প্রাচীন সভ্যতা থেকে আধুনিক বিজ্ঞানের ছোঁয়া; ‘সানগ্লাস’ এখন এক প্রযুক্তি-নির্ভর এবং ফ্যাশন-সংবেদনশীল উপকরণে রূপ নিয়েছে। সুরক্ষা, ব্যক্তিত্ব প্রকাশ এবং আরাম- এই তিনের সংমিশ্রণেই ‘সানগ্লাস’ আজ ফ্যাশনে অপরিহার্য...
‘সানগ্লাস’ ফ্যাশনে তো বটেই, রোদের তীব্র আলো থেকে চোখকে রক্ষা করে। যদিও প্রচলিত ধারণা হচ্ছে, সানগ্লাস গরমকালে বা প্রখর রোদে পরার জিনিস। ধারণাটা ভুল। সারা বছর সানগ্লাস ব্যবহার করা জরুরি। কারণ মেঘলা দিনেও সূর্যের ইউভি রশ্মি চোখের জন্য ক্ষতিকর। তাছাড়া সানগ্লাস যতটা না ফ্যাশন; তার চেয়ে বেশি প্রয়োজন। মানুষের বয়সের সঙ্গে বাড়ে চোখের নানা সমস্যাও; যার জন্য দায়ী সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি। মাইগ্রেন বা সাইনাসের সমস্যা, চোখের কর্নিয়া এবং রেটিনার জন্য ক্ষতিকর রশ্মি আটকাতে ও প্রতিহত করতে পারে সানগ্লাস। সরাসরি চোখে রোদ লাগা ক্ষতিকর। এ থেকে সুরক্ষা পেতে সানগ্লাস উপকারী।
পোশাকের মতো বছরব্যাপী বদল আসে সানগ্লাসের ফ্যাশনেও। ইদানীং সব বয়সি মানুষই সানগ্লাস ব্যবহার করছেন। তাই সানগ্লাসের কালেকশনেও থাকে বৈচিত্র্য। ফ্যাশনেবল তরুণ-তরুণীরা ওজনে হালকা-পাতলা, গাঢ় রং, শেডের সানগ্লাসের প্রতিই বেশি আগ্রহী। তবে রোদচশমা কেনার সময় কেবল ফ্যাশন নিয়েই ভাবলে চলবে না, চোখের সুরক্ষার কথাও ভাবতে হবে। পাশাপাশি চেহারা ও ব্যক্তিত্বের সঙ্গে মানানসই কি না- সেদিকে নজর রাখা উচিত।
সানগ্লাস কেমন হওয়া উচিত?
কেনার আগে এমন সানগ্লাস কিনুন যা অন্তত ৯৯% থেকে ১০০% সূর্যের ইউভিএ এবং ইউভিবি রশ্মি থেকে চোখকে বাঁচাতে সক্ষম। উইভি ৪০০-এর লেবেলযুক্ত সানগ্লাস চোখকে সুরক্ষিত রাখে। এ ছাড়া পোলারাইজড লেন্সযুক্ত সানগ্লাস সূর্যের কড়া আলো থেকে শুধু বাঁচায় না, ওয়াটার, বরফ ও কাচ থেকে প্রতিফলিত আলোকরশ্মি কমাতে সাহায্য করে। এসব সানগ্লাস বেড়ানো এবং ড্রাইভিংয়ের জন্য সর্বাধিক উপযোগী। তবে কেনার আগে নিজের প্রয়োজনীয়তা বুঝে কেনা উচিত।
মুখের গড়ন বুঝে সানগ্লাস
বড় ফ্রেমের সানগ্লাস নিঃসন্দেহে আজকালের ফ্যাশন। তবে মুখের গড়ন বুঝে সানগ্লাস বেছে নেওয়া উচিত। সানগ্লাসের ক্ষেত্রে সাধারণত চার ধরনের মুখের গড়ন বেশি দেখা যায়। তন্মধ্যে আছে গোলাকার, ডিম্বাকৃতি, চারকোনা ও পানপাতার মতো বা হৃদয়াকৃতি মুখের গড়ন। চেহারা গোলাকার হলে পাতলা, কৌণিক সানগ্লাস ভালো মানানসই। মুখ ডিম্বাকৃতির হলে সুবিধা বেশি। এমন চেহারায় সব ধরনের সানগ্লাস মানিয়ে যায়। চেহারা চারকোনা গড়নের হলে আয়তক্ষেত্রাকারের সানগ্লাস মানাবে। পানপাতার মতো মুখের গড়নে অ্যাভিয়েটর-জ্যামিতিক আকারের সানগ্লাস নিতে পারেন।
কখন থেকে সানগ্লাস?
সানগ্লাসের ব্যবহার হাজার বছরের পুরনো হলেও এর আধুনিক ধারণা তুলনামূলক নতুন। প্রায় ২০০০ বছর আগে, আর্কটিক অঞ্চলে ইনুইটরা তিমির দাঁত, হাড়ের তৈরি ‘গগলস’ ব্যবহার করত। রোমান সম্রাট নিরো যুদ্ধ দেখার সময় সূর্যের ঝলক এড়াতে পলিশ পান্না ব্যবহার করতেন। দ্বাদশ শতাব্দীতে চীনের বিচারকরা স্মোকি ধূসর কোয়ার্টজ লেন্স ব্যবহার করতেন, এটি এক ধরনের ‘গোপনীয় চশমা’। আধুনিক সানগ্লাসের বিকাশ ঘটে ১৮শ শতাব্দীতে, জেমস আইসকফ নীল ও সবুজ কাচের লেন্সকে ফ্রেমের সঙ্গে যুক্ত করার ধারণা দেন, যদিও তার উদ্দেশ্য ছিল দৃষ্টিশক্তির উন্নতি। ১৯শ শতাব্দীতে সিফিলিস আক্রান্ত রোগীদের আলো সংবেদনশীলতা কমাতে হলুদ বা বাদামি লেন্সযুক্ত চশমা ব্যবহৃত হতো। ১৯২৯ সালে স্যাম ফস্টার আমেরিকায় ‘ফস্টার গ্রান্ট’ নামে সানগ্লাসের গণ-উৎপাদন শুরু করলে এটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। একই সময়ে হলিউডের তারকা ও সেলেব্রিটিরা সানগ্লাসকে ফ্যাশন অনুষঙ্গ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন।