১৯৫৩ সালের সরকার পরিবর্তন থেকে শুরু করে ২০২৫ সালের সাম্প্রতিক মার্কিন হামলা—ইরান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক টানাপোড়েন, শত্রুতা ও সংঘাতের মধ্য দিয়েই এগিয়েছে দেশ দুটির মধ্যকার সম্পর্ক। পারমাণবিক কর্মসূচি, আঞ্চলিক আধিপত্য ও সামরিক হুমকি এই সম্পর্কের প্রধান ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে।
১৯৫৩ সালে ইরানের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মোসাদ্দেক ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রিত অয়েল কোম্পানি জাতীয়করণ করতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র সহায়তায় তাঁকে উৎখাত করে পশ্চিমাপন্থী শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভিকে পুনরায় ক্ষমতায় বসানো হয়। ১৯৭৯ সালে আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনির নেতৃত্বে ইসলামি বিপ্লব ঘটে এবং শাহের শাসন শেষ হয়। তখন থেকেই ইরান যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠে।
১৯৮০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্টার ইরানের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেন। একই বছর ইরাক-ইরান যুদ্ধ শুরু হলে যুক্তরাষ্ট্র ইরাকের পক্ষে অবস্থান নেয়। ১৯৮৮ সালে পারস্য উপসাগরে ইরান এয়ারের যাত্রীবাহী বিমান ভুলবশত ভূপাতিত করে যুক্তরাষ্ট্র, এতে ২৯০ জন নিহত হয়।
১৯৯৫-৯৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ওপর কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ২০০২ সালে প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ ইরানকে "অক্ষের দুষ্ট শক্তি" হিসেবে অভিহিত করেন। ২০১৫ সালে ওবামা প্রশাসনে ইরান পারমাণবিক চুক্তিতে (JCPOA) স্বাক্ষর হয়, তবে ২০১৮ সালে ট্রাম্প প্রশাসন একতরফাভাবে চুক্তি থেকে সরে যায় এবং নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্র বাগদাদে ড্রোন হামলা চালিয়ে ইরানের কুদস বাহিনীর প্রধান জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যা করে। পাল্টা প্রতিশোধ হিসেবে ইরান ইরাকে মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা চালায়।
২০২৫ সালের মার্চে ট্রাম্প প্রশাসন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির কাছে নতুন পারমাণবিক চুক্তির প্রস্তাব পাঠায়, যা ইরান প্রত্যাখ্যান করে। একই বছরের জুনে ইসরায়েল ইরানের ওপর ব্যাপক হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি তেহরানে তিনটি মূল পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা চালায়। ওয়াশিংটন দাবি করেছে, এসব হামলায় ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে। তবে তেহরান পাল্টা প্রতিশোধের হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
এই দীর্ঘ ইতিহাস ইঙ্গিত দেয়, ইরান-যুক্তরাষ্ট্র সংঘাতের পথ এখনো বন্ধ হয়নি।
সূত্র: আল জাজিরা
বিডি প্রতিদিন/আশিক