গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্বাবিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি) ক্যাম্পাস এখন মিছিলের ক্যাম্পাসে রূপ নিয়েছে। সোমবার সকাল থেকে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন হল থেকে এবং হলের বাইরে থেকে শিক্ষার্থীরা একের পর এক মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসে আসতে থাকে।
শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিনের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে। পরে তারা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে যোগ দেয়। ভিসি পদত্যাগ না করা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ারও ঘোষণা দেন।
আন্দোলনের পঞ্চম দিনেও বৃষ্টি উপেক্ষা করে ভিসির পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেনি। শিক্ষার্থীরা শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটিকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেছে। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে কোনো মামলা দায়ের না করায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দিন-রাত ভিসি’র বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও নারী কেলেঙ্কারি নিয়ে স্লোগানের পর স্লোগান চলছে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ভিসির নানা অনিয়ম, দুর্নীতি নারী কেলেঙ্কারি লেখা বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করে।
আন্দোলনের মুখে গত শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা ও সকাল ১০টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ ব্যর্থ হয়েছে।
এদিকে, শনিবার ক্যাম্পাসের বাইরে বিভিন্ন স্থানে বহিরাগতদের হামলায় ২০ শিক্ষার্থী আহত হওয়ার ঘটনার পর শিক্ষার্থীরা আবারও হামলার আশঙ্কা করছেন। এ ঘটনায় সহকারী প্রক্টর মো. হুমায়ূন কবির শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় পদত্যাগ করলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখনও এ ঘটনায় কোনো মামলা করেনি।
তবে এ ঘটনায় ভিসি নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন এবং ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। ক্যাম্পাস উত্তাল থাকায় ক্যাম্পাসের মেইন গেট ও আশপাশে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার প্রফেসর ড. নুরউদ্দীন আহমেদ জানান, উদ্ভুত পরিস্থিতিতে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছি। সেটা অমান্য করে শিক্ষার্থীরা হল ও ক্যাম্পাস ছাড়েনি। শিক্ষার্থীদের ওপর ক্যাম্পাসের বাইরে যে হামলার ঘটনা ঘটেছে তার জন্য আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ বিষয়ে সভা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা হলের পানি ও বিদ্যুৎ বন্ধের যে অভিযোগ করেছে তা সঠিক না। যে দিন বন্ধ ছিল সেদিন সারা গোপালগঞ্জে বিদ্যুৎ ছিল না। তাই পানিও তোলা সম্ভব হয়নি। কিন্তু শিক্ষার্থীরা বিষয়টি অন্যভাবে উপস্থাপন করেছে।
অপরদিকে, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার তীব্র প্রতিবাদ ও ভিসির পদত্যাগের দাবিতে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে মানববন্ধন করেছে জেলার সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করেন।
সোমবার ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের টেকেরহাট পপুলার হাই স্কুল এ্যান্ড কলেজের সামনে ঘণ্টাব্যাপি এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। এসময় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুল-কলেজের শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ১১ সেপ্টেম্বর আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ও ডেইলি সান পত্রিকার ক্যাম্পাস প্রতিনিধি ফাতেমা-তুজ-জিনিয়াকে সাময়িক বহিষ্কার ও আন্দোলনের মুখে বহিষ্কারাদেশ তুলে নিলেও ভিসির পদত্যাগের দাবিতে বিরতিহীন অন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা। আন্দোলন চলাকালে গত শনিবার বহিরাগতদের হামলায় ২০ শিক্ষার্থী আহত হয়।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন