তথ্যভান্ডারের এ যুগে সবকিছু এখন এক ক্লিকে পাওয়া যায়। নতুন দিগন্ত উন্মোচন হচ্ছে যোগাযোগমাধ্যমে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় জীবনযাপন হয়েছে সহজ। তথ্যপ্রাপ্তি, শিক্ষা, সামাজিক যোগাযোগ, গবেষণা ও বিনোদনের অপ্রতিদ্বন্দ্বী মাধ্যম ইন্টারনেট। বিশ্বায়নের যুগে তথ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ও বিস্তারের ফলে বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয়। ডিজিটাল দুনিয়ায় আরও কী কী হচ্ছে, তা নিয়ে আজকের আয়োজন-
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জয়জয়কার
চ্যাটজিপিটি : কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চ্যাটজিপিটি সবাইকে চমকে দিয়েছে। এটি এমন এক সার্চ ইঞ্জিন যেখানে প্রশ্নের জবাব দেওয়া, চিঠি লেখা, ছবি তৈরি, কথোপকথন থেকে তথ্য প্রেরণ- সবই করে দিচ্ছে চ্যাটজিপিটি। ভবিষ্যৎ প্রযুক্তির নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে এটি। এখন অনলাইনের দৈনন্দিন জীবনের অনেক কাজ নিমিষেই করে দিচ্ছে এটি।
ছবি আঁকা : কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে অদেখা কোনো মানুষ বা ঐতিহাসিক কোনো ব্যক্তিত্বের ছবি এখন অবিকল আঁকা সম্ভব। এমনকি ঢাকায় বরফ পড়লে কেমন দেখাবে, এমন কল্পনাকেও ছবিতে মূর্ত করে তুলতে পারবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। সঠিক নির্দেশনা দিলে এঁকে দেবে পছন্দসই যে কোনো ছবি।
গান লেখা ও সুর দেওয়া : কেউ গান লিখতে পারেন, কিন্তু সুর করতে পারেন না; সেই আক্ষেপও দূর করে দিচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। কেউ চাইলে গান লিখে দেওয়াই শুধু নয়, গানে সুরও দেবে এ আধুনিক প্রযুক্তি।
প্রফেশনাল ফটোগ্রাফি : ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন পণ্যের ফটোগ্রাফি নিয়ে বেশ ভুগতে হয়। উদ্যোক্তারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে তাদের সাদামাটা ছবি আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করতে পারবেন।
সংবাদ উপস্থাপন : হাজারও ব্যস্ততার ভিড়ে প্রয়োজনীয় সংবাদ বা তথ্য খুঁজে পাওয়া কঠিন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে ইন্টারনেটে উন্মুক্ত সংবাদ থেকে প্রয়োজনীয় সংবাদগুলো খুঁজে বের করে উপস্থাপন করা যায় সহজে। পাঠক চাইলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে সংবাদের মূল ঘটনাও সংক্ষেপে জেনে নিতে পারেন।
ভিডিও কনটেন্ট তৈরি : ক্যামেরার সামনে কথা বলায় অনেকেরই দুর্বলতা থাকে। তা ছাড়া সাউন্ড ও ব্যাকগ্রাউন্ডসহ নিখুঁত ভিডিও বানানো বেশ সময়সাপেক্ষ ও কষ্টকর। শুধু স্ক্রিপ্ট লিখে দিলেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চরিত্রসহ আকর্ষণীয় ভিডিও বানিয়ে দেয়। প্রয়োজনে নিজের চরিত্রও ব্যবহার করা যায়।
ব্যবসায়িক পরিকল্পনা : ব্যবসা ও বিপণন পরিকল্পনা এবং স্ট্র্যাটেজি, কাস্টমার জার্নি, ফানেল বিল্ডিংসহ ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের প্রয়োজনীয় প্রায় সব কাজ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে করা সম্ভব।
উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা : উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার কাজে অনেক গবেষণাপত্র নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে হয়। কিন্তু এগুলো ভিন্ন ভিন্ন ওয়েবসাইটে থাকায় এবং অধিকাংশই পেইড হওয়ায় পড়া কষ্টকর। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কেবল বিষয়ের নাম জানালে ইন্টারনেটের দুনিয়ায় উন্মুক্ত সব গবেষণাপত্র সংগ্রহ করে দেয়।
স্বাস্থ্যসেবা : হৃদরোগসহ ডিমেনশিয়া, মাল্টিপল স্কলেরোসিস, পারকিনসনস, আলঝেইমার; এমনকি সিজোফ্রেনিয়ার মতো রোগও প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা যায় এ প্রযুক্তির মাধ্যমে।
মিটিং সামারি : জুম, মিটসহ যেকোনো অনলাইন মিটিংয়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে নোট করে রাখতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে মিটিং সামারি তৈরি এবং তা সংশ্লিষ্টজনকে মেইল করার সুবিধাও মিলছে এখন।
মার্কেটিং : কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ইউজার ও কাস্টমার এক্সপেরিয়েন্স, প্রোডাক্ট, মার্কেটিং ইত্যাদি অ্যানালাইসিসের কাজগুলো বাড়তি খাটুনি ছাড়াই করে ফেলা যায়।
কণ্ঠ ও সংগীত পৃথক করা : বিভিন্ন গান, ক্লিপের টিউন কিংবা ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ভালো লাগে অনেকের। কিন্তু সেগুলোর সঙ্গে কারও না কারও কণ্ঠ জড়িয়ে থাকে বলে তা করা সম্ভব হয় না। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে অডিও ক্লিপের মিউজিক আর ভয়েস সহজেই আলাদা করা যায়।
প্রোফাইল তৈরি : প্রফেশনাল জীবনে একটি সাজানো লিংকডইন প্রোফাইলের বিকল্প নেই। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে লিংকডইনের জন্য কনটেন্ট তৈরি, শিডিউল অনুযায়ী তা পোস্ট এবং যোগাযোগ বাড়াতে সহায়তা করে।
সফটওয়্যার ডেভেলপ : সফটওয়্যার ডেভেলপারদের জন্য কোড লেখা একটি জরুরি কাজ। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে প্রয়োজনমতো নির্দেশনা দিলে কোড লেখার কাজটি সে নিজেই করতে থাকে।
ডিজাইন : কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে ডিজাইনের দক্ষতা ছাড়াই শুধু কয়েক লাইন লিখিত নির্দেশনার মাধ্যমে অসাধারণ সব ডিজাইন করা যায়।
