২৫ আগস্ট, ২০১৬ ১৩:৩৬

স্ত্রীর লাশ কাঁধে নিয়ে ১২ কিলোমিটার হাঁটলেন স্বামী

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

স্ত্রীর লাশ কাঁধে নিয়ে ১২ কিলোমিটার হাঁটলেন স্বামী

হাসপাতালকে অনুরোধ জানিয়েও সাড়া মেলেনি, তাই এক প্রকার বাধ্য হয়েই নিজের স্ত্রীর লাশ কাঁধে নিয়েই প্রায় ১২ কিলোমিটার পথ হেঁটে পাড়ি দিলেন ভারতের উড়িষ্যার কালাহান্দি জেলার আদিবাসী বাসিন্দা দানা মাঝি(৪৮)।

কালাহান্দি জেলার থুয়ামুল রামপুর ব্লকের মেলঘরা গ্রামের বাসিন্দা আমাঙ্গ দেবী (৪২)। টিবি (টিউবার কিউলেঅসিস) রোগে আক্রান্ত আমাঙ্গ দেবীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় মঙ্গলবার সকালের দিকে ভবানী পাটনার জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। বিকেলের দিকে সঙ্কটজনক হয়ে পড়েন তিনি, শেষে বুধবার দিবাগত রাত একটা নাগাদ মৃত্যু হয় তার। কিন্তু গাড়ি করে স্ত্রীর লাশ বাসায় নিয়ে যাওয়ার মতো আর্থিক সামর্থ্য ছিল না দানা মাঝির। এজন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে তিনি অনুরোধ জানান, একটি গাড়ি কিংবা অ্যাম্বুলেন্স-এর ব্যবস্থা করে দিতে।

কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দানার সেই অনুরোধে সাড়া না দেওয়ায় বুধবার দিনের আলো ফুটতেই নিজেই কাপড়ে মুড়িয়ে স্ত্রীর লাশ কাঁধে নিয়ে বাসার পথে হাঁটতে শুরু করেনে। দানার সঙ্গে ছিল তার তিন মেয়ের বড় মেয়ে সানাদেই মাঝি (১২)। সকাল সাড়ে নয়টা নাগাদ সাগাদা গ্রামের কয়েক বাসিন্দারা দেখতে পান দানা অতি কষ্টে টলমল পায়ে কাঁধে লাশ নিয়ে হাঁটছেন। তখনই তারা ছুটে আসেন দানাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে।

অনুষ্ঠান কভার করতে আসা স্থানীয় সাংবাদিক অজিত সিং জানান, ‘আমরা যখন দেখলাম খুব কষ্ট করে দানা স্ত্রীর লাশ কাঁধে করে নিয়ে হাঁটছেন, তখনই আমরা জেলা কালেক্টর এবং অন্যান্য প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বিষয়টি জানাই। কিন্তু কেউ সাহায্যের জন্য এগিয়ে না আসায় লানজিগরের বিধায়ককে জানাই। পরে তিনিই এক প্রতিনিধিকে পাঠিয়ে লাশ নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। পাশাপাশি লাশ সৎকারের জন্য দানাকে রেড ক্রশ তহবিল থেকে ১০ হাজার রুপি সাহায্য করা হয়’।

দানা জানান, ‘আমি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে একটি গাড়ির ব্যবস্থা করে দিতে অনুরোধ জানিয়েছিলাম। কিন্তু আমাকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসেনি। এরপরই ঠিক করলাম কাঁধে করে স্ত্রীর লাশ গ্রামের শ্মশানে নিয়ে যাবো’।

আশ্চর্যের বিষয় হল এই যে, উড়িষ্যা রাজ্য সরকারের মহাপ্রয়াণ প্রকল্প অনুযায়ী বিনামূল্যে লাশ বহন করার জন্য নিয়ম চালু থাকলেও দানার ক্ষেত্রে তা করা হয়নি। কালাহান্দি সদর হাসপাতালে অব্যবহৃত অবস্থায় একটি নতুন অ্যাম্বুলেন্স পড়ে থাকলেও তাকেও কাজে লাগানো হয়নি।

কালাহান্দি জেলার প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রজ কিশোর ব্রম্ম এই ঘটনায় দানার ওপরেই দোষ চাপিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদেরকে বিষয়টি না জানিয়ে তিনি স্ত্রীর লাশ নিয়ে যান’।

গণমাধ্যমে এই খবর ছড়িয়ে পড়ার পরই শোরগোল পড়ে যায়। উড়িষ্যার শাসক দল বিজু জনতা দলের সাংসদ কালিকেশ সিং দেও ট্যুইট করে জানান, ‘আমি ইতিমধ্যেই স্থানীয় মন্ত্রীকে বিষয়টি খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে কলেছি’।

কালাহান্দির জেলা কালেক্টর ব্রুন্দা ডি জানান, ‘আমরা এই ঘটনাটি জানার পরই অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করি। সরকারি প্রকল্পের অধীনে লাশ সৎকারের জন্য ওই পরিবারকে আর্থিক সহায়তা করার জন্যও জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে’।


বিডি-প্রতিদিন/২৫ আগস্ট, ২০১৬/মাহবুব

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর