মঙ্গলবার, ৪ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

প্রবীণ তরিকুলের বিপরীতে তরুণ নাবিল

সাইফুল ইসলাম, যশোর

প্রবীণ তরিকুলের বিপরীতে তরুণ নাবিল

জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে যশোরের ছয়টি সংসদীয় (আসন-৮৫, ৮৬, ৮৭, ৮৮, ৮৯ ও ৯০) আসনে প্রধান দুই দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা তত্পরতা শুরু করেছেন। দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের পাশাপাশি তারা নেতা-কর্মীদের পক্ষে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

গত নির্বাচনে জেলার ছয়টি আসনই আওয়ামী লীগ দখলে নেয়। এবারও তাদের সব সংসদ সদস্য প্রার্থী হচ্ছেন। তবে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের প্রত্যেককেই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতে পারে। কারণ, সবগুলো আসনেই দলটির মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকা এবার বেশ দীর্ঘ। দলটির জেলা, এমনকি উপজেলা পর্যায়েও রয়েছে ব্যাপক দলাদলি। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের এটা মোকাবিলা করতে হবে। একইভাবে ছয়টি আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরাও তত্পরতা শুরু করেছেন। তবে জোটবদ্ধ নির্বাচন হলে অর্ধেক আসনই শরিকদের ছেড়ে দিতে পারে দলটি। আগের নির্বাচনগুলোতেও এটি দেখা গেছে। তবে আমজনতার মতে, যশোর-৩ আসনের লড়াই হবে জমজমাট। ওই আসনে বিএনপির প্রবীণ নেতা দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের সঙ্গে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগের তরুণ নেতা কাজী নাবিল আহমেদ এমপির।

যশোর-১ (শার্শা) : জেলার সীমান্তবর্তী শার্শা উপজেলা নিয়ে গঠিত যশোর-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শেখ আফিল উদ্দিন। এবারও তিনি দলের মনোনয়ন চাইবেন। তবে এ আসনে অপর সম্ভাবনাময় প্রার্থী বেনাপোল পৌরসভার মেয়র এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফুল আলম লিটন। তিনি নেতা-কর্মীদের পক্ষে টানছেন, চালিয়ে যাচ্ছেন গণসংযোগ। অন্যদিকে এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেতে চান যশোর শহর বিএনপির সভাপতি ও যশোর পৌরসভার সাবেক মেয়র মারুফুল ইসলাম। এ ছাড়া শার্শা উপজেলা বিএনপির সভাপতি খাইরুজ্জামান মধু, সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসান জহির ও কৃষক দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহসীন কবীরও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ওয়ান-ইলেভেনের পর দল থেকে বহিষ্কৃত বিএনপির সাবেক কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তিকে নির্বাচনের আগেই দলে ফিরিয়ে নেওয়া হতে পারে বলেও নেতা-কর্মীদের একাংশের মধ্যে আলোচনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে তিনিও এ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টা করতে পারেন। আবার এ আসনটি বরাবরই শরিক দল জামায়াতে ইসলামীকে ছেড়ে দেয় বিএনপি। সেক্ষেত্রে প্রার্থী হন জেলা জামায়াতের সাবেক আমির মাওলানা আজিজুর রহমান। বিএনপি যদি এবারও জামায়াতকে আসনটি ছেড়ে দেয় তবে মাওলানা আজিজুর রহমান ধানের শীষ প্রতীক বা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে লড়তে পারেন।

যশোর-২ (ঝিকরগাছা ও চৌগাছা) : জেলার আরও দুটি সীমান্তবর্তী উপজেলা ঝিকরগাছা ও চৌগাছা নিয়ে যশোর-২ আসন। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের মনিরুল ইসলাম। এবারও তিনি দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। এ আসনে দলীয় মনোনয়নের অপর দাবিদার সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। কয়েকবারের এমপি অধ্যাপক রফিক এলাকার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক পেতে তত্পরতা চালাচ্ছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাবেক সহসম্পাদক হাই কোর্টের অ্যাডভোকেট এবিএম আহসানুল হকও। বেশ কয়েক বছর ধরেই তিনি দলীয়  নেতা-কর্মী এবং জনগণের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন। অবদান রেখেছেন এলাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডেও। এ ছাড়া  ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ডা. নাসিরউদ্দিন, আনোয়ার হোসেন, চৌগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম হাবিবুর রহমান আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী। এ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন চাইবেন জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান খান। যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মিজান জেলা বিএনপিতে চৌগাছা উপজেলা দেখাশোনা করেন। সেই সূত্রে ওই এলাকার নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক রয়েছে। বিএনপির মনোনয়ন চাইবেন ঝিকরগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান সাবিরা নাজমুল মুন্নিও। তার স্বামী বিএনপি নেতা নাজমুল ইসলাম নিহত হওয়ার পর তিনি রাজনীতিতে আসেন এবং দলীয় মনোনয়ন নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তবে এ আসনটি ইতিপূর্বে জামায়াতকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।

যশোর-৩ (সদর) : যশোরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসন সদর-৩। এখান থেকেই নিয়ন্ত্রিত হয় পুরো জেলার রাজনীতি। এ আসনে বিএনপি থেকে নির্বাচন করেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রবীণ রাজনীতিক তরিকুল ইসলাম। বর্ষীয়ান এই নেতা আগামীতেও নির্বাচন করবেন বলে এলাকার নেতা-কর্মীরা বিশ্বাস করেন। তবে শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি নির্বাচন করতে না পারলে তার ছেলে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের নির্বাচন করার সম্ভাবনা আছে। এ ছাড়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু ও তরিকুল ইসলামের ভাতিজা যশোর শহর বিএনপির সভাপতি মারুফুল ইসলামও মনোনয়ন পাওয়ার প্রত্যাশা করছেন।

এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা কাজী নাবিল আহমেদ। তিনি এবারও দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন চাকলাদারও এ আসনে দলের মনোনয়ন পাওয়ার জন্য চেষ্টা করছেন। জাতীয় পার্টির মনোনয়ন চাইতে পারেন দলের কেন্দ্রীয় নেতা মাহবুব আলম বাচ্চু এবং জেলা সভাপতি শরিফুল ইসলাম সরু চৌধুরী।

যশোর-৪ (বাঘারপাড়া, অভয়নগর উপজেলা ও সদরের একাংশ) : সদর উপজেলার বসুন্দিয়া ইউনিয়ন এবং বাঘারপাড়া ও অভয়নগর উপজেলা নিয়ে গঠিত যশোর-৪ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য বাঘারপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রণজিৎ কুমার রায়। এবারও তিনি মনোনয়ন চাইবেন। দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে তার সঙ্গে আরও রয়েছেন সাবেক হুইপ শেখ আবদুল ওয়াহাব, নওয়াপাড়া পৌরসভার সাবেক মেয়র এনামুল হক বাবুল, কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সাবেক সহসম্পাদক এস এম আলমগীর হাসান রাজিব, রায়পুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মঞ্জুর রশিদ স্বপন ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য নাজমুল ইসলাম কাজল। বাঘারপাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য টি এস আইউব দলীয় মনোয়ন চাইবেন। এ ছাড়া এ আসন থেকে অভয়নগর থানা বিএনপির সভাপতি মতিয়ার রহমান ফরাজীও দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে প্রচার রয়েছে।

যশোর-৫ (মনিরামপুর) : এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা স্বপন ভট্টাচার্য। গত নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে দলীয় প্রার্থী খান টিপু সুলতানকে তিনি পরাজিত করেন। পরে তিনি দল থেকে বহিষ্কৃত হন। সম্প্রতি তাকে দলে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ফলে এবারও যে তিনি দলীয় মনোনয়ন চাইবেন এটা অনেকটাই নিশ্চিত। এ ছাড়া দলীয় মনোনয়ন চাইবেন এ আসনের কয়েকবারের এমপি খান টিপু সুলতান, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সহসম্পাদক, ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা কামরুল হাসান বারী এবং আবদুল মজিদ। যশোর-১ ও যশোর-২ এর মতো যশোর-৫ আসনটিও বিএনপি বরাবরই শরিক দলের জন্য ছেড়ে দেয়। এবার শরিকদের জন্য ছাড়লে এ আসন থেকে প্রার্থী হতে পারেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাস। তিনি এর আগে এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে এবার স্থানীয় বিএনপি নেতারা এ আসনটি শরিকদের ছাড়তে চাচ্ছেন না। এবার এ আসন থেকে দলীয় টিকিট পেতে আগেভাগেই মাঠে নেমে পড়েছেন যশোর শহর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুনীর আহমেদ সিদ্দিকী বাচ্চু। তার পিতা মরহুম আফসার আহমেদ সিদ্দিকী এ আসন থেকে একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ আসন থেকে জেলা বিএনপির সহসভাপতি মোহাম্মদ মুসা ও মনিরামপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি শহীদ ইকবালও দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন।

যশোর-৬ (কেশবপুর) : কেশবপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত যশোর-৬ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক। তিনি ছাড়াও আওয়ামী লীগ থেকে এবার বেশকিছু নেতা এ আসনে মনোনয়ন চাইবেন। তারা হলেন কেশবপুর উপজেলা চেয়ারম্যান এইচ এম আমির হোসেন, হুসাইন ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম রুহুল আমিন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী গোলাম মোস্তফা, সাংগঠনিক সম্পাদক এবাদত সিদ্দিক বিপুল, সদস্য এস কে রফিক ও সাবেক ছাত্রনেতা আবদুল মান্নান। বিএনপির মনোনয়ন চাইবেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল হোসেন আজাদ ও পৌর বিএনপির সভাপতি আবদুস সামাদ আজাদ। এ ছাড়া এ আসনে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন চাইতে পারেন উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আবদুল মজিদ ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল লতিফ রানা।

সর্বশেষ খবর