কপিরাইট ফ্রি মিউজিক : কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে শর্টস, রিলস ও ভিডিওর জন্য চাইলেই নিত্যনতুন মিউজিক বানানো সম্ভব। বানানো মিউজিক ব্যবহারে কপিরাইটের ঝামেলাও নেই। এসব ছাড়াও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে গল্প বা ব্লগ লেখা যায়, ভার্চুয়াল ক্যারেক্টার তৈরি করা যায়। চাইলে পডকাস্ট ও ভিডিওর অডিও থেকে নয়েজ দূর করা কিংবা সাউন্ড ক্লিয়ার করতেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্য নেওয়া যায়।
ভার্চুয়ালে বাস্তব পৃথিবী
মেটাভার্স একটি ভার্চুয়াল পরিবেশ। যেখানে প্রবেশ করে পরস্পর সংযুক্ত ভার্চুয়াল সমাজ থাকবে। মানুষ পরিচিতদের সঙ্গে দেখা করবে, কাজ করবে, খেলবে। মেটাভার্স চলবে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ও অন্যান্য প্রযুক্তির সাহায্যে। এসব কাজ তারা ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হেডসেট, অগমেন্টেড রিয়েলিটি চশমা, স্মার্টফোন অ্যাপ কিংবা অন্যান্য ডিভাইসের মাধ্যমে করবে। কম্পিউটারের সামনে বসে না থেকে ভিআর হেডসেট লাগিয়েই প্রিয় ওয়েবসাইটগুলোতে ঘুরে বেড়ানো যাবে। মেটাভার্সে অনলাইন জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্র, যেমন- কেনাকাটা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমও যুক্ত হবে। ভার্চুয়াল কনসার্টে যাওয়া, অনলাইনে ঘুরতে যাওয়া, শিল্পকর্ম দেখা বা সৃষ্টি করা- সবই হবে মেটাভার্সের দুনিয়ায়। এ জগতে সহকর্মীদের স্রেফ ভিডিওকলে দেখেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে না; কর্মীরা ভার্চুয়াল অফিসেও যোগ দিতে পারবেন।
স্মার্ট জীবনের সহায়ক অ্যাপ
হাতে স্মার্টফোন থাকলেই জীবন এখন সহজ। আকর্ষণীয় কিছু অ্যাপ ব্যবহারের মাধ্যমে দৈনন্দিন জীবন সহজ ও সময় সাশ্রয়ী হচ্ছে। এমন অ্যাপের তালিকা দীর্ঘ। কয়েকটি হলো-
ফিলিপস হিউ : এটি লাইট চালু ও বন্ধ করে। অটোমেশন ও টাইমার তৈরি করে। টিভি ও সংগীতের সঙ্গে লাইট সিঙ্ক করে। স্মার্ট হোম সিকিউরিটি সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ করে।
লিস্টি : যাদের ভুলে যাওয়ার বাতিক রয়েছে, তাদের উপযোগী অ্যাপ এটি। লিস্টির ইন্টারফেসে মুভি, টিভি শো, বই, গেম, ছবির লিংক সুবিধামতো স্টোর করা যায়। এর পাশাপাশি আছে ডিফল্ট প্রাইভেসির সুবিধা।
মিন্ট : এটি ফ্রি সেবাদানকারী বাজেটিং অ্যাপ। যেখানে ব্যবহারকারী একাধিক ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট ডিজিটালি ম্যানেজ করতে পারেন। বাজেট ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি আর্থিক লেনদেনের হিসাব রাখার জন্য খরচ ও সঞ্চয় খাতগুলো ট্র্যাক করে মিন্ট।
হচ্ছে ভার্চুয়াল লেনদেন
সাধারণত অনলাইন গেমের প্রেক্ষাপটে ভার্চুয়াল পণ্য বিনিময় করা হয়। ভার্চুয়াল অর্থনীতিতে প্রয়োজনের চেয়ে বিনোদনের জন্য প্রবেশ করে অনেকে। তবে কিছু লোক প্রকৃত অর্থনৈতিক সুবিধার জন্য ভার্চুয়াল অর্থনীতির সঙ্গে যোগাযোগ করে। ভার্চুয়াল লেনদেনের কয়েকটি হলো-
ক্রিপ্টোকারেন্সি : ক্রিপ্টোকারেন্সি হলো একটি ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম। যেখানে ব্যাংক ট্রানজেকশন ভেরিফাই করে না। এটি পিয়ার-টু-পিয়ার সিস্টেম। যার মাধ্যমে ইউজাররা যে কোনো সময় যে কাউকে অর্থ দিতে পারে। এতে ইউজারদের ফিজিক্যালরূপে কারেন্সি সঙ্গে রাখতে বা বিনিময়ের দরকার হয় না।
বিটকয়েন : বিটকয়েন ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি প্রথম ও সবচেয়ে বিখ্যাত ক্রিপ্টোকারেন্সি।
ইথেরিয়াম : বিটকয়েনের পর সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রিপ্টোকারেন্সি হলো ইথেরিয়াম; যা ব্লকচেইনের ওপর বেস করে তৈরি। লাইটকয়েন : এটি জনপ্রিয় ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলোর একটি। এর ইনোভেশন, ফাস্ট পেমেন্ট ও ট্রানজেকশন প্রসেসের জন্য পরিচিত।
রিপল : এটি ডিস্ট্রিবিউটেড লেজার সিস্টেম; যা ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। শুধু ক্রিপ্টোকারেন্সি নয়, বিভিন্ন ধরনের ট্রানজেকশন ট্র্যাক করতে ব্যবহৃত হয়। রিপল-এর ডেভেলপার কোম্পানি বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করে।
ঘরে বসেই অফিস-ব্যবসা
অফিসে বসে কাজ না করে যে কোনো প্রযুক্তির মাধ্যমে ঘরে বসে কাজ করার নাম ভার্চুয়াল অফিস। এর উপযোগী কয়েকটি অ্যাপমাধ্যম রয়েছে। যেমন-
জুম ক্লাউড মিটিং : সংক্ষেপে একে জুম বলে। এটি মালিকানাধীন একটি ভিডিও টেলি-কনফারেন্সিং সফটওয়্যার প্রোগ্রাম। যা জুম ভিডিও কমিউনিকেশনস ও গুগল মিট দ্বারা তৈরি। ফ্রি পরিষেবার আওতায় ১৫০ জন অংশগ্রহণকারী একযোগে ৪০ মিনিট সময় কনফারেন্সিং সুবিধা পায়।
সামাজিক মাধ্যমের অ্যাপ : তথ্য প্রদানের জন্য নিজস্ব ফেসবুক পেজ ও গ্রুপ রয়েছে। এখানে বিভিন্ন ধরনের আলাপ-আলোচনা ও ভার্চুয়াল অফিস করা যায়। এ ছাড়া ই-মেইলের মাধ্যমে সহজেই একে অন্যের সঙ্গে প্রয়োজনীয় তথ্য, গবেষণাপত্র, রিপোর্ট ইত্যাদি শেয়ার করা যায়। পাশাপাশি রয়েছে টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, লিংকডইন, হোয়াটসঅ্যাপ। এগুলোর মাধ্যমেও ভার্চুয়াল অফিসের অনেক কাজ সম্পন্ন করা যায়।
ফ্যাক্ট চেকিং
অনলাইনে ভুয়া খবরের ছড়াছড়ি। কোনো তথ্য ঠিক রয়েছে কিনা সেটাই যাচাই-বাছাই করে ফ্যাক্ট চেকিংয়ে দক্ষ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। ফ্যাক্ট চেকাররা যখন ফ্যাক্ট চেক করে কোনো প্রচারিত তথ্য মিথ্যা, বিকৃত কিংবা বিভ্রান্তিমূলক এমন প্রমাণ পান, তখন সেটা তারা একটা প্রতিবেদন আকারে তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেন। সেখানে তারা প্রমাণ দেন, কেন সে তথ্যটি মিথ্যা, বিকৃত কিংবা বিভ্রান্তিমূলক। কোনো তথ্যকে মিথ্যা, বিকৃত কিংবা বিভ্রান্তিকর আখ্যা দেওয়ার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নিয়ম আছে।
অত্যাধুনিক ইন্টারনেট
