বুধবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
শেখ রাসেল এভিয়ারি ইকোপার্ক

ক্যাবল কারে চড়ে সবুজ বনানী ও পশুপাখি দর্শন

মোস্তফা কাজল, চন্দ্রঘোনা (চট্টগ্রাম) থেকে ফিরে

ক্যাবল কারে চড়ে সবুজ বনানী ও পশুপাখি দর্শন

পাহাড়ি জনপদে শান্ত শীতল জলের কৃত্রিম লেক। সবুজ গাছ ছেয়ে আছে সর্বত্র। পাখির কিচির-মিচির শব্দ মোহবদ্ধ করে রাখে সারাক্ষণ। এ যেন এক অন্যরকম ভালোবাসার মোহময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের স্বর্গ। এমন বর্ণনা বিদেশের কোনো স্থানের নয়। কিংবা এটি কোনো সিনেমা বা নাটকের দৃশ্য নয়। এমন বর্ণনা চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনিয়া উপজেলার চন্দ্রঘোনা কোদালা বনবিট এলাকায় প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে প্রতিষ্ঠিত নান্দনিক শেখ রাসেল এভিয়ারি অ্যান্ড ইকোপার্কের। এ পার্ক বন বিভাগের আত্ততাভুক্ত। পার্কের প্রবেশ ফি ১৫ ভাগ ভ্যাটসহ ২৩ টাকা। মূলত পার্কটি তৈরি করা হয়েছে বিলুপ্ত ও অতিবিপন্ন পাখিদের অভয়ারণ্য হিসেবে এবং পর্যটন বিকাশের জন্য। জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ সংরক্ষণের পাশাপাশি এটিকে গড়ে তোলা হয়েছে আকর্ষণীয় ও আধুনিক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে। এ ছাড়া পার্কের অভ্যন্তরে রয়েছে বিভিন্ন বৃক্ষের সমাহার। রয়েছে বট, অশ্বথ, পাকুড়, আমলকী, ডুমুরসহ বিভিন্ন ফল-ফলাদির বৃক্ষচারা। বনায়নের মাধ্যমে পাখির জন্য গড়ে তোলা হয়েছে অভয়ারণ্য, যেখানে তাদের জন্য রয়েছে পর্যাপ্ত খাদ্যের ব্যবস্থা। সেখানে তৈরি করা হয়েছে একটি মনোরম কৃত্রিম লেক, যেটি ইতিমধ্যে ভরে ফেলা হয়েছে পানিতে। সাবেক পরিবেশ ও বনমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সময়ে বন বিভাগের কোদালা বিটে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে শেখ রাসেল এভিয়ারি অ্যান্ড ইকোপার্ক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়। ২০১৩ সালের ১২ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ পার্কের উদ্বোধন করেন। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বনের দুর্লভ ও খাঁচায় বন্দী নানা ধরনের নান্দনিক পাখি। কিন্তু এর বাইরে হাজার হাজার মুক্ত পাখির অভয়ারণ্য এই এভিয়ারি পার্কজুড়ে। ঈদুল আজহার ছুটিকে কেন্দ্র করে শেখ রাসেল এভিয়ারি পার্কে প্রতিদিন ভিড় জমেছে হাজার হাজার প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যপিপাসুদের আগমনে মুখর হয়ে উঠছে এ পার্ক। চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন পর্যটকরা পাখির অভয়ারণ্যসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে ভিড় করছেন এখানে। রাঙ্গুনিয়ার চন্দ্রঘোনায় শেখ রাসেল এভিয়ারি পার্ক ঘুরে দেখা গেছে, ২১০ হেক্টর এলাকা জুড়ে এর অবস্থান। এ ছাড়া এ পার্কে রয়েছে প্রায় ২.২ কিলোমিটার লম্বা ক্যাবলে চড়ে কাপ্তাই লেক ও চারপাশের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্যের  মোহনীয় রূপ দেখার সুযোগ। মোট যাত্রাপথ আপ-ডাউন মিলিয়ে হবে ৪.৪ কিলোমিটার। এই পার্কে আপনি উঁচু-নিচু পথ পেরিয়ে তিনটি স্থানে খাঁচার ভিতর দেখতে পাবেন রংবেরঙের পাখি। প্রবেশমুখের লেকের স্বচ্ছ জলে ভাসতে দেখবেন নানা প্রজাতির দেশি-বিদেশি হাঁস আর পানকৌড়ির ঝাঁক। মধ্যবর্তী খাঁচায় এসে দেখা পাবেন রূপের রানী ময়ূরের। ভাগ্য ভালো হলে দেখতে পাবেন তাদের পেখম মেলা নাচ। এসব দেখে আপনি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকবেন পাখিগুলোর দিকে। তিনটি খাঁচায় দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৭০০ পাখি রয়েছে এই সংগ্রহশালায়। সবুজ এ বনাঞ্চলের বুক চিরে চড়াই-উতরাই আর আঁকাবাঁকা সর্পিল ইটের সড়ক চলে গেছে পার্কের অপর প্রান্তে। ওপরে টানানো আছে ক্যাবল কারের রোপলাইন। পার্কের ভিতরের সড়কের পাশে এবং শাখা সড়কের কাছে সবুজ গাছগাছালির অন্তরালে সুবিশাল খাঁচায় রয়েছে দেশি-বিদেশি নানা প্রজাতির পাখি। পার্কে প্রবেশদ্বারে অপরূপ শোভামণ্ডিত কৃত্রিম লেকে ভাসছে দেশি-বিদেশি হাঁস ও দৃশ্যমান নানা প্রজাতির পাখি ও পানকৌরির জীবন-জীবিকার কর্মচাঞ্চল্য। দেখতে পাবেন, সবুজ বনের ওপর উড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে উন্মুক্ত পাখপাখালি। লেকের মাঝখানে নির্মিত হয়েছে কৃত্রিম দ্বীপ। রয়েছে সংযোগ সেতুতে দ্বীপে যোগাযোগের ব্যবস্থা। লেকের এক প্রান্তে স্থাপিত আছে ক্যাবল কার। শেখ রাসেল পার্কের সবুজ প্রকৃতির মধ্যে গভীর ভালোবাসায় হারিয়ে যেতে দেখা যায় প্রকৃতিপ্রেমীদের। এভিয়ারি পার্কের পরিচালনা কর্তৃপক্ষের প্রধান ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগীয় কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রাকৃতিক সৌন্দর্যপিপাসু মানুষের কাছে শেখ রাসেল এভিয়ারি পার্ক অন্যতম বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। আমরা প্রকৃত অর্থেই পাখিদের অভয়ারণ্য হিসেবে এ পার্কটি নির্বাচন করেছি। পাখিদের জীবন-জীবিকার জন্য এখানে পাখিখাদ্যের বৃক্ষ রোপণ করা হয়েছে। খনন করা হয়েছে কৃত্রিম লেক। গড়ে তোলা হয়েছে পাখিদের আবাসনের পরিবেশ, যাতে নিজে থেকেই পাখিরা নিজেদের বাসা এবং শৈল্পিক নিদর্শন গড়ে তুলতে পারে। পাশাপাশি প্রকৃতির ফল, ফসল এবং লেকের পানিতে নাওয়া-খাওয়ার মধ্যে পাখিকুলের স্বাভাবিক জীবনধারার অকৃত্রিম নিদর্শন সংরক্ষিত করা হয়েছে এখানে। পাখিদের জন্য অভয়ারণ্য গড়া এমন পার্ক বাংলাদেশে দ্বিতীয়টি নেই।’

সর্বশেষ খবর