ঊনবিংশ শতাব্দীতে জিন্স কেবল শ্রমিক শ্রেণির মানুষের পরিধেয় পোশাক হিসেবে পরিচিত ছিল। সময়ের দীর্ঘ পরিক্রমায় ডেনিম জিন্স আজকের বিশ্বে ফ্যাশনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে...
তারুণ্যের প্রতীক জিন্স। যা তৈরি হয় ডেনিম কাপড় থেকে। কালের বিবর্তনে ডেনিমের আবাহন হলেও তারুণ্যের কাছে এর আবেদন অফুরান। কারও কাছে পুরনো হয় না ডেনিমের লুক। বরং সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এর জমিনে আসে পরিবর্তন। হাজির হয় নতুন রূপে। তা ছাড়া নিজেকে নতুন করে উপস্থাপনই যেন ডেনিমের ধর্ম। তাই ফ্যাশনেও থাকে সেরা। আর সেই ডেনিম ফ্যাশনের মোক্ষম সময় শীতকাল। যদিও একসময় ডেনিম ছিল কেবল ছেলেদের পোশাক। এখন সেই ধারায় এসেছে পরিবর্তন। মেয়েরাও এখন ডেনিম ফ্যাশনে রাঙিয়ে নিচ্ছে নিজেকে।
আমেরিকায় যখন শিল্পায়নের স্রোত জাগে, তখন সেখানকার ওয়েস্টার্ন কাউবয়দের হাত ধরে ডেনিমের পথ চলা শুরু। তখন ডেনিমের তৈরি জিন্স ছিল কেবল শ্রমিকদের পরিধেয় বস্ত্র। স্থায়িত্ব এবং ব্যবহারিকতা ছিল এর মূল বৈশিষ্ট্য। পরবর্তীকালে হলিউডের ওয়েস্টার্ন চলচ্চিত্রগুলোতে কাউবয়দের পোশাকে জিন্সের ব্যবহার এটিকে কিছুটা জনপ্রিয়তা এনে দেয়। তবে ফ্যাশনে ডেনিমের আবির্ভাব ঘটে পঞ্চাশের দশকে। তখন থেকে ডেনিম হয়ে আছে ‘টেনিউরড ট্রেন্ড’। এর আগে ডেনিম বলতে সবাই বুঝতেন জিন্স। ১৯৬০ ও ১৯৭০-এর দশকে জিন্স ফ্যাশনের মূলধারায় চলে আসে। হিপি সংস্কৃতি এবং যুব আন্দোলন জিন্সকে আরও বেশি জনপ্রিয় করে তোলে। সেই সময় মার্লন ব্র্যান্ডো এবং জেমস ডিন-এর মতো অভিনেতারা তাদের সিনেমায় জিন্স পরে বিদ্রোহ এবং তারুণ্যের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরেন। এর ফলে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে জিন্স ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। ফ্লেয়ারড জিন্স, অ্যামব্রয়ডারি করা জিন্স এবং টি-ডাই জিন্স ফ্যাশনে নতুন মাত্রা যোগ করে। ১৯৮০-এর দশকে ডিজাইনার জিন্স-এর আগমন ঘটে। ক্যালভিন ক্লেইন, জর্ডাচ এবং রেনজুল-এর মতো ডিজাইনাররা জিন্সকে ফ্যাশনেবল ওয়্যার হিসেবে উপস্থাপন করেন। ব্রুক শিল্ডস-এর মতো মডেলরা ডিজাইনার জিন্সের বিজ্ঞাপনে মডেল হন, যা এর আবেদনকে আরও বাড়িয়ে তোলে। আর ১৯৯০-এর দশক থেকে আজ অব্দি অর্থাৎ এই মধ্যকার সময়ে জিন্স বৈচিত্র্যের চূড়ান্ত রূপ লাভ করে। স্লিম-ফিট, বুটকাট, স্ট্রেট-লেগ, স্কিনি জিন্স, রিপড জিন্স- নানা ধরনের স্টাইল বাজারে আসে। আজকের বিশ্বে জিন্স শুধু ফ্যাশন স্টেটমেন্ট নয়, আরাম, স্টাইল এবং ব্যক্তিত্বের প্রতীক।
জিন্স হচ্ছে ডেনিম ফেব্রিক থেকে বানানো প্যান্ট। ব্যাপারটা অনেকটা ‘সব জিনসই ডেনিম, কিন্তু সব ডেনিম জিন্স নয়’-এর মতো। তাই কখনো জিনসের শার্ট, জ্যাকেট হয় না। সব ডেনিমের শার্ট, জ্যাকেট। ডেনিম সেই জিনসের গণ্ডি থেকে বেরিয়েছে অনেক আগে। জ্যাকেট, শার্টের পর এখন ডেনিম দিয়ে বানানো হয় নানা ডিজাইনের স্কার্ট ড্রেস, জাম্পস্যুট, টপস, এমনকি কুর্তাও। আমাদের দেশে কেবল শীতের সময় ডেনিমের পোশাক পরতে দেখা যায়। কিন্তু এমন কিছু ডেনিম ফেব্রিক আছে, যা খুব হালকা এবং সাধারণ ডেনিমের চেয়ে পাতলা হয়ে থাকে। তাই এই ফেব্রিকের পোশাক দিয়ে চাইলেই সারা বছর স্টাইলিং করতে পারেন। জেনে নেওয়া যেতে পারে এ বছরের ডেনিম ট্রেন্ড ও এর কিছু স্টাইলিং আইডিয়া সম্পর্কে।
গত ২০০ বছরে জিন্সের জগতে অনেক বিবর্তন হয়েছে। পঞ্চাশের দশকের পর থেকে নানা ধরনের জিন্স দেখেছে বিশ্ববাসী। কয়েক বছর পরপর এর ট্রেন্ডের পরিবর্তন হয়। নব্বইয়ের দশকে ছেলেদের জন্য এসেছিল ঢিলেঢালা ব্যাগি জিন্স। ছিল অনেক দিন। তারপর আবার আসে স্ট্রেট কাট ডেনিম প্যান্ট। আর ওয়াইটুকেতে (ইয়ার অব টু থাউজেন্ড) আবির্ভাব হয় স্কিনি জিন্সের। ধীরে ধীরে সেটিও চলে গেছে। শুধু তাই নয়, আজকের বিশ্বে ঋতুভেদেও মিলছে জিন্স। নারী-পুরুষভেদে আলাদা হচ্ছে জিন্স। পুরুষের জন্য এইটিজ হেভিওয়েট স্ট্রেচ, ওপেন অ্যান্ড স্ট্রেচ ইত্যাদি। নারীদের জন্য রয়েছে অথেনটিক স্ট্রেচ, কমার্শিয়াল স্ট্রেচ, ইন্ডিগো স্ট্রিপ ইত্যাদি। পুরুষদের জন্য যে স্টাইলগুলো জনপ্রিয়, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- ফাইভ পকেট জিন্স, বাইকার ডিটেইলিং জিন্স এবং জগার জিন্স ইত্যাদি।