তথ্য, গবেষণা, বিনোদন, সামাজিক যোগাযোগ, ব্যবসা- সব ক্ষেত্রেই ইন্টারনেট এখন সমৃদ্ধ প্ল্যাটফর্ম। ফাইভ জি গতির ইন্টারনেট এখন মোবাইলেই মিলছে। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে স্পেসএক্সের ইন্টারনেট পাওয়া যাচ্ছে দুর্গম অঞ্চলেও। বই, খেলা, গান, চলচ্চিত্রসহ অনেক বিনোদনের উপাদান ইন্টারনেটের কল্যাণে সহজলভ্য। ইন্টারনেট মহাবিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানাতেও ইতিবাচক মাধ্যম। দৈনন্দিন কাজকর্ম, অফিশিয়াল কাজ, অনলাইন নিউজ, আবহাওয়ার পূর্বাভাস, কেনাকাটা ও অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থা ইত্যাদি বিষয়ে আমরা প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল। শিশু, তরুণ, যুবক, প্রাপ্তবয়স্ক, বৃদ্ধ- সবাই এখন ইন্টারনেট ব্যবহার করছে।
অনলাইন গেমিংয়ে আয়
অনলাইনে ভিডিও গেম খেলে লাখ লাখ ডলার আয় করছেন অনেকে।
প্রাইজমানি : দেশ-বিদেশে প্রতিনিয়ত আয়োজিত হচ্ছে গেমিং প্রতিযোগিতা। অনলাইন-অফলাইন দুই ধরনের প্রতিযোগিতায় থাকে বড় অঙ্কের প্রাইজমানি। টুর্নামেন্টগুলোতে ভালো আয় করেন গেমাররা। স্পন্সর : প্রতিযোগিতাগুলোতে ভালো করলে জোটে স্পন্সর। নির্দিষ্ট সময়ের জন্য স্পন্সরশিপের চুক্তিতে আবদ্ধ হয়ে অনেক গেমার ভালো অঙ্কের টাকা আয় করেন।
চাকরিজীবী : মাসিক বেতনের বিনিময়ে কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েও খেলেন অনেক গেমার। সেই প্রতিষ্ঠানের হয়ে বিভিন্ন টুর্নামেন্টে অংশ নেন তারা।
স্ট্রিমিং : ইউটিউবে খেলা সরাসরি সম্প্রচারের মাধ্যমে আয় করছেন অনেকে। মনিটাইজেশন চালু হওয়ার পর শুরু হয় আয়।
টুইচ : টুইচ এমন সাইট, যা শুধু গেম স্ট্রিমিংয়ের জন্যই তৈরি। এ প্ল্যাটফরমে গেমের ভিডিও স্ট্রিম করে আয় করছেন অনেকে।
ফেসবুক : ফেসবুকে গেম স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে আয়ের সুযোগ রয়েছে। ভিডিওতে আসা বিজ্ঞাপন থেকে যেমন আয় হয়, তেমন রয়েছে ভক্ত কিংবা অনুসারীদের থেকে অনুদান পাওয়ার সুযোগ। অন্যান্য দেশে ইউটিউব ও টুইচ স্ট্রিমিং বেশি জনপ্রিয় হলেও বাংলাদেশে ফেসবুক স্ট্রিমিং এগিয়ে আছে।
সাইবার নিরাপত্তায় বিনিয়োগ
প্রযুক্তির এত এত সুযোগসুবিধার পরও রয়েছে সাইবার ঝুঁকি। প্রতিবছর সারা বিশ্বে বিভিন্ন সংস্থা সাইবার নিরাপত্তার জন্য কোটি কোটি ডলার বিনিয়োগ করছেন। গবেষণা সংস্থা ওভাম সম্প্রতি এক তথ্যে জানিয়েছে, প্রতিনিয়ত সাইবার নিরাপত্তার বিষয়গুলোতে কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সাইবার হামলা থেকে বাঁচতে বিভিন্ন ধরনের টুলস তৈরি, উন্নত প্রযুক্তি-সুবিধা এবং বিভিন্ন সময় অনুযায়ী বাড়তি নিরাপত্তার বিষয়গুলোতে জোর দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো। ওভামের সর্বশেষ নিরাপত্তা তথ্য অনুযায়ী, তথ্যপ্রযুক্তি নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন সংস্থা একে অপরকে সহায়তায় এগিয়ে আসছে। পুরনো হামলাগুলোকে বিশ্লেষণ করে নতুনভাবে আর কী ধরনের হামলা হতে পারে সে বিষয়টি নিয়েও কাজ করছেন সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা।
