চাঁপাইনবাবগঞ্জে ভূগর্ভস্থ পানির তীব্র সংকটের আশঙ্কায় কৃষকদের ইরি ধান চাষে নিরুৎসাহিত করছে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-বিএমডিএ। এতে করে কৃষকদের মাঝে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ভূগর্ভস্থ পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে খাদ্য উৎপাদন এলাকা বরেন্দ্র অঞ্চলে এই সংকট দীর্ঘ হচ্ছে। এতে আগামীতে খাদ্য উদপাদনে চরম অনিশ্চয়তার শঙ্কা করছে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-বিএমডিএ।
সূত্রমতে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর, নাচোল ও গোমস্তাপুর উপজেলায় প্রতি বছর পানির স্তর দিন দিন নিচে নেমে যাচ্ছে। এই কারণে ওইসব এলাকায় আগামীতে ইরি ধান চাষে নিরুৎসাহিত করছে বিএমডিএ। এতে কৃষকদের মাঝে অসন্তোষ বিরাজ করলেও বাধ্য হয়ে অন্য ফসল উৎপাদনের প্রস্তুত নিচ্ছেন কৃষক। কৃষকরা বলছেন, বিএমডিএ’র এ সিদ্ধান্তে চালের চরম সঙ্কট দেখা দিতে পারে। আর বিএমডিএর দাবি-আগামী দিনে পানির ব্যবহার নিশ্চিত করতেই নেয়া হয়েছে এমন উদ্যোগ। এমনিতেই চাঁপাইনবাবগঞ্জের বরেন্দ্র এলাকায় মাসখানেক ধরেই চলছে আমন ধান ঘরে তোলার কাজ। অনেক কৃষক আবার ধান ঘরে তুলে জমি প্রস্তুত করছিলেন ইরি ধান চাষ করার জন্য। কিন্তু হঠাৎ করেই বিএমডিএ সিদ্ধান্ত নিয়ে ইরি ধান চাষ না করতে ডিপের অপারেটর ও সংশ্লিষ্ট কৃষকদের মাঝে লিফলেট বিতরণ করছেন। এমনকি নির্দেশ অমান্য করে ধান চাষ করলে বেঁধে দেয়া সময়ের বেশি বিদ্যুৎ না দেওয়ারও ঘোষণা দিয়েছে তারা। ফলে কৃষকরা বাধ্য হয়েই বিএমডিএ’র নির্দেশ মেনে মৌসুমি ফসল গম, মসুর ডাল ও ভূট্টা চাষে প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
সদর উপজেলার ঝিলিম এলাকার কৃষক এনামুল বলেন, ধান ছাড়া লাভজনক তেমন অন্য কোনো ফসল উৎপাদন হয় না বরেন্দ্র অঞ্চলে। তাই বছরে তিনবার ধান চাষ করেন তিনিসহ অন্য কৃষকরা। আর এতেই সংসার চলে তাদের। কিন্তু পানির সঙ্কট বলে বিএমডিএ এবার ইরি ধান চাষ করতে নিষেধ করেছে। একই এলাকার আরেক কৃষক আব্দুল কাদের বলেন, মৌসুমি ফসল উৎপাদনে খরচ ও খাটনি দুটোই বেশি। তারপরেও কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন হয় না। এতে লোকসান গুনতে হয় তাদের। ফলে বিএমডিএ’র এমন সিদ্ধান্তে কৃষকরা হতাশায় ভুগছেন।
অন্যদিকে আলম নামে আরেক কৃষক বলেন, লাখ লাখ টাকা খরচ করে সোলার সিস্টেম পাতকুয়া নির্মাণ করলেও এর কোন সুফল পাচ্ছেন না কৃষকরা। তার মতে, লুটপাট করতেই বাস্তবায়ন করা হয়েছে কোটি কোটি টাকার এই পাতকুয়া। অথচ চাহিদা অনুযায়ী ডিপ টিউবওয়েল বসানো হলে পানির সঙ্কট হত না।
অপরদিকে বিএমডিএ’র ডিপ টিউবওয়েল অপারেটর সাইদুর রহমান বলেন, ধান চাষ কমানোর বার্তা দিয়ে বিএমডির নির্দেশ দিয়েছে মৌসুমি ফসলে সেচ দিতে। তার দাবি, মৗসুমি ফসল উৎপাদন করলে শিগগিরই দেখা দিবে ধান-চালের সঙ্কট। তবে পানির সঙ্কট নিরসনের জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নজর দিতে তাগিদ দেন।
এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিএমডিএ'র সহকারি প্রকৌশলী মো. মুসাইদ মাসরুর বলেন, দিন দিন ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। তাই পানি ধরে রাখতে এবং আগামীতে সেচ নিশ্চিত করতে ভূগর্ভস্থ পানির উপর চাপ কমানোর জন্য নেয়া হয়েছে এমন ব্যবস্থা। তার দাবি মৌসুমি ফসল হিসেবে বিভিন্ন জাতের ডাল, শাক সবজি, আলু উৎপাদন হয় অল্প সেচে। তাই কৃষকদের মৌসুমি ফসল উৎপাদনে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল