যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব জর্জিয়ার সহকারী অধ্যাপক ডেভিড ই. ক্লেমেনসন তার এক গবেষণা প্রতিবেদনে ছয়টি মূল পদ্ধতির কথা তুলে ধরেছেন। যেগুলোর মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই রাজনীতিকে অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি প্রতারণাপূর্ণ করে তুলছে বা তুলতে পারে।
১. ভিন্ন ভোটারের জন্য ভিন্ন ভুয়া প্রতিশ্রুতি
রাজনৈতিক প্রচারণায় ক্যানডিডেটরা এখন এআই ব্যবহার করে ভোটারের ব্যক্তিগত তথ্য ও অনলাইন আচরণ বিশ্লেষণ করে তার বিশ্বাস ও আগ্রহ অনুযায়ী প্রতিশ্রুতি তৈরি করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ : একজন ভোটার যদি বেকারত্ব নিয়ে উদগ্রীব থাকে তাহলে তার ফিডে সে বিষয়ে ভুয়া প্রতিশ্রুতি দেখানো হতে পারে। এ পদ্ধতি একজন প্রার্থীকে আরও বিশ্বাসযোগ্য করে তোলে, যদিও প্রতিশ্রুতিগুলো সবার জন্য এক নয় এবং অনেক সময় তা বাস্তবভিত্তিকও নয়।
২. সহজে বিশ্বাস করার প্রবণতাকে কাজে লাগানো
মানুষ প্রায়ই যা শোনে বা দেখে সেটা বিশ্বাস করে ফেলে, এমনকি মিথ্যাও। বিজ্ঞানীরা এটাকে বলেন, ‘ট্রুথ ডিফল্ট’ প্রবণতা। এআই এ মনস্তাত্ত্বিক প্রবণতাকে ব্যবহার করে খুব স্বাভাবিক ও বাস্তবধর্মীভাবে মিথ্যা বার্তা তৈরি করতে পারে, যেগুলো সহজেই বিশ্বাসযোগ্যতা পেয়ে যায়।
৩. মিথ্যার বিস্তার ও জবাবদিহিহীনতা
এআই চ্যাটবট, যেমন : চ্যাটজিপিটি প্রায়ই ভুল তথ্য তৈরি করে। এসব ভুল তথ্য যদি প্রচারণায় ব্যবহৃত হয় তবে এর কোনো মানবিক জবাবদিহি থাকে না। প্রচারকারীরা সহজেই দায় এড়িয়ে যেতে পারে বলে পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক হয়ে ওঠে।
৪. ভোটারকে প্ররোচনা ও রাজনৈতিক পক্ষপাত
এআই চ্যাটবট এতটাই উন্নত হয়েছে যে, এটি কাউকে ব্যক্তিগতভাবে প্ররোচিতও করতে পারে। যেমন : নিউইয়র্ক টাইমসের এক রিপোর্টারকে বিং-এর এআই প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে স্ত্রীর বিরুদ্ধে উসকে দিয়েছিল। এ ক্ষমতা রাজনীতিতে ব্যবহার করে একজন ভোটারকে তার পছন্দের প্রার্থী থেকে সরিয়ে অন্য প্রার্থীকে সমর্থন করতে প্ররোচিত করা সম্ভব। এ ছাড়া অনেক এআই সিস্টেমের মধ্যে রাজনৈতিক পক্ষপাত বিদ্যমান থাকে, যা পক্ষবিশেষকে অতিরিক্ত সমর্থন দিতে পারে।
৫. প্রার্থীর চেহারা বিকৃতি বা ডিপফেক
এআই প্রযুক্তি এখন ছবি ও ভিডিও বিকৃত করতে পারে। ডিপফেকের মাধ্যমে প্রার্থীর চেহারা, অভিব্যক্তি বা আচরণকে বদলে দিয়ে এমনভাবে দেখানো যায় যেন সে আন্তরিক, হাস্যোজ্জ্বল বা ‘প্রেসিডেন্টসুলভ’। যেমন ট্রাম্পের কিছু ডিপফেক ভিডিওতে তাকে প্রার্থনা করতে বা বন্ধুত্বপূর্ণভাবে হাসতে দেখানো হয়েছে, যা বাস্তবে দেখা যায় না। এর মাধ্যমে একজন প্রার্থীকে ভোটারদের কাছে ভুল বার্তা পৌঁছানো যায়।
৬. দায় এড়ানোর সুযোগ তৈরি
এআই ব্যবহারে রাজনৈতিক প্রচারণার ভুল কিংবা বিতর্কিত কনটেন্টের জন্য সরাসরি কোনো মানুষকে দায়ী না করে দায় চাপানো যায় সফটওয়্যার বা এআই’র ওপর। প্রচারণার ক্ষেত্রে এটি একটি নতুন ধরনের ‘নিরাপদ আশ্রয়’ তৈরি করে দেয়।
ডেভিড ক্লেমেনসনের মতে, এআই রাজনীতিতে একদিকে যেমন ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে, অন্যদিকে এর অপব্যবহারও বিশাল ক্ষতির কারণ হতে পারে।