সরিষা, লিচু, কালোজিরা, মিষ্টি কুমড়া থেকে মৌবক্স বসিয়ে মধু আহরণ করা গেলেও বরই বাগান থেকে মধু সংগ্রহ করে তাক লাগিয়েছেন মৌ-খামারী মোসাদ্দেক হোসেন। বরই বাগানে মৌবক্স বসালে মৌমাছির গ্রোথ ভালো, মৌ-কলনীসমূহের সুরক্ষা ও বিকাশে বরই ফুল ভূমিকা রাখে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ভালো মধুও পাওয়া যায়।
তিনি বরই বাগানে ৩০টি মৌবক্স থেকে ১৫০ কেজি বরই ফুলের মধু আশা করছেন। যারা বাজার মূল্য প্রতি কেজি ৫০০-৬০০ টাকা। দিনাজপুর সদরের দশমাইল এলাকায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, দিনাজপুরের তেল জাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের সহযোগিতায় দিনাজপুর হর্টিকালচার সেন্টারে বসানো হয়েছে এই মৌবক্স।
দিনাজপুরের বিভিন্ন এলাকায় ছোট বড় অনেক বরই বাগানে বিভিন্ন জাতের বরই চাষ করছেন চাষীরা। বরই বাগানে সেপ্টেম্বরের শেষ থেকে অক্টোবর জুড়ে বর্ষা পরবর্তী শরৎ মৌসুমে অসংখ্য ফুল আসে। অ্যাপিস ম্যালিফেরা প্রজাতির মৌমাছিকে বক্সে পালন করে মৌ-পালন করছেন আধুনিক মৌ-খামারীরা। তেমনই একজন মৌ-পালক মোসাদ্দেক হোসেন। বছরে মধু উৎপাদন করেন প্রায় ৩ টন। সরিষা, লিচু, কালোজিরা, মিষ্টি কুমড়া, খলিশা থেকে মধু আহরণ করলেও এবার তিনি মধু উৎপাদনে বরই বাগানে বসিয়েছে মৌ-বক্স। অতীতে মৌ-খামারীর মৌমাছিরা বরই ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করতে না পারলেও তিনি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি এবং উদ্ভিদতাত্ত্বিক গবেষণার মাধ্যমে বরই ফুলের মধু পেয়েছেন। বরই ফুল থেকে মৌমাছি মধু আহরণের ফলে ফুলে ফুলে পরাগায়ন হয় এবং শতকরা ২০-৩০ ভাগ বেশি ফলনও হয়। একদিকে মধু সংগ্রহ করে লাভবান অন্যদিকে মৌ মাছির মাধ্যমে ফুলে ফুলে পরাগায়ন ঘটায় বরই বাগানের ভাল ফলনের আশা। তাই বরই বাগানে উভয়ই লাভবান হচ্ছেন।
মৌ-খামারী মোসাদ্দেক হোসেন জানান, সাধারণত অ্যাপিস ম্যালিফেরা বরই ফুলের নেক্টার সংগ্রহ করে না। কিন্তু আমি বরই ফুলের পাতা ও ফুলের নির্যাস করে তাদেরকে ফিডিং দিয়ে অভ্যাস করিয়েছি। তারা সে ঘ্রাণের প্রতি অভ্যস্ত হওয়ায় মৌ-বক্স স্থাপনের পর মৌমাছিরা ফুল থেকে নেক্টার সংগ্রহ করছে। ফলে বরই বাগানে পরাগায়ন বাড়ায় উৎপাদন আশানুরূপ আকাঙ্খা বরই চাষীরা। উপরন্ত মধু শিল্পে মিলবে সুস্বাদু বরই মধু।
মৌ-পালক মোসাদ্দেক হোসেন জানান, মধু উৎপাদিত হওয়ার জন্য বরই বাগানে ৩০টি মৌ-বক্স বসানো হয়েছে। বরই বাগানে মৌমাছি নিয়ে যাওয়ায় আমার বর্ষা পরবর্তী খামার ব্যবস্থাপনায় খরচ বেঁচেছে। আবার ১৫০ কেজি মধু প্রাপ্তির প্রত্যাশা করছি যারা বাজার মূল্য প্রতি কেজি ৫০০-৬০০ টাকা।
তিনি আরও জানান, দিনাজপুর হর্টিকালচার সেন্টারে বসানো হয়েছে মৌবক্স। বর্ষা পরবর্তী সময়ে মৌ-কলনীসমূহের সুরক্ষা ও বিকাশে বরই ফুল ভূমিকা রাখে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে মধু উৎপাদন করা যায়। বরই মধু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গড়ে ওঠা বরই বাগানসমূহের কারণে বাণিজ্যিক উৎপাদনের আওতায় আসতে শুরু করেছে। বরই মধুর ঘ্রাণ ও মান অতুলনীয়।
দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মনিটরিং অফিসার গোলাম সারোয়ার জানান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় কৃষকদের মৌপালন সম্পৃক্তকরণের আওতায় স্থানীয় মৌখামার ‘মোসাদ্দেক বি ফার্ম’ এর কারিগরি সহযোগিতায় মৌখামার কার্যক্রম হর্টিকালচার সেন্টারে বসানো হয়েছে। সেখানে মৌমাছির গ্রোথ ভালো হচ্ছে। আশা করছি আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বরই ফুলে মধু পাওয়া যাবে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত