রবিবার, ২৩ জুন, ২০১৩ ০০:০০ টা

কপালে কবর জোটেনি ঘষেটি বেগমের

কপালে কবর জোটেনি ঘষেটি বেগমের

প্রকৃত নাম মেহেরুন্নেসা বেগম হলেও ইতিহাসে কুচক্রী নারীর প্রতীক হিসেবে তিন ঠাঁই পেয়েছেন ঘষেটি বেগম নামে, যা ছিল তার ডাক নাম। সিরাজউদ্দৌলার নানা নবাব আলীবর্দী খাঁর ছিল তিন কন্যা। ক্রমানুসারে তাদের নাম ছিল মেহেরুন্নেসা ওরফে ঘষেটি বেগম, মায়মুনা বেগম এবং নবাব সিরাজউদ্দৌলার মা আমেনা বেগম। স্বামীর মৃত্যুর পর নিঃসন্তান ঘষেটি বেগম স্বামীর অগাধ সম্পদের মালিক হন। নবাব তথা প্রশাসনের ওপর প্রভাব বিস্তারের লোভে ঘষেটি বেগম চেয়েছিলেন সিরাজ নয়, মেজ বোন মায়মুনা বেগমের পুত্র শওকত জং হোক বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার নবাব। কারণ শওকত প্রায় সারা দিনই মদপান করতেন। আর চাটুকারদের কথামতো সিদ্ধান্ত নিতেন। তাই তার ওপর প্রভাব বিস্তার করা সহজ হতো ঘষেটি বেগমের জন্য। তবে আলীবর্দী খানের ইচ্ছায় তার মৃত্যুর পর সিরাজউদ্দৌলা মসনদে আরোহণ করলেও ঘষেটি বেগম তা মেনে নিতে পারেননি। ফলে সিরাজউদ্দৌলাকে মসনদ থেকে যে কোনো মূল্যে বিতাড়িত করার সুযোগ খুঁজতে থাকেন ঘষেটি বেগম। এদিকে শওকত জং ক্রমান্বয়ে নবাবের অবাধ্য হতে থাকেন। দিলি্লর সম্রাট দ্বিতীয় আরওরঙ্গজেবের প্ররোচনায় শওকত জং একপর্যায়ে বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন। তৎকালীন দুই কোটি রুপি ঘুষের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি সম্রাট দ্বিতীয় আওরঙ্গজেবের কাজ থেকে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার নবাব হওয়ার ফরমানও আদায় করে নেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নবাব সিরাজউদ্দৌলা তার বিশ্বস্ত ও সাহসী সেনানায়ক মহন লালের নেতৃত্বে একদল সৈন্য পাঠান পুর্নিয়া রাজ্যের রাজা শওকত জংকে শায়েস্তা করার জন্য। পলাশীর যুদ্ধের আট মাস আগে ১৬ অক্টোবর ১৭৫৬ সালে মহন লালের সৈন্যদের আক্রমণের মুখে শওকত জং মাতাল অবস্থায় গুলিবিদ্ধ হন এবং মৃত্যুবরণ করেন। এ ঘটনা ঘষেটি বেগমকে আরও ক্ষেপিয়ে তোলে এবং প্রতিহিংসার আগুন আরও বাড়িয়ে দেয়। এমনি এক প্রেক্ষাপটে লর্ড ক্লাইভ আর মীর জাফরের সঙ্গে পলাশীর যুদ্ধে গোপন চক্রান্তে হাত মেলান ঘষেটি বেগম। প্রয়োজনে তিনি তার বিপুল সম্পদ খরচেরও প্রস্তাব করেন। আর এমনই আশা করছিলেন ক্লাইভ এবং মীর জাফর। কালের বিবর্তনে যুদ্ধ এবং নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয় ও মৃত্যুর মধ্য দিয়ে মীর জাফর ইংরেজদের হাতের পুতুল হয়ে ক্ষমতায় আরোহণ করেন। এতে ক্ষমতায় প্রভাব বিস্তারের যে স্বপ্ন ঘষেটি বেগম দেখেছিলেন, তা কার্যত অপূর্ণ থেকে যায় ইংরেজ আধিপত্যের কারণে। প্রতিশ্রুত অর্থ না দেওয়াসহ নানা কারণে একপর্যায়ে ঘষেটি বেগম দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন মীর জাফর এবং তার পুত্র মীর মিরনের সঙ্গে। পরিণতিতে ঘষেটি বেগমকে বন্দী করে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ঢাকার (বর্তমান পুরান ঢাকায়) জিঞ্জিরা প্রাসাদে। এখানে বন্দী থাকা সত্ত্বেও ঘষেটি বেগম নতুন চাল শুরু করেন মীর জাফর এবং মিরনের বিরুদ্ধে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে এবং ভবিষ্যতে বিপদ হতে পারে ভেবে মিরন ঘষেটি বেগমকে বন্দী অবস্থায় নৌকাযোগে মুর্শিদাবাদে ফেরত পাঠানোর আদেশ দেন। নৌকা ঘষেটি বেগমকে নিয়ে জিঞ্জিরা প্রাসাদ ছেড়ে গেলেও মুর্শিদাবাদে পেঁৗছেনি কোনো দিন। পথেই নৌকাডুবিতে ঘষেটি বেগমের সলিল সমাধি ঘটে বলে ধারণা করা হয়। ফলে বলা যায়, বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার মাটিও ঠাঁই দেয়নি কুচক্রী ঘষেটি বেগমকে। সাড়ে তিন হাত মাটিও জোটেনি এই বিশ্বাসঘাতকিনীর কপালে। অঢেল ধন-সম্পদ তার কোনো কাজেই আসেনি।

 

 

সর্বশেষ খবর