বৃহস্পতিবার, ১৭ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা
ধর্মতত্ত্ব

হজ যারা বারবার করেন তাদের জন্য

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

হজ যারা বারবার করেন তাদের জন্য

ইসলামের পাঁচ খুঁটির অন্যতম পবিত্র হজ। হজের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর ঘর ও বিভিন্ন নিদর্শন দেখে থাকে। এতে করে বান্দার মনে আল্লাহর ভয় ও ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। অন্যান্য দেশ ও সংস্কৃতির লোকদের সঙ্গে মিশে বিচিত্র অভিজ্ঞতা অর্জনের মাধ্যমে সুন্দর জীবন ও দেশ গড়ার শিক্ষা দেয় হজ। হজের ঘোষণা দিয়ে আল্লাহতায়ালা বলেন, তোমাদের মধ্যে যাদের আল্লাহপাক নিজ অনুগ্রহে সম্পদ-সামর্থ্য দিয়েছেন তাদের জন্য হজ করা একান্তই কর্তব্য। এটা আল্লাহর অধিকার। (সূরা আলে ইমরান : ৯৭)। হজের প্রতিদান সম্পর্কে রসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি হজ করল, আল্লাহতায়ালা তার আগের জীবনের সব গুনাহ মাফ করে দেবেন। (তিরমিজি)। অন্য হাদিসে রসুল (সা.) বলেছেন, কবুল হজের বিনিময় শুধুই জান্নাত। (মুসলিম)।

হজ জীবনে একবার ফরজ। কারণ এটি খুবই ব্যয়সাধ্য ইবাদত। শারীরিক শক্তি-সামর্থ্য এবং আর্থিক সচ্ছলতার পর অতিরিক্ত অর্থ হলেই হজ ফরজ হয়। ফরজ হজ পালনের পর কেউ চাইলে নফল হজও আদায় করতে পারবেন। নফল হজের কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা নেই। যতবার খুশি ততবার হজ করা যাবে। তবে নফল হজ উত্তম নাকি দরিদ্রদের সহযোগিতা এবং উন্নয়নমূলক কাজে দান-খয়রাত-অর্থ বিনিয়োগ উত্তম এ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মাঝে মতবিরোধ আছে। একদল বিশেষজ্ঞ বলেন, সামর্থ্য থাকলে বারবার নফল হজ করতে কোনো দোষ নেই। বান্দার মনে হজের শিক্ষা থাকলে এমনিতেই দেশ-সমাজ ও ব্যক্তি জীবনের উন্নতি ও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগবে। তাই একাধিকবার নফল হজ করাই ভালো।

আরেক দল বিশেষজ্ঞ বলেন, যেহেতু হজে বড় অঙ্কের অর্থ গুনতে হয় তাই আল্লাহতায়ালা এবং নবীজী (সা.) জীবনে একবারই হজ ফরজ করেছেন। কারণ একবার হজ করলেই হজের উদ্দেশ্য অর্জন হয়ে যাবে। বারবার হজ করার প্রয়োজন নেই। তাছাড়া যে দেশের মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে, ওই দেশের ধনীদের জন্য তো একাধিকবার হজের চেয়ে দারিদ্র্য, ক্ষুধা দূর করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই নফল হজে না গিয়ে উন্নয়নমূলক কাজে অর্থ বিনিয়োগ করা বেশি সওয়াবের কাজ।

আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে দ্বিতীয় অভিমতটিই যুক্তিযুক্ত। এ দেশের পঁচাশি শতাংশ মানুষ এখনো দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিত্সা, শিক্ষার মতো মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত তারা। এদেশের অর্ধেকের বেশি জনগণ এখনো শিক্ষার আলো পায়নি। ধর্ম সম্পর্কে সঠিক শিক্ষাও নেই মানুষের মনে। তাই তো এ দেশটি হয়ে উঠেছে অন্যায়-অনিয়ম, দুর্নীতির দেশ। ধর্ষণ, হত্যা, লুণ্ঠন ও চাঁদাবাজির দেশ। অপরদিকে দিন দিন বেকার ও কর্মহীন মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলছে। ভেঙে যাচ্ছে ঘর, ঘটছে আত্মহত্যার মতো জঘন্য ঘটনা। এতসব প্রতিকূলতা কাটিয়ে ওঠতে হলে বিপুল পরিমাণ অর্থ ও সেবার প্রয়োজন। অর্থ ও সেবার মাধ্যমে এ দেশটিকে গড়ে তোলা যাবে সোনার বাংলাদেশ হিসেবে। তাই ধর্মদরদি ধনীদের উদ্দেশে বলছি, একবার হজ করে ফেললে প্রতিবছর হজে না গিয়ে ওই টাকা দিয়ে কোনো একজন দরিদ্রকে ছোটখাটো ব্যবসা গড়ে দেন। ১০ জনকে ১০টা রিকশা কিনে দেন। ৫০ জনকে বাদাম, ঝালমুড়ি, ফুসকা, চটপটি বিক্রির মতো ক্ষুদ্র লাভজনক ব্যবসায় লাগিয়ে দিন। আপনার মতো যদি ১০ জন বা ১০০ জন ধর্মদরদি এভাবে এগিয়ে আসেন তবে খুব দ্রুতই সোনার বাংলাদেশ সোনার মদিনার মতো সুখী-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে ইনশাআল্লাহ।

লেখক : বিশিষ্ট মুফাসসিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।

www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর