জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রফেসর ড. আনোয়ার খসরু পারভেজ বলেছেন, ডেঙ্গু মোকাবেলা কারো একার কাজ নয়। সমন্বিত উদ্যোগ ও পরিকল্পনার মাধ্যমে এটি মোকাবেলা করতে হবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) আয়োজিত ডেঙ্গু বিস্তারের কারণ ও করণীয় শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় মশার ডিম ধ্বংসে প্রয়োজনীয় গবেষণার জন্য গবেষকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। এছাড়াও চট্টগ্রামে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
আজ বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে ‘ডেঙ্গু বিস্তারের কারণ ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনার আয়োজিত হয়। মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সভাপতি ড. মোহাম্মদ জোবাইদুল আলমের সভাপতিত্বে ডেঙ্গু গবেষক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
আনোয়ার খসরু বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে চারটি বিষয়ের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। এগুলো হচ্ছে- পরিবেশ ব্যবস্থাপনা অর্থাৎ পরিবেশ পরিস্কার- পরিচ্ছন্নতা, জৈবিক নিয়ন্ত্রণ বা জীববৈচিত্র রক্ষা, মশা নিরোধক স্প্রে, ওষুধের সঠিক প্রয়োগ ও জনসচেতনতা। এজন্য স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা থাকতে হবে।
গবেষকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, অক্টোবর মাস থেকে প্রাকৃতিকভাবে মশা কমে যাবে। কিন্তু ডিম থেকে যাবে। আবার যখন বৃষ্টি হবে তখন হ্যাচিং করে মশা জন্ম নিবে। গবেষকদের এই ডিম ধ্বংসের ব্যাপারে মনোযোগ দেওয়া উচিত।
ডেঙ্গু মোকাবেলার বিষয়ে তিনি বলেন, ভাইরাস হওয়ার কারণে ডেঙ্গুর কোন ওষুধ নাই। হয় ডেঙ্গু আটকাতে হবে, নাহয় মশা আটকাতে হবে। কিন্তু ডিম নষ্ট করার সুযোগ না থাকায় এখন উপায় মশা ও লার্ভা ধ্বংস করা। এডিস না বুঝে এডিসকে মারবেন কিভাবে? এডিসের জন্ম পরিচয় জানতে হবে। যারা যত্রতত্র স্প্রে করে বেড়াচ্ছেন, এটা শোডাউন ছাড়া কিছুই না।
তিনি বলেন, এটা কানাডার সমস্যা না, সেখানে গবেষণা করলে হবে না। বাংলাদেশের সমস্যা বাংলাদেশই সমাধান করবে, বাংলাদেশেই গবেষণা করতে হবে।
ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে করণীয় সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, মশা কামড়ালেই অসুখ হবে এমনটা নয়, কিন্তু যেহেতু জানার সুযোগ থাকছে না সে ডেঙ্গুবাহী কিনা। সেহেতু ধরে নিতে হবে তার ডেঙ্গু আছে। তবে চারজনকে কামড়ালে তার মধ্যে একজন আক্রান্ত হয়। ব্যক্তির প্রথমবার ডেঙ্গু ইনফেকশনের পর ডেঙ্গু ভাইরাস দ্বারা দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হলে লক্ষণসমূহ ভিন্ন রকম হয় এবং তা পাঁচশত গুণ বেশি ভয়াবহ ও জটিল আকার ধারণ করে। এটি ‘ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোম ফিভার’ রুপ নিতে পারে, তখন জীবন সংশয়ের আশঙ্কা তৈরি হয়। আর এবারের অভিজ্ঞতা বলছে জ্বর চলে যাওয়ার পর সমস্যা বেশি। প্রথমবার আক্রান্ত হলে বেশি সমস্যা নাই। দ্বিতীয়বার ইনফেকশনের ফলে শকে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি৷
তিনি বলেন, আক্রান্ত হলে শুধু বিশ্রাম নিতে হবে, এর কোন চিকিৎসা নাই৷ রক্ত দেওয়ার তো প্রয়োজনই নাই৷ তবে ডাক্তারের পরামর্শে এন্টিবায়োটিক নেওয়া যেতে পারে। আর লক্ষণগুলো সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে। মশারি টানতে হবে, মশা মারতে হবে। জ্বর চলে গেলে বেশি খেয়াল করতে হবে।
বিডি-প্রতিদিন/ তাফসীর আব্দুল্লাহ