চট্টগ্রাম শহর থেকে কক্সবাজার, বান্দরবান ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষের যাতায়াতের অন্যতম প্রধান মাধ্যম তৃতীয় কর্ণফুলী সেতু। প্রতিদিন এ সেতু দিয়েই চলাচল করে ছোট-বড় ৫০ হাজারের বেশি যানবাহন। কিন্তু অত্যন্ত জরুরি ও ব্যস্ততম সেতুটি এ অঞ্চলের মানুষদের জন্য ক্রমশ ‘দুর্ভোগের প্রতীকে’ পরিণত হচ্ছে।
সেতুতে টোল আদায় ও যান পারাপার দ্রুত করতে চালু করা ‘ফাস্ট ট্র্যাক’ পদ্ধতি এখন ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। টোল আদায়ের ছয়টি লেনের মধ্যে দুটি ফাস্ট ট্র্যাক পদ্ধতির জন্য নির্ধারিত করে দেওয়ায় দীর্ঘতর হচ্ছে যানজট। নাভিশ্বাস উঠছে যাত্রীদের। ডিজিটাল পদ্ধতি ভোগান্তি কমানোর পরিবর্তে এখন বেড়েই গেল বলে অভিযোগ যাত্রী ও চালকদের।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ২৭ অক্টোবর ফাস্ট ট্র্যাক পদ্ধতি প্রকল্পটির উদ্বোধন করা হয়। গত ১ জানুয়ারি থেকে ফাস্ট ট্র্যাক পদ্ধতি চালু হয়। এরপর থেকে শুরু হয় মাত্রাতিরিক্ত ভোগান্তি। পাঁচ মিনিটের সেতু পার হতে সময় লাগছে ৩০ থেকে ৫০ মিনিট পর্যন্ত।
অভিযোগ আছে, টোল আদায় করতে ফাস্ট ট্র্যাক পদ্ধতি চালু করলেও এ ব্যাপারে মালিক-চালকদের প্রয়োজনীয় দক্ষ ও সচেতন করে তোলা হয়নি। ফলে চালকরা পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত না হওয়ায় এটি ব্যবহারে আগ্রহী নয়। গত ১০ দিনে মাত্র ৫০টি গাড়ি ফাস্ট ট্র্যাক পদ্ধতিতে নিবন্ধন হয়েছে।
পটিয়াগামী একটি বাসের চালক কামাল উদ্দিন বলেন, ‘টোল আদায় পদ্ধতি পরিবর্তন করা হয়েছে। কিন্তু বিষয়টি সম্পর্কে আমরা তেমন কিছু জানি না। পাঁচ মিনিটের সেতু পার হতে লাগছে ৩০ মিনিট।’
সওজ চট্টগ্রাম বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জুলফিকার আহমেদ বলেন, ফাস্ট ট্র্যাক পদ্ধতি এখনো চালকের কাছে নতুন হওয়ায় ঝামেলার মনে হচ্ছে। আস্তে আস্তে অভ্যস্ত হয়ে গেলে সমস্যা আর থাকবে না। তাছাড়া ভোগান্তি নিরসনের আরো দুটি লেন বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
শুক্রবার সকাল ১১টায় সেতুর উত্তর পাড় এলাকায় দেখা যায়, দক্ষিণ চট্টগ্রামের হাজারো মানুষ অপেক্ষা করছে যানবাহনের জন্য। কারণ সেতুতে যানজটের ফলে দেখা মিলছে না যানবাহনের। সেতুর ওপর থেকে শুরু করে টোল প্লাজা পর্যন্ত প্রায় অর্ধ কিলোমিটার যানজটে স্থির হয়ে আছে। দ্রুত টোল আদায় না হওয়ায় উভয় পাশে যানজট দীর্ঘতর হয়। চরম দুর্ভোগের পড়েন যাত্রীরা।
প্রসঙ্গত, ফাস্ট ট্র্যাকের সংরক্ষিত লেন দিয়ে শুধু গাড়ির ডিজিটাল নম্বর প্লেটধারী এবং নিবন্ধিত গাড়িগুলো পার হতে পারবে। এ সব গাড়ির গ্লাসে লাগানো রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেনটিফিকেশন (আরএফআইডি) ট্যাগের সঙ্গে টোল গেটের অ্যানটেনার সংকেতের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে টোল আদায় হবে। গাড়ি টোল প্লাজা পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি কর্তৃপক্ষের নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্ট থেকে টোলের টাকা সেতু কর্তৃপক্ষের অ্যাকাউন্টে চলে আসবে। আর রকেট অ্যাকাউন্টে টাকা না থাকলে গাড়ির চালক-মালিককে জরিমানা গুণতে হবে।
জরিমানা এড়াতে রকেট অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত টাকা রাখতে হবে। তবে এ পদ্ধতিতে টোল প্রদানে গাড়ির চালক-মালিক কর্তৃপক্ষকে গাড়ির ডিজিটাল নম্বর প্লেট, নির্দিষ্ট একটি ফরম পূরণ ও রকেট অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়। কিন্তু চালকরা এতসব ঝামেলায় জড়াতে চান না বলে জানা যায়।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল