বুধবার, ২ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা
ঐতিহ্য

খানসামার জয়শঙ্করের জমিদার বাড়ি

দিনাজপুর প্রতিনিধি

খানসামার জয়শঙ্করের জমিদার বাড়ি

দীর্ঘদিন অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে থাকা ঝোপ-জঙ্গলের মাঝে পুরনো ঐতিহ্যকে ধারণ করে দাঁড়িয়ে রয়েছে জয়গঞ্জ জমিদার বাড়ি। আর পাশে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে জমিদার আমলের সেই বটগাছটি। জমিদারি থাকাকালে ওইখানের জয়গঞ্জ বাজারটিও গত প্রায় ২০ বছর পূর্বে বিলুপ্ত হয়ে অন্যত্র স্থানান্তর হয়েছে। সংস্কার করলে আবারও নতুন রূপে পুরোকীর্তির ঐতিহ্য ফিরে পেতে পারে জমিদার বাড়িটির অবয়ব। গড়ে উঠতে পারে পর্যটকদের কেন্দ্রবিন্দুতে। দিনাজপুরের খানসামা উপজেলা সদর থেকে ৯ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে আত্রাই নদীর তীরে আলোকঝাড়ি ইউনিয়নের জয়গঞ্জ গ্রামে পুরাকীর্তি জয়গঞ্জ জমিদার বাড়ি। এখনো দূর-দূরান্ত থেকে অনেক মানুষ ইতিহাসখ্যাত জয়গঞ্জ জমিদার বাড়িটি দেখার জন্য আসেন। কিন্তু অযত্নে জয়শঙ্কর রায় চৌধুরীর জমিদার বাড়িটি এখন ভগ্নদশায় পরিণত হয়েছে। জমিদার বাড়ির অনেক কিছুই নষ্টের পাশাপাশি চুরি হয়ে গেছে। স্থানীয়রাও বলেন, এটার সংস্কার করা প্রয়োজন। তৎকালীন জমিদারদের রাজত্বকালে এ অঞ্চলটি দেখভাল করতে জমিদার বাড়িটি স্থাপিত হয়। কিন্তু জমিদার প্রথা রদ হওয়ার পর ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পূর্বে ওই বাড়িতে সর্বশেষ জমিদার জয়শঙ্কর ভারতের শিলিগুড়িতে গিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করেন। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া প্রায় শত একর জমি এবং বসত বাড়িটি রেখে যান। পরবর্তীতে এসব জমির মধ্যে কিছু ব্যক্তির মালিকাধীন এবং কিছু অংশ সরকারি খাস জমিতে পরিণত হয়।

স্থানীয় মাহবুর রহমান জানান, বর্তমানে পূর্ব-পশ্চিমে লম্বা একতলা বাড়িটিতে তিনটি বারান্দা, একটি বসার ঘর, একটি থাকার ঘর, সম্পদ রাখার একটি ঘর এবং একটি মন্দির কক্ষ রয়েছে। বাড়িটির তিনটি বারান্দায় ৩০টি পিলার এবং পূর্ব থেকে প্রথম ঘরটিতে নয়টি দরজা এবং সভার কাজ পরিচালনার ঘরটিতে ১০টি দরজা রয়েছে। জমিদার বাড়িটির পূর্বে কয়েক গজ দূরে রয়েছে একটি ইন্দ্রা বা কুয়া। ওই কুয়ার পানি জমিদার বাড়িতে ব্যবহৃত হতো। এখন ইন্দ্রাটি অকেজো অবস্থায় রয়েছে। সংস্কারের অভাবে বড়িটির দেয়ালের অংশ এখন প্রায় ৩০-৪০ ভাগ নষ্ট হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন অযত্নে পড়ে থাকা বাড়িটির চারপাশের ঘন জঙ্গল পরিষ্কার করে উপজেলা প্রশাসন ৫০টি পরিবারের জন্য একটি গুচ্ছগ্রাম স্থাপন করে দেয়। ওই বাড়ির প্রবেশদ্বারে যে লোহার গেটটি রয়েছে তা এখন খানসামা থানার প্রবেশ পথ হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। জমিদারি থাকাকালে স্থাপিত জয়গঞ্জ বাজারটিও গত প্রায় ২০ বছর পূর্বে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। শুধু দাঁড়িয়ে আছে জমিদার আমলের সেই বটগাছটি। বর্তমানে হাটের ওই জায়গাটির পশ্চিমে একটি মসজিদ এবং উত্তর পাশে একটি মন্দির ও হরিবাস হয়েছে। আর বাকি অংশে বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে। ওই হাটটি বর্তমানে স্থানান্তরিত হয়ে জয়গঞ্জ-ভবানীগঞ্জ ও খানসামা সড়কের মোড়ে জয়গঞ্জ বাজার নামে চালু রয়েছে।

জমিদার বাড়িটির তিন পাশে রয়েছে তিনটি পুকুর। এ ছাড়াও ওই আমলের লিচু, আম, সেগুন, তালগাছ, বকুল, শালসহ বিভিন্ন ২০-২২টি গাছ রয়েছে। জমিদার জয়শঙ্কর পরিবার নিয়ে বাড়িটি ছেড়ে যাওয়ার পর তার রেখে যাওয়া সম্পত্তির মালিকানা পেতে ভারতের শিলিগুড়িতে গিয়ে জমিদারের উত্তসূরিদের সঙ্গে অনেকে যোগাযোগ করলেও মালিকানা হস্তান্তরে আপত্তি জানায় বলে শোনা যায়।

সর্বশেষ খবর