জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) চারুকলা অনুষদ ভবনের নির্মাণ স্থগিত করা নিয়ে দুই পক্ষের মুখোমুখি অবস্থানের ঘটনা ঘটেছে। সোমবার (২৫ নভেম্বর) দিবাগত রাত ১১ টার দিকে এ ঘটনা ঘটেছে।
জানা যায়, ওইদিন দুপুর ১ টার দিকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে চারুকলা অনুষদ ভবনের নির্মাণ কাজ বন্ধের প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে তালা লাগিয়ে অবরোধ কর্মসূচি পালন শুরু করেন চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা। ওইদিন রাত ১১ টা পর্যন্ত অবরোধ চলছিল। অবরোধ চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন উপ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, প্রক্টর এবং অন্যান্য কর্মচারীরা ভেতরে আটকে পড়েন। এতে রাত ১০ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দাবির বিষয়ে আগামী ২৮ নভেম্বর আলোচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানালে নাকচ করে দেন শিক্ষার্থীরা।
একপর্যায়ে, রাত পৌনে ১১ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল সাধারণ শিক্ষার্থী মিছিল নিয়ে এসে চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি অবস্থান নেয়। এসময়, তারা ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’, ‘ভারতের দালালেরা হুঁশিয়ার, সাবধান’, ‘ভারতের অর্থায়নে, ভবন নির্মাণ চলবে না, চলবে না’, প্রভৃতি স্লোগান দিতে থাকেন।
তবে ওইসময় পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টোরিয়াল বডির সদস্যরা। পরবর্তীতে রাত সোয়া ১১ টার দিকে সংকট সমাধানে উপাচার্যের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেয় চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
এদিকে, চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের অবরোধের খবর শুনে রাত সাড়ে ১১ টায় একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে প্রশাসনিক ভবনের সামনে আসে সালাম বরকত হলের অর্ধ-শতাধিক শিক্ষার্থী। তাদের দাবি, শহীদ সালাম-বরকত হলের পাশে কোন ভবন নির্মাণ করতে দেওয়া হবে না। পরে, উপাচার্য আগামী ২৮ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট হলে অংশীজনদের আলোচনা সভার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানালে তারা হলে ফিরে যায়।
অবরোধের বিষয়ে জানতে চাইলে চারুকলা বিভাগের ৫২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ইশরাত জাহান ইশিকা বলেন, শ্রেণিকক্ষের সংকটের কারণে চারুকলা বিভাগের ৫৩ তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা এখনো একটি ক্লাসও করতে পারেনি। অন্যদিকে, ব্যাচগুলোর সময়সূচি একটির সাথে অন্যটির সাথে মিলে যাওয়ায় আমাদের বার্ষিক পরীক্ষাগুলো পিছিয়ে যাচ্ছে। এমনকি আজ ৪৯তম ব্যাচ তাদের পরীক্ষাও দিতে পারেনি শ্রেণিকক্ষের অভাবে। ক্যাম্পাসের অন্যান্য ভবনের নির্মাণকাজে কোনো বাধা না আসলেও, সাধারণ শিক্ষার্থীদের নামে কিছু গোষ্ঠী বারবার চারুকলা বিভাগের নির্মাণকাজে বাধা দিচ্ছে। কিন্তু আমাদের কণ্ঠ কখনো শোনা হয় না। এই কারণেই আমরা এই অবরোধ করেছি এবং ভবন নির্মাণকাজ দ্রুত শুরু করার দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে ভবনটির নির্মাণকাজ স্থগিতের পক্ষে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী জিয়াউদ্দিন আয়ান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ-প্রকৃতি নষ্ট করে অপরিকল্পিতভাবে ভবন নির্মাণ করতে দেওয়া হবে না। মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করে তারপর ভবনের নির্মাণকাজ শুরু করতে হবে। একই সঙ্গে স্বৈরাচার সরকারের দোসর ভারতের টাকায় কোনো ভবন জাহাঙ্গীরনগরে নির্মাণ করা যাবে না।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, শিক্ষার্থীদের একটি অংশের আপত্তির কারণে গত ৩ নভেম্বর প্রশাসনিক বৈঠকের মাধ্যমে নির্মাণকাজ স্থগিত করা হয়। এখন চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের দাবি দ্রুত কাজ শুরু করতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি দাবির কারণে সংকট বাড়ছে। এ বিষয়ে আগামী ২৮ অক্টোবর অংশীজনদের সবার সম্মতিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের জুনে শিক্ষার্থীদের বাধা উপেক্ষা করে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ অর্থায়নে প্রায় ৯৭ কোটি টাকা ব্যয়ে জাবির অতিথি পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত একটি লেকের পাশে প্রায় শতাধিক গাছ কেটে চারুকলা অনুষদের ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর একদল শিক্ষার্থী গিয়ে ভবনটির নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয়। সর্বশেষ গত ৩১ অক্টোবর চারুকলা অনুষদের ভবন নির্মাণ কাজ বন্ধের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় বসেন ওই শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে গত ৩ নভেম্বর এক প্রশাসনিক সভায় সেখানে সাময়িকভাবে ভবন নির্মাণ কাজ স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল