বিমানের প্রায় ৬০০ মডেল তৈরি করেছিলেন তরুণ আশির উদ্দিন। তবে এখন তিনি আর বিমানের মডেল তৈরি করেন না। সময়ের চাহিদা বিবেচনা করে তিনি এখন তৈরি করছেন ড্রোন। ইতোমধ্যে বানিয়েছেন বিভিন্ন মডেলের ১০টি ড্রোন। আশিরের বাড়ি চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার উপকূলীয় এলাকা পুঁইছড়ি ইউনিয়নে। সরকারি পলিটেকনিক কলেজ থেকে তিনি ডিপ্লোমা শেষ করেন। নিজ গ্রামে তার আছে ‘এয়ারক্রাফট মেনটেইনেন্স ল্যাব’ নামের ১৫ বর্গফুট আয়তনের একটি ল্যাব। প্রসঙ্গত, ড্রোন হলো একটি চালকবিহীন উড়ন্ত যান, যা দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয় বা স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালিত হয়। এটি মূলত সামরিক ও বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত হয়। যেমন- নজরদারি, পরিবহন, ছবি তোলার মতো কাজ। জানা যায়, বিমানের মডেল তৈরি করে সফল হয়েছিলেন আশির। তৈরি করেন ছয় শতাধিক বিমানের মডেল।
এ সফলতার পর সামরিক বাহিনী তাকে সংবর্ধনা ও সম্মানি দিয়েছিল। কিন্তু পরে তিনি বিমান থেকে ড্রোন তৈরিতে মনোযোগ দেন। ১০ কেজি ওজনের একটি ড্রোনের দাম মানভেদে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা। সর্বোচ্চ ২০ কেজি ওজনের ড্রোন ৬ লাখ টাকায় বিক্রি করেন। একটি ড্রোন তৈরিতে ছয়জনের টিমের ১০ থেকে ১৫ দিন সময় লাগে। ড্রোনগুলো নানা কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। নিজে আকাশে উড়িয়ে পরে তা সরবরাহ করেন। আশির উদ্দিন বলেন, ‘২০২৩ সাল পর্যন্ত আমি বিমানের মডেল তৈরি করি। পরে আমাকে একজন কিছু নষ্ট ড্রোন মেরামত করে দিতে বলেন। আমি প্রায় ছয় মাস নিজের মতো করে স্টাডি করে সেগুলো মেরামত করি। এরপর পর্যায়ক্রমে আমি বিমান থেকে ড্রোন তৈরির দিকে মনোযোগ দিই।’ তিনি বলেন, ‘জিপিএস সিস্টেম ও স্যাটেলাইটের মাধ্যমে মোবাইল, রিমোট কন্ট্রোল ও মনিটরের মাধ্যমে ড্রোনগুলো চালানো হয়। বলা যায়, এগুলো প্রফেশনাল ড্রোন।’ তিনি আরও বলেন, ‘ড্রোন প্রযুক্তিকে আরও আধুনিক করতে আর্থিক সহযোগিতার প্রয়োজন।
শখ থেকেই বিমান তৈরি : ছোটবেলায় আকাশে বিমান উড়তে দেখতেন আশির। তখন থেকেই বিমানে চড়ার সাধ জাগত। তাই নিজের সাধ মেটাতে বিমান বানানোর স্বপ্ন দেখা শুরু করেন। বিমান উড়তে দেখে এক বছর পর্যন্ত গভীর চিন্তায় ছিলেন। ২০১৬ সালের কথা। প্রথমে খেলনার ছলে বিমান তৈরির চেষ্টা করেন। তারপর কম ওজনের ছোট আকারের বিমান বানান। চেষ্টা করেন রিমোট কন্ট্রোল দিয়ে ওড়ানোর। প্রথমে কিছু বিমান ভেঙে নষ্ট হয়ে যায়। ২০১৭ সালের দিকে প্রথমে বানিয়েছেন খেলনা বিমান, যেগুলো কিছুদূর উড়তে সক্ষম। বর্তমানে তিনি ড্রোন তৈরি করছেন।
১৫ বর্গফুটের ল্যাব থেকে আকাশ জয়ের স্বপ্ন : আশির কাজ করেন একটি ল্যাবে। সেটি বাঁশখালীর পুঁইছড়ি ইউনিয়নে। ২০১৮ সালে এখানেই তিনি তৈরি করেছেন একটি ল্যাব। ল্যাবটির নাম ‘এয়ারক্রাফট মেনটেইনেন্স ল্যাব’। এটির আয়তন মাত্র ১৫ বর্গফুট। এখানে আছে- ওয়েল্ডিং, ড্রিল, গ্যান্ডার, কাটার, ডিজিটাল মাল্টি মেশিন, স্কেল মেশিনসহ নানান মেশিনারিজ। সেখানেই এসব উপকরণ দিয়ে চলে তার সব প্রকৌশলী বিদ্যার অনুশীলন।