টানা তিন দফা পিছিয়ে আবারো সম্মেলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ। কেন্দ্রের নির্দেশে আগামী মার্চ মাসের ১১ তারিখে সম্মেলনের জন্য সম্ভাব্য তারিখ ধরে যাবতীয় প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে সংগঠনটি। এতে করে দীর্ঘদিন ধরে সম্মেলন না হওয়া এই ইউনিটের পদ প্রত্যাশীদের মধ্যে উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘গত সপ্তাহের শেষ দিকে চট্টগ্রামের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ঢাকায় বৈঠক হয়। তারা আগামী ১১ মার্চকে সম্ভাব্য তারিখ ধরে সম্মেলনের দিকে এগোতে বলেছেন। তবে তারিখটি এখনো চূড়ান্ত নয়। আমরা কাজ এগিয়ে নিচ্ছি। কেন্দ্র থেকে চূড়ান্ত ঘোষণা দেয়া হবে।’
জানা গেছে, ২০১৩ সালে কেন্দ্র থেকে সম্মেলন ছাড়া চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটি ঘোষণা হয়। তার আগে সর্বশেষ সম্মেলন হয় ২০০৯ সালে। এর ১৩ বছর পর গত ১ অক্টোবর নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা হলে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিপুল উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। কিন্তু নানা অজুহাতে তিনবার সম্মেলন স্থগিত হয়।
চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীকে সভাপতি ও আ জ ম নাছির উদ্দীনকে সাধারণ সম্পাদক করে কেন্দ্র থেকে নগরের সর্বশেষ কমিটি ঘোষিত হয় ২০১৩ সালের ১৪ নভেম্বর। ২০১৭ সালে মহিউদ্দিন চৌধুরী মৃত্যুর পর কমিটির সহ-সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী পান ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব। তার আগে ২০০৯ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে মহিউদ্দিন চৌধুরীকে সভাপতি ও এনামুল হাক দানুকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি হয়েছিলো। এরপর আর কোনো সম্মেলন হয়নি।
এর দীর্ঘ ১৩ বছর পর গত বছরের ২৫ মে এক সাংগঠনিক সভায় গত ১ অক্টোবর মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন করার ঘোষণা দেন কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ ও সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ। ওই তারিখে সম্মেলন না হওয়ায় গত ২৬ অক্টোবর নগরীর ১৫ থানার সাংগঠনিক টিমের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর ৪ ডিসেম্বরকে পুনরায় সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়। এরমধ্যে ৪ ডিসেম্বর দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চট্টগ্রামের জনসভার কারণে আবারো সম্মেলন স্থগিত হয়। এরপর জনসভা পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রের নির্দেশে ১৮ ডিসেম্বর সম্মেলন করার ঘোষণা দেন নেতারা। কিন্তু এরমধ্যে কেন্দ্রীয় সম্মেলনের অজুহাতে আবারো পেছানো হয় সম্মেলন। সর্বশেষ গত বুধবার কেন্দ্র থেকে আবারো সম্মেলন প্রস্তুতি নিতে বলা হয়।
নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন বার বার পেছানোর কারণে নেতাকর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরী হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আগমনের কারণে তারিখ পেছানোকে যৌক্তিক মনে করলেও অন্য দুইবার সম্মেলন পেছানোর কারণে অনেক ধরণের মন্তব্য রয়েছে। তিন তিনবার সম্মেলন স্থগিত হওয়ায় ওয়ার্ড-থানা সম্মেলন না হওয়াকে দায়ী করছেন কেউ কেউ।
২০২১ সালের ১৬ নভেম্বর চট্টগ্রামের ৪৪টি সাংগঠনিক ওয়ার্ডে ইউনিট সম্মেলন শুরু করে আওয়ামী লীগ। সেই সম্মেলন নিয়ে সংঘাত ও বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পর কেন্দ্র থেকে ওই বছরের ২৩ ডিসেম্বর ওয়ার্ড সম্মেলন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। ইউনিটগুলোর সম্মেলনে বিভিন্ন ওয়ার্ডে সম্মেলনস্থল ঘিরে পাল্টাপাল্টি অবস্থান, পাল্টা সম্মেলন ও এমনকি জ্যেষ্ঠ নেতাকে অবরুদ্ধ করে রাখার মতো ঘটনাও ঘটে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল