হুজুগে জাতি হিসেবে বাঙালির পরিচয় সুবিদিত। জুলাই গণ অভ্যুত্থানে কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতনের পর সামাজিক অস্থিরতায় যে মচ্ছব চলছে তা যেন আমাদের আত্মপরিচিতির নেতিবাচক দিকেরই প্রতিফলন। ৫ আগস্ট জনগণের ঘাড়ে কল্পকথার দৈত্যের মতো চেপে বসা ভূত উধাওয়ের পর ঘটছে একের পর এক অঘটন। পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগ নিছে অপরাধীরা। অবাধে চলছে রাজনৈতিক সহিংসতার পাশাপাশি দিনদুপুরে নারী হেনস্তা। বাংলাদেশ প্রতিদিনের শীর্ষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলছে নীরব চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্ব। নানা অজুহাতে তৈরি হচ্ছে শ্রমিক অসন্তোষ। শান্ত পাহাড় হঠাৎ করেই অশান্ত হয়ে উঠছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে গণপিটুনিতে নির্মম মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। সাম্প্রদায়িক উসকানি দিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা চালাচ্ছে দুর্বৃত্তরা। একটি মহল বিরামহীনভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে পরিস্থিতি অশান্ত করতে। পার্শ্ববর্তী একটি দেশের উসকানি তাতে ইন্ধন জোগাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, পতিত স্বৈরাচার সরকার সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে পালিয়ে গেলেও তার অনুচরেরা রয়ে গেছে। তারা এখনো সক্রিয়। সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় হরহামেশাই ঘটছে ছিনতাই ও চাঁদাবাজি। ভুক্তভোগীরা থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করারও সাহস পাচ্ছেন না নিরাপত্তাহীনতার ভয়ে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় দুর্বৃত্তদের অনেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও অঙ্গসংগঠনের কর্র্মী বলেও নিজেদের জাহির করছে।
সামাজিক অস্থিরতা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার প্রত্যাশাকে বাধাগ্রস্ত করছে। অন্তর্বর্তী সরকারের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে এবং তা তারা নিজেরাও অকপটে স্বীকার করেন। তারা নির্বাচিত নন, কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্ব করেন না। তবে এ সরকারের সবাই সৎ ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত এবং তা তাদের মূলধন। তাদের পেছনে রয়েছে ছাত্র-জনতার সমর্থন। এ দুই মূলধন কাজে লাগিয়ে সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টির অপচেষ্টা রুখতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।