রোবট করে দিচ্ছে সব কাজ
রোবট কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এক ধরনের যন্ত্র; যা কম্পিউটারের দেওয়া প্রোগ্রাম বা নির্দেশে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রয়োজনীয় কাজ সম্পাদন করে। যেকোনো জটিল কাজ খুব সহজে ও দ্রুত মানুষের হস্তক্ষেপ ছাড়া নির্ভুল করে দেয়। এটি মানুষের দৈনন্দিন জীবনের কাজকর্ম সহজ করেছে। রোবট শিল্পপ্রতিষ্ঠানে পণ্যের উৎপাদনশীলতা ও গুণগত মান বাড়াতে সাহায্য করে। নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করতে এর কোনো বিরক্তি বা ক্লান্তি আসে না। রোবট এমন সব পরিস্থিতিতেও কাজ করতে পারে, যা মানুষের পক্ষে অসম্ভব, অনিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ। এটি বর্তমানে বিভিন্ন হোটেল বা রেস্টুরেন্টে খাবার পরিবেশনসহ অন্যান্য কাজেও ব্যবহার করা হয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিড় কোটি কোটি মানুষের
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্রযুক্তির একটি দারুণ উদ্ভাবন; যা মানুষকে সারা পৃথিবীর সঙ্গে যুক্ত করেছে। বর্তমানে বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম রয়েছে। যেমন- ফেসবুক; এটি বন্ধুত্ব ও সম্পর্ক ধরে রাখার অন্যতম প্ল্যাটফর্ম। ইনস্টাগ্রাম; ছবি ও ভিডিও শেয়ারের জন্য বেশ জনপ্রিয়। টুইটার; তথ্য দ্রুত প্রচারের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। লিংকডইন; চাকরির যোগাযোগ ও নেটওয়ার্কিংয়ে খুবই কার্যকরী। ইউটিউব; ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম, যা শিক্ষার ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হয়। এসব মাধ্যম প্রতিনিয়ত আপডেট হচ্ছে। যোগ করছে নতুন নতুন ফিচার। তবে এগুলো শুধু যোগাযোগের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বিভিন্ন সেক্টরেও বিপ্লব ঘটিয়েছে। যেমন- ব্যবসার প্রচার-প্রসার, শিক্ষা খাতের অগ্রগতি, জনসচেতনতা-জনসেবা, আনন্দ-বিনোদন, তথ্যের আদান-প্রদান, সম্পর্কের উন্নয়ন, সৃজনশীলতা প্রকাশ, ভাষা ও সংস্কৃতি বিকাশে সহায়ক।
যুদ্ধ ও পরিবহন সেবায় ড্রোন
প্রযুক্তির ব্যবহারে যুক্ত হয়েছে যুদ্ধ ও পরিবহন সেবা। এর মূল কাজটি করে ড্রোন। এটি মানুষ ছাড়াই চলে। ভূমি থেকে একজন একে নিয়ন্ত্রণ করে। এটি বানানো হয়েছিল ছবি তোলার জন্য। কিন্তু বর্তমানে যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে। সামরিক কাজ থেকে শুরু করে প্যাকেজ বিতরণসহ, আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় ড্রোনের ব্যবহার দিন দিন বিস্তার লাভ করছে। সর্বপ্রথম ভিয়েতনাম যুদ্ধে বৃহৎ আকারে ড্রোন মোতায়েন করা হয়। ২০০১-এর সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য উন্নত দেশ ড্রোন ব্যবহারের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়িয়েছে। ড্রোনের সঙ্গে যুক্ত ক্যামেরার মাধ্যমে নির্দিষ্ট এলাকার চিত্র ধারণ করা যায়। বর্তমানে এ সুবিধা কাজে লাগিয়ে কৃষকরা বিশাল জমিতে ফসলের বৃদ্ধি ও রোগবালাই শনাক্ত করেন। সার-কীটনাশক ছিটানোর জন্য বিশেষ ধরনের ড্রোন বানানো হচ্ছে এখন। চিকিৎসা ক্ষেত্রেও ড্রোনের ব্যবহার শুরু হয়েছে। দরকারি ওষুধ-ইনজেকশন ও টিকা ডেলিভারি দেওয়া যাচ্ছে খুব সহজে। বিভিন্ন অবকাঠামো তৈরিতে ড্রোনের মাধ্যমে জরিপ চালানো হয়। বাণিজ্যিক কারখানা, পাহাড়ি রাস্তাঘাট, ব্রিজ ও বাঁধ তৈরির আগে ড্রোন উড়িয়ে সম্পূর্ণ প্লটের ম্যাপিং করা হচ্ছে।
ডিজিটাল পরিবহন সেবা
প্রযুক্তির উৎকর্ষ পড়েছে পরিবহন সেক্টরেও। বাজারে এসেছে অত্যাধুনিক সিস্টেমের ডিজিটাল পরিবহন সেবা। যেমন-
ইলেকট্রিক কার : সংক্ষেপে ই-কার বলা হয়। গাড়িটি পরিবেশবান্ধব। এর জ্বালানি খরচ নেই। সম্পূর্ণ ব্যাটারিচালিত। ইঞ্জিন মোটর। টেসলা কোম্পানি এটি আবিষ্কার করেছে। বিশ্বজুড়ে গাড়িপ্রেমীদের কাছে এটি পছন্দের শীর্ষে।
স্বয়ংক্রিয় গাড়ি : এটি স্বচালিত গাড়ি। মানুষের ইনপুট ছাড়াই চলতে সক্ষম। গাড়িটি পরিবেশ উপলব্ধি করতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ সিস্টেম পর্যবেক্ষণ করতে জানে।
কনটেন্ট ক্রিয়েটর ঘরে ঘরে
ডিজিটাল বিশ্বে ব্র্যান্ডের মূল্য কনটেন্টের ওপর নির্ভরশীল। একটি ভালো কনটেন্ট ব্র্যান্ডকে শুধু পরিচিত করে না, বরং মানুষের মনে স্থায়ী ছাপ ফেলে; দীর্ঘমেয়াদে সফলতার ভিত্তি গড়ে তোলে। কন্টেন্টের দুনিয়ায় জনপ্রিয় সামাজিকমাধ্যম হলো- ইউটিউব : ভিডিও প্ল্যাটফরম ইউটিউবে নাটক, সিনেমা, গান তো রয়েছেই- এখন ভিডিও বানাচ্ছেন অনেকেই। ঘরের রান্না, বাগান করা, ঘর গোছানো থেকে শুরু করে বিভিন্ন পণ্যের রিভিও, ভ্রমণ বর্ণনা- সবই মিলছে ইউটিউবে। আয়ও করছেন কনটেন্ট প্রস্তুতকারীরা।
টিকটক : এটি সংগীত ও ভিডিও প্ল্যাটফর্ম। সেপ্টেম্বর ২০১৬ সালে চালু হয়। এর প্রতিষ্ঠাতা চীনের ঝাং ইয়েমিং। বর্তমানে এটি এশিয়ার নেতৃস্থানীয় ছোট ভিডিওর প্ল্যাটফর্ম। অ্যাপটি ২০১৮ সালে ৫০০ মিলিয়ন মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারীর মাইলফলকে পৌঁছেছে।
রিলস : এটি সংক্ষিপ্ত ভিডিওর মাধ্যম। এর মাধ্যমে সৃজনশীল উপায়ে নিজেকে বা নিজের ব্র্যান্ডকে তুলে ধরা যায়। এটি নতুন ফলোয়ার ও গ্রাহকদের আকর্ষণের দুর্দান্ত উপায়। কারণ, ফলো করেন না এমন লোকজনও রিলস দেখতে পারেন। ছোট ভিডিওর সুযোগ দিতে ২০২১ সালে ফিচারটি চালু করে ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটা।
আছে অন্ধকার দুনিয়া
প্রযুক্তির অন্ধকার দুনিয়া ডার্ক ওয়েব। মূলত পরিচয় গোপন রেখে ইন্টারনেট ব্যবহারের কথা মাথায় রেখে শুরু হয়েছিল ডার্ক ওয়েব। কিন্তু ক্রমশ তা অপরাধমূলক কার্যকলাপের আখড়া হয়ে ওঠে। এখানে অস্ত্র, মাদক কেনাবেচা থেকে শুরু করে শিশু পর্নোগ্রাফি, তথ্য চুরি-বিক্রি- এমন কোনো অপরাধ নেই যা এখানে হয় না। এ জগৎ কতটা ভয়ংকর হতে পারে তার একটি নমুনা উপস্থাপন করা হচ্ছে। এখানে আছে রেড রুম, আছে লাইভ শো। প্রতিদিন কোনো না কোনো প্রাণী অথবা মানুষকে নির্মমভাবে অত্যাচার করে সেসব দেখানো হয়। কোনো দর্শক যদি ১ লাখ টাকা দিয়ে বলে যে, এ লোকটির চোখ দুটো তুলে নাও, তাহলে তাই লাইভ দেখানো হয়। লাইভ ধর্ষণ, এমনকি খুন করার দৃশ্যও রয়েছে ডার্ক ওয়েবে। ডার্ক ওয়েবে বেআইনি হ্যাকার ও অপরাধীদের আনাগোনা সর্বত্র। ফিশিংয়ের মাধ্যমে আপনার ওয়েবসাইট, মোবাইল, কম্পিউটার থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চুরির ঘটনা এখানে নিয়মিত ঘটে। ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে অপরাধীরা করে ব্ল্যাকমেইলিং। তারপর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে তুলে নেয় অর্থ। সঠিক তথ্য না জেনে ডার্ক ওয়েব ব্যবহার না করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। ডার্ক ওয়েবে অপরাধচক্রের ফাঁদে পড়লে ভয়াবহ বিপদের ঝুঁকি রয়েছে। এছাড়া বেআইনি ওয়েবসাইটে আনাগোনা থাকলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অপরাধী হিসেবে ধরা পড়বেন। তাই কৌতূহলবশতও ইন্টারনেটের এ অংশ ওপেন করা উচিত নয়।
দুশ্চিন্তার কারণ ভুয়া অডিও-ভিডিও
মানুষের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ডিপফেক প্রযুক্তি বা ডিপফেক ইন্টেলিজেন্সি। ডিপফেক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগিয়ে যে কোনো ভিডিও, ছবি এবং অডিও রেকর্ডিংয়ে বিশ্বাসযোগ্যভাবে মানুষের মুখমণ্ডল বা কণ্ঠস্বর নকল করতে পারে। সেলেব্রিটি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা ডিপফেক ইন্টেলিজেন্সি দিয়ে তৈরি নকল ভিডিও দ্বারা হেনস্তার শিকার হচ্ছেন। ভুয়া খবর ছড়ানো, বিভ্রান্তি তৈরি, ব্ল্যাকমেইলিং এবং রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে এ প্রযুক্তি। দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকা ২০২০ সালে ডিপফেক নিয়ে বিশদ রিপোর্ট প্রকাশ করে। রিপোর্ট বলছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্মাতা ডিপট্রেস অনলাইনে ১৫ হাজার ডিপফেক ভিডিওচিত্র খুঁজে পেয়েছেন যার বেশির ভাগই ছিল পর্নোগ্রাফি ভিডিওচিত্র। তার মধ্যে শতকরা ৯৯ ভাগ হলো নারী সেলিব্রিটিদের চেহারা পর্নো তারকাদের চেহারায় প্রতিস্থাপন করা। বাজফিড ভিডিওর ইউটিউব চ্যানেল থেকে ২০১৮ সালে বারাক ওবামার ভিডিওচিত্র প্রকাশ করা হয়। যেখানে দেখা যায়, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একজন পরিপূর্ণ বোকা বা অযোগ্য ব্যক্তি বলেন। ওটা মূলত ডিপফেক ভিডিও ছিল।