২৮ দফা দাবি সংবলিত তালিকা ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের কাছে দিয়েছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষার্থীরা। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দল ট্রেজারার ও ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে এই তালিকা দেন। মতবিনিময় শেষে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ও ট্রেজারার অধ্যাপক ড. এ কে এম মাহবুব হাসান শিক্ষার্থীদের ২৮টি দাবীর মধ্যে বেশ কিছু দাবী তাৎক্ষণিক এবং অন্যান্য দাবীগুলো ছাত্র-শিক্ষকদের সমন্বয়ে পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেন। এছাড়া শিক্ষার্থীরা বিদায়ী উপাচার্যের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধাভোগী শিক্ষক-কর্মকর্তাদের তালিকা হস্তান্তর করেন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের কাছে।
শিক্ষার্থীদের ২৮টি দাবী হলো: স্নাতক পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর রেজাল্ট আসার আগেই স্নাতকোত্তরের ক্লাশ শুরু করতে হবে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থীকে স্নাতকোত্তর শ্রেণীতে ভর্তির সুযোগ দিতে হবে ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীর ভর্তি কার্যক্রম শেষ হওয়ার একমাসের মধ্যে মেশিন রিডেবল আইডি কার্ড, হেলথ কার্ড, লাইব্রেরি কার্ড প্রদান করতে হবে। বিদ্যমান ব্যাচগুলোর মধ্যেও ১৫ দিনের মধ্যে সবাইকে আইডি কার্ডসহ এই সুবিধা দিতে হবে ।
সেমিস্টার ফি কমাতে হবে। মাস্টার্সের ভর্তি ফি কমিয়ে ৫ হাজার টাকা করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ভর্তি ফি সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা এবং সর্বনিম্ন ফি’তে মার্কসিট উত্তোলনের ব্যবস্থা করতে হবে। ল্যাব ফি আড়াই হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ৫শ’ টাকা করা সহ ল্যাব সুবিধা বাড়াতে হবে। পুনরায় ভর্তিতে পুরো টাকা ভর্তি ফি নেওয়া যাবে না । এর জন্য সেমিস্টার ফি’র আদলে পুনরায় ভর্তি নির্ধারণ করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়কে পর্যায়ক্রমে পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়তন বাড়িয়ে ৫শ’ একর করতে হবে। শ্রেণিকক্ষ সংকট দূর করতে হবে এবং শিক্ষার্থী অনুপাতে শ্রেনী কক্ষ বন্টন করতে হবে।
দূরপাল্লার (ঝালকাঠী, বাকেরগঞ্জ ও গৌরনদী) বাসের ব্যবস্থা করতে হবে। রূপাতলী থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি ৩০ মিনিট পরপর বাসের ব্যবস্থা করতে হবে।
ক্যাম্পাস সবুজায়নের লক্ষ্যে পরিকল্পিত বৃক্ষরোপণের কর্মসূচি রাখতে হবে এবং ছাত্রদের গাছ লাগানোর অনুমতি দিতে হবে। বর্জ ব্যবস্থাপনার জন্য প্রতি ১৫ মিটার পরপর ডাস্টবিনের ব্যবস্থা করতে হবে ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ক্লাবের জন্য কক্ষের ব্যবস্থা করতে হবে ।
ছেলেদের জন্য কমন রুমের ব্যবস্থা করতে হবে। মেয়েদের কমনরুমের পরিধি বৃদ্ধি করতে হবে। ছাত্রীদের নামাজের কক্ষের ব্যবস্থা এবং মসজিদে ছাত্রীদের নামাজের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বত্র সুপেয় পানির ব্যবস্থা করতে হবে। কেন্দ্রীয় পানি পরিশুদ্ধকরণ প্লান্ট স্থাপন করতে হবে।
