দৈনিক ৩শ’ টাকা মজুরির দাবিতে সিলেট বিভাগে টানা ১২ দিন ধরে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করছেন চা শ্রমিকরা। আজ বুধবার সিলেট ও হবিগঞ্জের কোন বাগানের শ্রমিক কাজে যোগ দেননি। মৌলভীবাজারের কয়েকটি বাগানের শ্রমিকরা সকাল কাজে যোগ দিলেও দুপুর থেকে তারাও কাজ বন্ধ করে দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে ফোনে কথা বলে মজুরি বৃদ্ধিসহ নিজেদের দাবি-দাওয়া উত্থাপন করতে চান চা শ্রমিকরা। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সরাসরি কোন আশ্বাস পেলে তারা কাজ যোগ দিবেন বলে জানিয়েছেন।
এদিকে, চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবির চলমান সংকট নিরসনে আজ বৃহস্পতিবার চা শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে ঢাকায় শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু অনিবার্য কারণে বৈঠকটি স্থগিত করা হয়েছে। বিষয়টি শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল কাদের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানান।
বুধবার সকাল থেকে সিলেটের সবকটি বাগানের শ্রমিকরা নিজ নিজ বাগানে অবস্থান নেন। কাজে যোগ না দিয়ে তারা বিক্ষোভ করেন। তিনশ’ টাকা মজুরির দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণায় অনড় থাকেন।
চা শ্রমিক ইউনিয়নের সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা জানান, ‘মালিকপক্ষ ১৪৫ টাকার বেশি মজুরি দিতে রাজি নয়। আর শ্রমিকরা ৩শ’ টাকার কম মজুরিতে কাজে ফিরতে চান না। এই অবস্থায় ইউনিয়ন কিংবা পঞ্চায়েতের বৈঠক করে কোন লাভ নেই। এর আগেও কয়েকটি বৈঠক নিষ্ফল হয়েছে। যে কারণে বৃহস্পতিবার ঢাকায় শ্রম প্রতিমন্ত্রীর সাথে যে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল সেটিতে শ্রমিক নেতৃবৃন্দ অংশ নেবেন না বলে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।’
রাজু গোয়ালা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ ছাড়া জটিল এই সমস্যার সমাধান হবে না। প্রধানমন্ত্রী ফোনে সরাসরি শ্রমিকদের সাথে কথা বলে তাদের দাবি দাওয়া পূরণের আশ্বাস দিলে তারা অবশ্যই কাজে ফিরবেন। প্রধানমন্ত্রী ছাড়া আন্দোলনরত চা শ্রমিকরা কাউকেই বিশ্বাস করতে চাচ্ছেন না।’
উল্লেখ্য, ১২০ থেকে ৩০০ টাকায় দৈনিক মজুরি উন্নতকরণের দাবিতে সিলেটসহ সারা দেশের চা শ্রমিক ৯ আগস্ট থেকে আন্দোলনে নামেন। ৯ থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত তারা ২ ঘণ্টা কর্মবিরতি পালনের পর গত ১৩ আগস্ট থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন করছেন। আন্দোলন থামাতে শ্রম অধিদপ্তরের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক হলেও সমাধান আসেনি। চলমান জটিলতা নিরসনে সর্বশেষ গত ২০ আগস্ট মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলস্থ বিভাগীয় শ্রম দফতর অফিসে মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ, শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরী ও চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেণ পাল বৈঠকে বসেন। তিনপক্ষীয় ওই বৈঠকে চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা করার সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে নেতারা এ সিদ্ধান্ত মেনে আসলেও শ্রমিকরা তা প্রত্যাখ্যান করে ৩শ’ টাকা মজুরির দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এ অবস্থায় ওই দিন রাতে সিলেট ভ্যালির শ্রমিক নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন জেলা প্রশাসক। এসময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করার আহ্বান জানানো হয় চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দের প্রতি। সে আহ্বান মেনেও নেন স্থানীয় চা শ্রমিক নেতারা। কিন্তু সাধারণ চা শ্রমিকরা তা প্রত্যাখান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
এক পর্যায়ে ২১ আগস্ট রাতে জেলা প্রশাসন, শ্রমদপ্তরের প্রতিনিধি, শ্রমিক ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে এক বৈঠকে ১২০ টাকা মজুরি রেখেই কাজে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। প্রস্তাব মেনে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন ইউনিয়নের নেতারা। এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে আবারও কর্মবিরতি অব্যাহত রাখেন সিলেট বিভাগের বেশিরভাগ চা শ্রমিক। এ অবস্থায় ওইদিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে সিলেটের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ফের চা শ্রমিকদের নিয়ে বৈঠক হয়। বৈঠকে সিলেটের জেলা প্রশাসক চা শ্রমিকদের চলমান আন্দোলনের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবগত আছেন বলে চা শ্রমিক নেতাদের জানান। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর শেষে দেশে ফিরে চা শ্রমিক নেতাদের নিয়ে বৈঠক করবেন। বৈঠকে এর সমাধান করা হবে বলে আশ্বস্ত করেন জেলা প্রশাসক। তবে বৈঠকে উপস্থিত বেশিরভাগ চা শ্রমিক এবং পঞ্চায়েত প্রধানরা প্রশাসনের প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করে তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।’
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল