ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের আজ মঙ্গলবার থেকে আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু হচ্ছে। ছাত্রী হলগুলোতে সংশ্লিষ্ট হলের অনাবাসিক এবং অন্যান্য ছাত্রী হলের আবাসিক ও অনাবাসিক প্রার্থীরা ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত
প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত নির্বাচনি প্রচারণা চালাতে পারবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে ডাকসু নির্বাচন ঘিরে এসব সিদ্ধান্ত জানান চিফ রিটার্নিং অফিসার জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন সামনে রেখে বড় কোনো আচরণবিধির লঙ্ঘন এখন পর্যন্ত হয়নি। এমনটি যেন ভবিষ্যতে না হয়, তা নিশ্চিত করতে কাজ চলমান রয়েছে। এ নিয়ে কেউ লিখিত দিলে আমরা বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা নেব।’
আজ সব ভিপি, জিএস, এজিএস প্রার্থীর সঙ্গে সিনেট হলে বেলা ১১টায় মিটিং করে আচরণবিধি নিয়ে বৈঠক করা হবে বলে জানান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী। রিটার্নিং কর্মকর্তার দেওয়া তথ্যমতে ২১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন। তবে কাদের মনোনয়ন বাতিল হবে সে তথ্য আজ জানানো হবে। ভোট প্রদানে জটিলতা এড়াতে হল কার্ড, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ড, লাইব্রেরি কার্ড বা পে ইন স্লিপ দিয়ে ভোট কেন্দ্রে ভোট দেওয়া যাবে।
যেসব ভোটার/শিক্ষার্থী ভোটার তালিকায় ছবি অপ্রদর্শিত রাখতে ইচ্ছুক, তাদের ২৭ আগস্টের মধ্যে চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করতে অনুরোধ করা হয়েছে। ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন ২০২৫-এর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ছিল। শিক্ষার্থীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে তা বন্ধ করা হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট হল ও দপ্তরসমূহের জন্য চূড়ান্ত ভোটার তালিকা উন্মুক্ত থাকবে। বিভিন্ন অভিযোগে বাতিল হওয়া মনোনয়নপত্রের ওপর আপিলের পর যাচাইবাছাই শেষে আবেদনকারী প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের আপিল নিষ্পত্তি ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগসমূহ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে গঠিত ট্রাইব্যুনাল কমিটির ২৪ আগস্টের সভায় নির্বাচনের প্রার্থী জুলিয়াস সিজার তালুকদার ও বায়েজিদ বোস্তামীকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকা এবং নিষিদ্ধ সংগঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কারণে ভোটার ও প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিষয়টি সিন্ডিকেটে প্রেরণ করা হয়েছে। অন্যদিকে আসাদুজ্জামান জিলানী ও মো. খায়রুল আলমের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ যথাযথভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় এবং অভিযোগপত্রে অভিযোগকারীর স্বাক্ষর না থাকায় তাদের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি বলে জানায় নির্বাচন কমিশন।
পাল্টাপাল্টি অভিযোগ : ডাকসু নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান গতকাল বিকালে মধুর ক্যানটিনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, ‘আমরা ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা সহনশীল রাজনীতির চর্চা চেয়েছি। কিন্তু আমাদের বিরুদ্ধে বারবার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।’ আবিদ বলেন, ‘আমরা আশঙ্কা করছি গুপ্তসংগঠন বা অন্যান্য সংগঠন আমাদের প্রার্থীদের রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে না পেরে প্রোপাগান্ডা চালাবে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনলাইন গ্রুপে প্রতিনিয়ত প্রোপাগান্ডা চালিয়ে যাচ্ছে।’ এসব গ্রুপ নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের কাছে দাবি জানান তিনি।
উমামা ফাতেমার বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ : রোকেয়া হলে নিয়ম ভঙ্গ করে মধ্যরাতে অবস্থান করায় ভিপি পদপ্রার্থী উমামা ফাতেমার বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান এ প্রসঙ্গে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘উমামা ফাতেমার রোকেয়া হলে প্রবেশের ফলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। উমামা ফাতেমা যদিও ক্ষমা চেয়েছেন, কিন্তু আইন অমান্য করে ক্ষমা চাইলেই তো হয় না। আশা করি নির্বাচন কমিশন এটি নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।’
এদিকে সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক পোস্টে দুঃখ প্রকাশ করেন উমামা ফাতেমা। ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘আমার রোকেয়া হলে প্রবেশকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন মহল থেকে কথা তোলা হচ্ছে। আমি কোনো নির্বাচনি প্রচার বা মিটিং করতে যাইনি। দীর্ঘদিনের মানসিক ধকলের কারণে মেন্টাল রিলিফের জন্য বান্ধবীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। আমি হলগেট ১০টায় বন্ধ হওয়ার আগেই হলে প্রবেশ করি। তাই রাত দেড়টায় আসার ব্যাপারে যে ভুয়া খবরটি ছড়ানো হচ্ছে তা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কেউ প্রমাণ করতে পারবে না আমি ভোট চেয়েছি। এ বিষয়ে আমি নিজেই রোকেয়া হলের প্রভোস্টের সঙ্গে দেখা করে একটি আবেদন দিয়েছি।’ তিনি বলেন, আমি নিয়মবহির্ভূতভাবে হলে প্রবেশ করেছি, তাই হল প্রশাসনের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছি।’