অনলাইন টিকেট বা ৫ দিন আগেই টিকেট বিক্রির কাজগুলো আগেই শেষ না করে গত ২০ মার্চ থেকে ম্যানুয়ালী টিকেট বিক্রির কাজ শুরু করেছে রেলওয়ে। আগামী ২৫ মার্চ পর্যন্ত ৫ দিনের জন্য অনলাইন ট্রেনের টিকিট বিক্রি বন্ধ রয়েছে। এই সময়ে প্রতিটি কাউন্টার থেকে ‘ম্যানুয়ালী’ টিকেট ইস্যু করা হচ্ছে। এতে প্রতিটি কাউন্টারে দীর্ঘলাইন, ভোগান্তি ও বিশৃংখলার সৃষ্টি হচ্ছে।
এরই মধ্যে সোমবার থেকে বিভিন্ন রুটের সূবর্ণা এক্সপ্রেস, পাহাড়িকা, মহানগর গোধুলীসহ সবকটি ট্রেনের অনেকগুলো সিটও খালি যাচ্ছে। ট্রেনের সাধারণ যাত্রীরা অনলাইন ও ৫ দিন আগের টিকেট ব্যবস্থার সমাধান না হওয়ায় দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে হাত বদলের খেসারত দিচ্ছেন বলে জানান রেলওয়ের সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্টরা।
রেলওয়ের উর্ধ্বতন বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা বলছেন, সিএনএসের বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরেই অনলাইনে ট্রেনের টিকিট ক্রয়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন অভিযোগ পেয়েছি। সেগুলো খতিয়ে দেখেছি। এতদিন আমরা সিএনএস এর কাছে অনেকটা জিম্মি ছিল। সিএনএসের কিছু সংখ্যক স্টাফের বিরুদ্ধে টিকেট কালোবাজারিসহ নানা অভিযোগও ছিল। তবে অনেক আইনি জটিলতা পেরিয়ে নতুনভাবে টিকেটিং কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। আশা করি এখন থেকে আর অনলাইন টিকিটিংয়ে কোনো সমস্যা হবে না বলে জানান শীর্ষ কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে প্রধান বাণিজ্য কর্মকর্তা (সিসিএম-পূর্ব) মো. নাজমুল ইসলামকে ফোন দেয়া হলে তিনি মিটিং এ আছেন বলে ফোন কেটে দেন।
রাশেদ নামের ঢাকাগামী তূর্ণাশিনিতা ট্রেনের এক যাত্রী বলেন, ঢাকায় চাকরির সুবাদে নিয়মিত ট্রেন ভ্রমণ করতে হয়। হঠাৎ তেমন কোন ধরণের প্রচারণা ছাড়াই অনলাইনে টিকেট পাওয়া যাচ্ছে না। খবর নিয়ে ষ্টেশনে এসেই দেশি দীর্ঘলাইন। কষ্ট করে ম্যানুয়ালী টিকেট সংগ্রহ করলাম। তবে এই সমস্যার-সমাধানগুলো যদি আগে করা যেতো বা আরো প্রচারণা হতো, তাহলে এতো বিশৃংখলা বা সমস্যার সৃষ্টি হতো না।
গোধুলী ট্রেনের যাত্রী আজম বলেন, ম্যানুয়ালী টিকেট নিয়ে ট্রেন ভ্রমন করছি। এই ট্রেনের অনেক সিট খালি দেখাচ্ছে। কি কারণে সিট খালি জানি না। তবে টিকেটের জন্য যাত্রীরা দীর্ঘলাইনে রয়েছেন বলে জানান তিনি।
চট্টগ্রাম রেলওয়ে ষ্টেশন ম্যানেজার (এসএমআর) রতন কুমার দে বলেন, মালিকানা পরিবর্তনের কারণে অনলাইনসহ সব ধরণের টিকেট কাউন্টার থেকে সংগ্রহ করতে হচ্ছে যাত্রীদের। এতে সোমবার থেকে ম্যানুয়ালী টিকেট নিয়ে যাত্রীরা ট্রেন ভ্রমণ শুরু করেছেন। আগে থেকেই অর্ধেক বা ৫০ শতাংশ টিকেট অনলাইন থাকার কারণে হয়তো সিট খালি যাচ্ছে। এটা কাল থেকেই ঠিক হয়ে যাবে বলে জানান তিনি।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, টানা দীর্ঘ দেড় যুগ পরেই প্রতি টিকেটের দাম বৃদ্ধিসহ নানা কারণে ট্রেনের টিকেটিং সিষ্টেম প্রতিষ্ঠান কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম (সিএনএস) লিমিটেড থেকে সহজের মধ্যে হাত বদল হয়েছে। এই হাত বদলের কারণে আগামী ২৬ মার্চ থেকে সহজ'র মাধ্যমেই দেশের সকল যাত্রীরা অনলাইনসহ নানাভাবে ট্রেনের টিকেট ক্রয় করবেন। আগামী পাঁচ বছরের জন্য টিকেটের ‘সহজ’ লিমিটেডের জয়েন্ট ভেঞ্চাররে সঙ্গে সম্প্রতি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ২১ দিনের মধ্যে মোবাইল ও ইন্টারনেট টিকিটসহ বাংলাদেশ রেলওয়ে ইন্টিগ্রেটেড টিকিটিং সিস্টেমের (বিআরআইটিএস) ডিজাইন, ডেভেলপমেন্ট, সাপ্লাই, ইনস্টল, কমিশন, অপারেট ও মেইনটেন্যান্স কাজ শুরু করবে সহজ (জেভি)।
চুক্তিতে প্রতিটি টিকিট ইস্যুর জন্য সহজ (জেভি) কমিশন নেবে ২৫ পয়সা। একই কাজের জন্য ২ টাকা ৯৯ পয়সায় চুক্তি ছিল সিএনএস’র সঙ্গে। এখন থেকে টিকিটপ্রতি ২৫ পয়সা কমিশনে সহজের সঙ্গে চুক্তি করায় টিকিট ব্যবস্থাপনা বাবদ রেলওয়ের বছরে সাশ্রয় হবে প্রায় ৮৩ কোটি টাকা। এটি রেলভবনে বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সরদার শাহাদাত আলী ও সহজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মালিহা কাদির নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ২৫ ফেব্রুয়ারী চুক্তিপত্রে সই করেন।
আরো জানা গেছে, গত ২০ মার্চ পর্যন্ত সিএনএস লিমিটেড কর্তৃক রেলের আন্তঃনগর ট্রেনের কম্পিউটারাইজড টিকেটিং পরিচালনা করার কথা ছিল। এরপর ৭৭টি স্টেশনে সহজ-সিনেসিস-ভিনসেন জেভি কর্তৃক কম্পিউটার টিকেটিং সিস্টেম পুনরায় সচল রাখার জন্য সিস্টেমে কিছু কারিগরী ও প্রযুক্তিগত কার্যক্রম সম্পাদন করতে এই পাঁচ দিন সময় প্রয়োজন হয়। তাই টিকেট ইস্যু কার্যক্রম একদিনও বন্ধ না রাখার জন্য সোমবার ২১ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত পাঁচ দিন অনলাইনে এবং কাউন্টারে কম্পিউটারের মাধ্যমে টিকিট ইস্যু করার পরিবর্তে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে শতভাগ টিকিট করা হচ্ছে। এরপর ২৬ মার্চ হতে সহজ-সিনেসিস-ভিনসেন জেভি’র (সহজ) মাধ্যমে রেলওয়ের কম্পিউটারাইজড টিকেটিং সিস্টেম পুনরায় চালু করা হবে। আর ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে পাঁচ দিনের পরিবর্তে দুই দিনের অগ্রীম টিকিট ইস্যু করা হবে এবং এক্ষেত্রে সব টিকিট উন্মুক্ত থাকবে। এতে কোন কোটা বা আসন সংরক্ষিত থাকবে না।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল