প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ থেকেই মানুষ নিয়ে মহাকাশের উদ্দেশে যাত্রা করবে রকেট! অথবা নিজস্ব প্রযুক্তিতে মহাকাশে থাকবে ন্যানোস্যাটেলাইট। যা দিয়ে সম্প্রচার, যোগাযোগ, আবহাওয়া ও জলবায়ু পরবির্তনসহ নানান তথ্য সংগ্রহ করা হবে। প্রকৃতি সুরক্ষা ও খনিজসম্পদ অনুসন্ধানের বড় মাধ্যম হিসেবেও কাজ করবে ‘ধূমকেতু’।
সবকিছু ঠিক থাকলে এমন খবর বিশ্ব দরবারে অচিরেই পৌঁছাবে। রকেটটি তৈরি করছেন ময়মনসিংহের একদল তরুণ উদ্ভাবক। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘বিদ্রোহী। ময়মনসিংহে দেশের প্রথম বাণিজ্যিক সাব-অরবিটাল (উপ-কক্ষপথ) রকেট ‘বিদ্রোহী’ উন্মোচন করেছে ধূমকেতু এক্সপ্লোরেশন টেকনোলজিস লিমিটেড (ধূমকেতুএক্স)।যা দেশের মহাকাশ-প্রযুক্তি উন্নয়নের এক নতুন যুগের সূচনা করেছে। আর এই ধূমকেতু তৈরিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন ৩১ বছরের যুবক নাহিয়ান আল রহমান অলি। নাহিয়ান জানান, ২০১৮ সাল থেকে ধূমকেতু-০১ শিরোনামে এই রকেট প্রজেক্টের যাত্রা শুরু। পরে গবেষণাটি আলোর মুখ দেখে ২০২২ সালে। সম্প্রতি ময়মনসিংহ নগরীর টাউন হলে রকেটের প্রথম প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। প্রদর্শনীতে তরুণ বিজ্ঞানীরা জানান, সরকারি অনুমতি মিললে আগামী বছরেই এটি উৎক্ষেপণ সম্ভব। জানা যায়, ৬ দশমিক ১ মিটার উচ্চতাসম্পন্ন বিদ্রোহী রকেট সাব-অরবিটাল (উপ-কক্ষপথ) মহাকাশে পৌঁছানোর জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এই রকেট ৩৫-৫০ কেজি পৌঁছাতে সক্ষম। ৩৫ কেজি বহন করে উৎক্ষেপণ করা হলেও ২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারবে। এটি বাংলাদেশের মহাকাশ উন্নয়নের জন্য একটি মাইলফলক বলে দাবি করছেন তারা। বর্তমানে বাংলাদেশে বেসরকারি মহাকাশ উৎক্ষেপণ বা পরীক্ষণের জন্য কোনো পূর্ণাঙ্গ মহাকাশ আইন নেই। তাই রকেট উৎক্ষেপণের জন্য জাতীয় মহাকাশনীতি, আন্তর্জাতিক মহাকাশ চুক্তি এবং মহাকাশের শান্তিপূর্ণ ব্যবহার-সংক্রান্ত কমিটির নীতিমালার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ একটি নতুন আইনি কাঠামো প্রণয়ণের দাবি জানান ধূমকেতুএক্স-এর ব্যবস্থাপনা প্রধান হানজালা রহমান। বাংলাদেশের ২৫টি শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও দেশের বাইরে থেকে যুক্ত হওয়া ৫০ জনের টিমের সমন্বয়ে রকেট নিয়ে কাজ চলছে। দেশে উৎক্ষেপণের অনুমতি না পাওয়া গেলে জাপান, নিউজিল্যান্ড, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়াসহ ১০টি দেশকে বিকল্প হিসেবে ভাবা হয়েছে। নাহিয়ান জানান, ধূমকেতু প্রজেক্টটি শুরু হয় ২০১২ সালে। পরে অর্থায়নের অভাবে থেমে যায় স্বপ্ন। দমে যাননি নাহিয়ান। ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে ২০১৭ সালে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ের ওপর স্নাতক ডিগ্রি নেন তিনি। নিজস্ব অর্থায়ন আর ব্যাংক ঋণ এই প্রজেক্টের অর্থের উৎস জানিয়ে এই তরুণ বলেন, আমার এই কাজে সরাসরি সহযোগিতা করে সাইদুর, নাদিম, লিয়ান, আবরার, রিজু, বিন্দু, নাইম, আশরাফসহ অনেকেই।