১০০ বছর আগে বার্লিনের নয়স মিউজিয়ামের উঠোনে বিশ্ব প্রথমবারের মতো সবচেয়ে স্থায়ী সৌন্দর্য আইকনগুলোর মধ্যে একজনের মুখোমুখি হয়েছিল- রানি নেফারতিতি। ১৯১২ সালে জার্মান প্রত্নতাত্ত্বিকরা মিসরে তাঁর ৩৩০০ বছরের পুরোনো স্টুকো-কোটেড চুনাপাথরের মূর্তি আবিষ্কার করেন। সেই মূর্তি ১৯২৪ সালে বার্লিনে প্রদর্শিত হয়। এই আয়োজনে কায়রো থেকে লন্ডন পর্যন্ত দর্শকরা স্তম্ভিত হয়েছিলেন। নেফারতিতির নান্দনিকতা নিয়ে এক শতাব্দীব্যাপী মুগ্ধতার জন্ম দিয়েছিল। এই পুরাকীর্তির বৈশিষ্ট্য হলো সূক্ষ্মভাবে খোদাই করা চোয়াল, উঁচু গাল, ‘হাঁসের মতো’ ঘাড় এবং কাজলে আঁকা চোখ- যা কয়েক দশক ফ্যাশন হিসেবে কাজ করে।
মূর্তিটিতে নেফারতিতিকে প্রশস্ত কলার এবং একটি সমতল মুকুট পরিহিত দেখা যায়, সঙ্গে একটি সোনালি ব্যান্ড এবং ইউরিউস (পবিত্র সাপ সমন্বিত শিরস্ত্রাণ) রয়েছে, যা সবুজ, হলুদ, বাদামি এবং নীল রঙে সজ্জিত। গবেষণা ইঙ্গিত করে, তিনি একজন রাজকীয় এবং সম্ভ্রান্ত মহিলা ছিলেন। কথিত আছে, তিনি ছয় কন্যা জন্ম দিয়েছিলেন যার মধ্যে একজনকে তুতেনখামেনের সঙ্গে বিবাহ দেওয়া হয়েছিল। তবে নেফারতিতির জীবন এবং উৎস সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়। খ্রিস্টপূর্ব ১৪ শতকে মিসর জাতিগত বা বর্ণগতভাবে সমজাতীয় ছিল না। অনেক পণ্ডিত অনুমান করেন, তাঁর চিত্রায়ণ এবং অঞ্চলের জনসংখ্যার ওপর ভিত্তি করে নেফারতিতিকে আজকের দিনে একজন কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
আটলান্টার স্পেলম্যান কলেজের শিল্প ইতিহাসের অধ্যাপক ড. শেরিল ফিনলে বলেছেন, ‘নেফারতিতির আবক্ষ মূর্তিটি এত নিখুঁত; তিনি এতটাই আত্মবিশ্বাসী।’ ১৯২০-এর দশকে মূর্তিটি আবিষ্কারের পর, তিনি ‘ইট’ গার্ল হয়ে ওঠেন। সেই সময় ডিজাইনাররা (ফরাসি পোশাক প্রস্তুতকারক- পল পোয়েরেট), তাদের কাজে মিসরীয় মোটিফ অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। আমেরিকান মিলিনার লিলি ডাচ তার টুপি ডিজাইন করেছিলেন। ১৯৬৩ সালে এলিজাবেথ টেলরের ক্লিওপেট্রা চরিত্রে অভিনয় এই আবেশকে আরও দৃঢ় করে, ‘মিসরীয় লুক’কে ফ্যাশনের প্রধান বিষয় হয়ে ওঠে। মূর্তিটি আবিষ্কারের কয়েক দশক পরেও নেফারতিতির স্টাইল ফ্যাশনকে প্রভাবিত করতে থাকে। ২০০৪ সালে ডিওরের প্রদর্শনীতে, জন গ্যালিয়ানো নেফারতিতি টুপিসহ পোশাক পরেছিলেন। ২০১৫ সালে ক্রিশ্চিয়ান লুবাউটিন একটি লিপস্টিক বাজারে আনে যা রাজকীয় পত্নী থেকে অনুপ্রেরণীয়। এর বৈশিষ্ট্য মুকুট সজ্জিত সোনা-কালো ভায়াল। আজ্জা ফাহমির মতো গয়নার ডিজাইনাররা তাদের অলংকারে নেফারতিতিকে তুলে ধরেছেন।
আধুনিক যুগে নেফারতিতি সাংস্কৃতিক আইকন হিসেবে গুরুত্ব পেয়েছেন। টিকটক এবং ইনস্টাগ্রামে ইনফ্লুয়েন্সাররা রানির লুক তৈরি করেন। তাঁর প্রতিচ্ছবি টি-শার্ট, মগ থেকে ১৪ হাজার ডলারের পোশাক এবং উচ্চমানের পারফিউম পণ্যকে অনুপ্রাণিত করে। শুধু তাই নয়, অনেক তারকার মতো রিহানা তার পাঁজরে নেফারতিতির ট্যাটু করে, ২০১৭ সালে ভোগ অ্যারাবিয়া কভারে তাঁকে শ্রদ্ধা জানান।