাত্রছাত্রীরা পরীক্ষার আগে সময় পাবে দেড় বছর। এ সময়ের মধ্যেই দুই বছরের নির্ধারিত কোর্স-কারিকুলাম শেষ করতে হবে তাদের।
দুই বছর আগেও এইচএসসি ও সমমানে উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীদের উচ্চশিক্ষা পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কার্যক্রম শুরু হতো জুলাই-আগস্টে। বর্তমানে এ প্রক্রিয়া পিছিয়ে গেছে কমপক্ষে তিন মাস। চলতি বছরে এখনো এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা পুরোপুরি শেষ না হওয়ায় এ ভর্তি কার্যক্রম শুরু হতে পারে নভেম্বর নাগাদ। সব মিলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তি কার্যক্রম শেষ করতে মার্চ-এপ্রিলও পেরিয়ে যাবে। গত শিক্ষা বছরেও লক্ষ করা গেছে এমন হযবরল পরিস্থিতি। ভর্তি প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করতে না পারায় শিক্ষার্থীদের প্রায় অর্ধবছর নষ্ট হচ্ছে। ফলে শিক্ষাজীবনজুড়েই তারা সময়ের হিসাবে পিছিয়ে থাকছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রাজনৈতিক কারণে সৃষ্ট নানান অচলাবস্থা ও সেশনজট তো রয়েছেই।
শিক্ষাবর্ষের নির্ধারিত সময় জানুয়ারি হলেও বাস্তবে তা কার্যকর হতে দেরি হচ্ছে প্রতি বছরই। বিদ্যালয় পর্যায়ে বই উৎসবের মধ্য দিয়ে জানুয়ারিতেই পাঠদান শুরুর উদ্যোগ থাকলেও জানুয়ারিতে সব বই পাচ্ছে না ছাত্রছাত্রীরা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বই পেতেই পেরিয়ে যাচ্ছে ফেব্রুয়ারি এমনকি মার্চও। শিক্ষার্থীদের পাঠ্যসূচি শুরু হয় নির্ধারিত সময়ের অন্তত মাসখানেক পর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ছিদ্দিকুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এইচএসসিতে দেড় বছরের মধ্যে দুই বছরের কোর্স শেষ করতে হয়। এ সময়ের মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের কোর্স শেষ করা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। তিনি বলেন, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার পর ফল প্রকাশ আর ফল প্রকাশের পর বিশ্ববিদ্যালয় ও উচ্চশিক্ষার অন্য বিদ্যাপীঠে ভর্তি হতে প্রায় ছয় মাসের একাডেমিক গ্যাপ তৈরি হয়। এ সময়ের মধ্যে কেউ ভর্তি কোচিং করেন, অনেকেই যারা তুলনামূলক অর্থকষ্টে থাকেন তারা পড়াশোনা থেকে দূরে থাকেন। এখানে তারা পিছিয়ে পড়েন। তাই বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রক্রিয়াটি দ্রুত হওয়া উচিত। এ শিক্ষাবিদ আরও বলেন, মাধ্যমিক পর্যায়ে বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের হাতে বই দেওয়া একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া। এটি দেরি হওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। শিক্ষার স্বার্থে, জাতি গঠনের স্বার্থে সরকারের নীতিনির্ধারকদের বিষয়গুলো বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিতে হবে।