ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা প্রায়ই রিকশা ভাড়া নিয়ে সমস্যার সম্মুখীন হন। যাতায়াতের জন্য তাদের অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হয়, যা শিক্ষার্থীদের জন্য বড় একটা সমস্যায় পরিণত হয়েছে। এই সমস্যা সমাধানে স্মার্ট অ্যাপ ভিত্তিক শাটল সার্ভিস ‘ইউর শাটল’ চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দ্রুতই এটি চালু হতে পারে, তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুমোদন এখনো প্রক্রিয়াধীন।
‘ইউর শাটল’ সার্ভিসটির প্রতিষ্ঠাতা মো. মিলজার রহমান বলেন, আমরা ইতোমধ্যে পরিকল্পনা করে প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে ভাবছে এবং শিক্ষার্থীদের সুবিধা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে। প্রশাসনের চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে আমরা দ্রুতই সার্ভিসটি চালু করব।
মিলজার রহমান জানান, ২ বছর আগে তারা শাটল সার্ভিস চালুর চিন্তা করেছিলেন। তবে কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে সেটি তখন সম্ভব হয়নি। এরই মধ্যে ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভেন্ডিং মেশিন এবং ওয়াশিং মেশিন সার্ভিস চালু হয়েছে, যা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এবার ‘ইউর শাটল’ চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।প্রথম ধাপে কতগুলো শাটল চালু হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুরুর দিকে আমরা ১৫-২০টি শাটল চালু করব। শিক্ষার্থীদের চাহিদার ভিত্তিতে রুট নির্ধারণ করে শাটলের সংখ্যা বাড়ানো হবে। আমাদের লক্ষ্য হলো, ২-৫ মিনিটের মধ্যে একজন শিক্ষার্থী শাটল সার্ভিস পেতে পারেন।
শাটল সার্ভিসের সময়সূচি নিয়ে মিলজার রহমান জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক বিভাগের ক্লাস সকাল ৮টায় শুরু হয়, তাই আমরা ভোর ৭টা থেকেই শাটল সার্ভিস চালু করার পরিকল্পনা করছি। তবে শিক্ষার্থীদের চাহিদা অনুযায়ী সময়সূচি নির্ধারণ করা হবে।
প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়ে তিনি বলেন, শাটলে বেশ কিছু উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে, যা এখন প্রকাশ করা যাচ্ছে না। তবে এটি অত্যন্ত স্মার্ট ও সাশ্রয়ী সেবা হবে।
জানা গেছে, শাটল সার্ভিসটি চালু হলে শিক্ষার্থীরা শহীদুল্লাহ হল থেকে নীলক্ষেতের রুটে মাত্র ৫-১০ টাকার মধ্যে যাতায়াত করতে পারবেন। বিভিন্ন রুটে ২০-৩০টি শাটল চলবে এবং চাহিদা অনুযায়ী শাটলের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হবে। শিক্ষার্থীরা ‘ইউর ক্যাম্পাস’ অ্যাপস ডাউনলোড করে শাটল সার্ভিস ব্যবহার করতে পারবেন এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সহজেই রিচার্জ করতে পারবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হাসান তারিক বলেন, ঢাবিতে রিকশা ভাড়ার কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। একটুখানি দূরত্বেও ২০-৩০ টাকা ভাড়া চায়। শাটল চালু হলে আমাদের যাতায়াত খরচ অনেক কমবে এবং ভাড়া নিয়ে আর সমস্যা হবে না।
বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হলের শিক্ষার্থী তাইবা জানান, আমাদের হল ক্যাম্পাস থেকে দূরে হওয়ায় অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। রিকশা অনেক ব্যয়বহুল হওয়ায় অধিকাংশ সময় হাঁটতে হয়। শাটল সার্ভিস চালু হলে এই কষ্ট থেকে মুক্তি পাব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, আমাদের কাছে ‘ইউর ক্যাম্পাস’ প্রতিনিধিরা তাদের সার্ভিস চালুর প্রস্তাব দিয়েছে। আমরা আরও কয়েকটি কোম্পানির সাথেও আলোচনা করছি। যাচাই-বাছাই শেষে শিক্ষার্থীদের জন্য সবচেয়ে ভালো সেবাটি নির্বাচন করা হবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ডাকসুর যৌথ উদ্যোগে ‘জোবাইক’ নামে একটি সাইকেল সার্ভিস চালু হয়েছিল, যা শিক্ষার্থীদের মাঝে খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল। তবে করোনা পরবর্তী সময়ে সেবাটি বন্ধ হয়ে যায় এবং শিক্ষার্থীরা আবারও অতিরিক্ত রিকশা ভাড়ার সমস্যায় পড়েন। এখন 'ইউর শাটল' চালুর উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করেছে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল