দেশের ৫৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা ছুটি নিয়ে বিদেশে রয়েছেন। তারা সবাই এ ছুটি ভোগ করছেন পূর্ণ বেতনে। এদের কেউ দুই, কেউ চার বছর মেয়াদের ছুটিতে রয়েছেন। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষকের ১৫ শতাংশই ছুটিতে। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে এ সংখ্যা ৪০ শতাংশের বেশি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এক্ষেত্রে সবার ওপরে। দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা অধিকাংশই নামমাত্র বেতনে লেখাপড়া করেছেন রাষ্ট্র পরিচালিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। অর্থাৎ জনগণের টাকায় উচ্চশিক্ষিত হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি পাওয়ার পর আরও উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়ার সুযোগ অর্জন করেছেন। এদের অনেকেই সব নিয়মকানুনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বিদেশে সময়ক্ষেপণ করেন। কেউ কেউ দেশে ফিরে কিছুদিন থেকে আবার চলে যান; অনেকে দেশেই ফেরেন না। শিক্ষকরা ছুটিতে গিয়ে না ফিরলে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত তাদের কাছ থেকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ আদায় করা। কিন্তু প্রশাসনিক ব্যর্থতা এবং বিশ্ববিদ্যালয় নীতিমালার দুর্বলতার কারণে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা হয় না। পার পেয়ে যান শিক্ষকরা। মেধাবী সন্তানদের সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয় দেশ, সমাজ এবং পরবর্তী প্রজন্ম। উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত বিশ্বে মেধা পাচার একটি নৈমিত্তিক ঘটনা। শিক্ষিত মেধাবীদের একটা অংশ যুগ যুগ ধরেই বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। উন্নত জীবনের মোহে থেকে যাচ্ছেন সেখানেই। দেশ থেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে যাচ্ছেন কিংবা বিদেশেই গড়ে তুলছেন সংসার। দেশ ও জাতির প্রতি তাদের যে কৃতজ্ঞতার দায়, তা উপেক্ষা করেছেন। এদের অনেকে বিদেশে বসে নিজের দেশের স্বার্থ ও মর্যাদার জন্য ক্ষতিকর অপপ্রচারণায় সক্রিয় হন। হয়ে ওঠেন ‘ঘরের শত্রু বিভীষণ’। বিশ্ববিদ্যালয় বিধি-বিধানে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন এনে শিক্ষকদের শিক্ষা-ছুটির ক্ষেত্রে শর্ত ও কঠোরতা আরোপ করা যেতে পারে। আমরা চাই- মেধার এই পাচার, অপচয়, অপব্যবহার বন্ধ হোক।