সাপ্লিমেন্টারি ব্যবস্থা সব ব্যাচের জন্য চালু করতে হবে এবং সাপ্লিমেন্টারি ফি ৫ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ১ হাজার টাকা করতে হবে।
সম্পূর্ণ ক্যাম্পাস ও হলগুলোতে শক্তিশালী ইন্টারনেটের ব্যবস্থা করতে হবে ।
পাঠাগারের বিষয় ভিত্তিক বইয়ের সংখ্যা বাড়াতে হবে। পাঠ কক্ষের আসন সংখ্যা বাড়াতে হবে এবং একক আসনের ব্যবস্থা করতে হবে। ই-লাইব্রেরির ব্যবস্থা করতে হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থালয়ে শিক্ষার্থীদের জেরক্স সুবিধা দিতে হবে ।
কম্পিউটার ল্যাবের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। সেমিনার রুম ব্যবহারে কোন ফি নেয়া যাবে না।
মানোন্নয়ন পরীক্ষার ফি ১ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ২০০ টাকা করতে হবে। মানোন্নয়ন পরীক্ষা পরবর্তী যে কোন ব্যাচের সাথে অংশগ্রহণের সুযোগ রাখতে হবে। স্নাতক সম্পন্ন করার সময়সীমা ৬ বছর থেকে বাড়িয়ে ৭ বছর করতে হবে।
সকল প্রকার জরিমানা বাতিল করতে হবে। সেমিস্টারের যে কোন সময় বা ফরম পূরণের সময় সেমিস্টার ফি নিতে হবে। সেমিস্টার ফি’র জন্য জরিমানা ব্যবস্থা বন্ধ করতে হবে। কোন বিশেষ কারণে কেউ পরীক্ষা দিতে না পারলে ( মিড ও ফাইনাল) অনতিবিলম্বে তাদের পরীক্ষা নিতে হবে ।
আবাসন সংকট সমাধানে একাধিক ছাত্র-ছাত্রী হল স্থাপন করতে হবে। হলের বাৎসরিক ফি কমাতে হবে। ডাইনিংয়ে ভর্তুকি দিতে হবে। ডাইনিংয়ে খাবারের মান বৃদ্ধি করতে হবে। পুরো ক্যাম্পাসের পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা দুই মাসের মধ্যে নির্মাণ করতে হবে।
হলে টিউবওয়েল সমস্যার সমাধান করতে হবে। দীর্ঘ মেয়াদে ছুটিতে হল বন্ধ রাখা যাবে না। হলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে এবং হাউজ টিউটর নিয়োগ করতে হবে। যথাযথ পরিচয় দেওয়া সাপেক্ষে ছাত্রী হলে নিকটাত্মীয়দের অবস্থান করতে দিতে হবে ।
মেয়েদের হলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে হলে প্রবেশের সময়সীমা রাত ১০টা করতে হবে। পাঠকক্ষে পর্যাপ্ত পরিমাণ চেয়ার ও টেবিলের ব্যবস্থা করা, রমজানে ডাইনিংয়ে ইফতারের ব্যবস্থা করা, খাবারের মান বৃদ্ধি করা, হলের চারপাশ ও পানির ট্যাংক নিয়মিত পরিষ্কার করা এবং নামাজ কক্ষের ব্যবস্থা করা।
এক মাসের মধ্যে ছাত্রীদের জন্য একটি বেবি ডে-কেয়ার কক্ষের ব্যবস্থা করতে হবে।
স্বতন্ত্র অডিটরিয়াম ভবন ও স্বতন্ত্র টিএসসি নির্মাণ করতে হবে। টিএসসি’তে ক্লাশ নেয়া যাবে না। জিমনেসিয়াম ও সুইমিংপুল স্থাপন করতে হবে। এক মাসের মধ্যে ক্যাম্পাসের সড়কগুলো সংস্কার ও পুনরায় নির্মাণ করতে হবে। স্বতন্ত্র শহীদ মিনার স্থাপন করতে হবে (অথবা বর্তমান শহীদ মিনারের আয়তন বাড়াতে হবে)। খেলার মাঠ সংস্কার করতে হবে। উপাসনালয়ের কাঠামো পরিবর্তন করতে হবে। ফাইনাল পরীক্ষার পূর্বে অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করতে হবে। ফাইনাল পরীক্ষার পূর্বে সর্বনিম্ন ১৫ দিন প্রস্তুুতি ছুটি প্রদান করতে হবে এবং সেমিস্টার ও ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষার ফলাফল সর্বোচ্চ ৩ মাসের মধ্যে প্রকাশ করতে হবে।
ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের মান বৃদ্ধি করতে হবে এবং দাম কমাতে হবে। সপ্তাহের প্রতিদিন ক্যাফেটেরিয়া খোলা রাখতে হবে। রমজানের সময় ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের জন্য ক্যাফেটেরিয়া চালু রাখতে হবে ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে কোন কাজে গিয়ে আহত হলে তার চিকিৎসা ব্যয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বহন করতে হবে। কোন শিক্ষার্থীর আর্থিক সমস্যা থাকলে তাকে ছাত্রকল্যাণ তহবিল থেকে বৃত্তির ব্যবস্থা করতে হবে। দুস্থ শিক্ষার্থীদের সবধরনের সহায়তা করতে হবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে।
সেমিস্টার ও বার্ষরিক পরীক্ষায় ১ম, ২য় ও ৩য় স্থান অধিকারী শিক্ষার্থীদের উৎসাহ প্রদানের লক্ষ্যে বৃত্তি ব্যবস্থা চালু করতে হবে এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের শিক্ষক-কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে।
নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ভর্তি পরীক্ষা চালু করতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যকলা ও চারুকলা বিভাগ খুলতে হবে।
সার্বক্ষণিক মেডিকেল সেন্টার খোলা রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। মেডিকেল সেন্টারে পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে। মেডিকেল সেন্টারে পর্যাপ্ত আসনের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য সার্বক্ষণিক একজন কাউন্সিলিং সাইকোলোজিস্ট নিয়োগ করতে হবে।
ফিটনেস বিহীন বাস বাদ দিয়ে পর্যাপ্ত নতুন বাস কিনতে হবে। বাস স্টপেজ বাড়াতে হবে।
সামাজিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের জটিলতা কমাতে শুধু প্রক্টর বরাবর অবহিতপত্র প্রদান পূর্বক অনুষ্ঠানের আয়োজন করার ব্যবস্থা করতে হবে।
শিক্ষার্থীদের ২৮ নম্বর লিখিত দাবি হলো দুপুরে ৩০ মিনিট বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হবে এবং আগামী বছর থেকে রমজানে ক্লাশ পরীক্ষা বন্ধ রাখতে হবে।
এছাড়াও শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যকে মৌখিকভাবে অবহিত করা হয়, আন্দোলনের মুখে ভিসি প্রফেসর ড. এসএম ইমামুল হককে গত ১১ এপ্রিল থেকে ২৬মে পর্যন্ত বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠালেও তিনি ২৭ মে তার শেষ এক দিনের কার্যকালে সিন্ডিকেট সভা করে আন্দোলনের সাথে জড়িতদের শাস্তি দেয়ার ষড়যন্ত্র করছেন। তাই আগামী ২৭ মে বিদায়ী উপাচার্য যাতে সিন্ডিকেট সভার মধ্যেমে আন্দোলনে জড়িতদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ না নিতে পারে সে ব্যাপারে হুশিয়ারী দেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা কিছু শিক্ষক ও কর্মকর্তার পৃথক তালিকা দেন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের কাছে, যারা বিগত সময়ে উপাচার্য প্রফেসর ড. এসএম ইমামুল হকের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়েছেন বলে অভিযোগ তাদের। তারা হলেন ড. হাসিনুর রহমান, হাফিজ আশরাফুল হক, মোহসিনা হোসাইন, শরীফা উম্মে শিরিনা, রাহাত হোসাইন ফয়সাল, মুরশীদ আবেদীন, সুব্রত বাহাদুর, ফয়সল মাহমুদ রুমি (পিআরও), হুমায়ুন কবীর, লিয়াজো অফিসের সেকশন অফিসার মিজানুর রহমান, দিদার হোসেন ও মনোয়ার হোসেনসহ আরও অনেকে।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা