চট্টগ্রাম নগরের ইয়াকুব আলী দোভাষ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের কাবাডি দলের ছাত্রীদের কয়েকজনকে বকাঝকা, মারধর ও ফ্রেঞ্চ স্টাইলে বেণী করার কারণে চুল ধরে টানাটানি করার অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষিকা নিপা চৌধুরীর বিরুদ্ধে। ছাত্রীদের সঙ্গে প্রধান শিক্ষিকার এমন আচরণে স্কুলের শরীর চর্চা শিক্ষিকা জাহিদা পারভীন নিজের মাথার সব চুল কেটে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
অভিযোগ উঠেছে, এ ঘটনার পর জাহিদা পারভিন গত বৃহস্পতিবার স্কুলে গেলে কর্তৃপক্ষ তাকে প্রবেশ করতে দেননি। তাছাড়া মাথা ন্যাড়া করার কারণে জোর করে তাকে পদত্যাগ করানো হয়েছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
এ নিয়ে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে তোলপাড় শুরু হয়। চারদিকে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বিষয়টি নিয়ে শরীর চর্চা শিক্ষিকা জাহিদা পারভীন শুক্রবার গণমাধ্যমের সঙ্গে কথাও বলেন। বিষয়টি নিয়ে এদিন সন্ধ্যায় শিক্ষা বিভাগে বৈঠক হয়।
জানা যায়, থানা পর্যায়ের গ্রীষ্মকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে ইয়াকুব আলী দোভাষ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১২ জন মেয়ের একটি কাবাডি দল গঠন করা হয়। ম্যাচটি ছিল গত ৮ সেপ্টেম্বর। কাবাডির নিয়ম অনুযায়ী, চুলে ক্লিপ লাগানো যায় না। চুল চোখের সামনে চলে আসায় মেয়েদের খেলতে অসুবিধা হয়। এ কারণে তারা ফ্রেঞ্চ স্টাইলে চুলের বেণী করে। নিয়ম অনুযায়ী, ম্যাচের একদিন আগে অংশগ্রহণকারী দলের ছবি তুলে কো-অর্ডিনেটরের কাছে জমা দিতে হয়। কিন্তু আগের দিন ৭ সেপ্টেম্বর ছিল ছাত্রীদের টেস্ট পরীক্ষা। পরীক্ষা শেষে ছবি তোলার জন্য ছাত্রীদের জার্সি তৈরি করা হয়।
শরীর চর্চা শিক্ষিকা জাহিদা পারভীন বলেন, ওইদিন জার্সি পরে ছবি তুলতে প্রস্তুত করে আমি ওয়াশ রুমে যাই। সেখান থেকেই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার চিৎকার-চেঁচামেচি শুনি। বের হয়ে দেখি প্রধান শিক্ষিকা ছাত্রীদের বকাঝকা করেছেন। কয়েকজন ছাত্রীকে চুল ধরে মারধর করেছেন। দুই মেয়েকে কান্না করতেও দেখি। তখন প্রধান শিক্ষিকাকে জানাই যে, আমি ছাত্রীদের বেণী করতে বলেছি। এ কথা শুনে তিনি আমার সঙ্গেও খারাপ আচরণ করেন। পরে ছাত্রীদের সান্ত্বনা দিই। কিন্তু প্রধান শিক্ষিকার কারণে পরের দিন ম্যাচে অংশ নিতে দেরি হয়।
তিনি বলেন, ৮ সেপ্টেম্বর ছিল মডেল টেস্ট। প্রধান শিক্ষিকা পরীক্ষা শেষ করে খেলতে যেতে বলেছিলেন। রিপোর্টিং করার কথা ছিল সকাল নয়টায়। কিন্তু মাঠে পৌঁছাতে ৩৫ মিনিট দেরি হয়। গিয়ে শুনি প্রতিপক্ষ দল ওয়াকওভার পেয়ে গেছে। কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি আগে জানালেও কাজ হয়নি। তবে শিক্ষার্থীদের বকা, অপমান ও চুল ধরে টানাটানির প্রতিবাদে গত ১৩ সেপ্টেম্বর আমি মাথা ন্যাড়া করি। এ নিয়ে ২২ সেপ্টেম্বর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও লিখি। তবে ঘটনার পরই আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম।
জাহিদা পারভীনের অভিযোগ, আমি মেয়েদের নিয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারি না। খেলার জন্য মেয়েদের নিয়ে কোনো টিম করতে চাইলে স্কুল কর্তৃপক্ষ বাধা দেয়। স্কাউট করতে দেওয়া হয় না। মেয়েদের নিয়ে স্কুলের বাইরে যেতে দেয় না। চুল ন্যাড়া করার পর আমাকে স্কুল কর্তৃপক্ষ হুমকিও দিচ্ছে। বৃহস্পতিবার স্কুলে গেলে কর্তৃপক্ষ আমাকে প্রবেশ করতে দেয়নি। তাছাড়া মাথা ন্যাড়া করার কারণে জোর করে আমাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা নিপা চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেছেন, ছাত্রীদের বকাবকি বা মারধর করিনি। তাদের সঙ্গে আমি স্বাভাবিকভাবে ছবি তুলেছি। ছবি তোলার আগে তাদের বলেছিলাম, এভাবে (ফ্রেঞ্চ স্টাইলে) বেণী করলে তো হবে না। স্কুলে সব সময় যে বেণী করে আসো, সেভাবে করো। কেবল এটুকু বলেছি। এখানে মারামারি বা বকাঝকার কোনো ঘটনা ঘটেনি। তাছাড়া, পরীক্ষা দিতে আমি ছাত্রীদের বাধ্য করিনি। আমি শিক্ষিকাকে (জাহিদাকে) বলেছিলাম মডেল টেস্ট না দিলে কিছু হবে না। কিন্তু তিনি বলেছেন, ছাত্রীরা পরীক্ষা দিক, তিনি কো-অর্ডিনেটরকে বলে রেখেছেন যেতে কিছুটা দেরি হবে।
নিপা চৌধুরী বলেন, জাহিদার পদত্যাগে আমরা কোনো ধরনের চাপ দিই নাই। বরং তিনি শিক্ষাদানের যোগ্য নন উল্লেখ করে আরও সাত-আটদিন আগে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। তাকে স্কুলে ঢুকতে না দেওয়ার বিষয়টিও মিথ্যা। স্কুলে সিসিটিভির ফুটেজ সব আছে।
কোতোয়ালি থানা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জিয়াউল হুদা ছিদ্দিকী বলেন, শিক্ষিকার মাথার চুল কাটার বিষয়টি আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আগামী রবিবার স্কুল খুললে এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মতে কাজ করব। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে।
তিনি বলেন, ম্যাচের দিন ছাত্রীদের আসতে দেরি হওয়ার বিষয়টি আমাকে আগে জানানো হয়নি। ছাত্রীদের খেলতে না দেওয়ার বিষয়েও কিছু জানাননি। তবে নির্ধারিত সময়ের দুই ঘণ্টা পর খেলার মাঠে পৌঁছেছেন বলে জানতে পেরেছি।
জাহিদা পারভীনের পদত্যাগের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা জেনেছি তিনি নিজ থেকে পদত্যাগ করেছেন। কাউকে জোরপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য করার সুযোগ নেই।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ
