ঘুর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে সৃষ্ঠ জলোচ্ছাস ও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে দেশের অন্যতম বৃহত্তর পাইকারী বাজার চাকতাই-খাতুনগঞ্জের বাণিজ্যিক এলাকা। এছাড়া নগরীর বাকলিয়া, মিয়াখান নগর, চকবাজার ও বহদ্দারহাট এলাকাও প্রায় দুই ফুট পানিতে ডুবে গেছে। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম হলেও জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হওয়ায় এই প্লাবন সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
এদিকে মহেশখালে বাঁধের কারণে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়ার পর শনিবার বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জোয়ারের পানি নামতে না পারায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে হালিশহর, বৃহত্তর আগাবাদ এলাকা। এসময় এলকার জনগণ ক্ষিপ্ত হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের তৈরি মহেশখাল বাঁধ ভাঙার চেষ্টা করে ক্ষতিগ্রস্ত কয়েক হাজার মানুষ। বাধা দিতে গেলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন এসব এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ গুলি ছুঁড়লে এতে বন্দর থানার ওসি একেএম মহিউদ্দিন সেলিমসহ কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছেন।
শনিবার দুপুর ২টার দিকে নগরীর বন্দর রিপাবলিক ক্লাবের পাশে এ ঘটনা ঘটেছে।
এদিকে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ. জ. ম নাছির উদ্দিন। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলরদের নিয়ে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলেন। শনিবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ এলাকা পরিদর্শনে গেলে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ ওই এলাকার উন্নয়নের জন্য লিখিতভাবে ১০ দফা দাবি পেশ করেন। মেয়র ব্যবসায়ীদের ক্ষয়ক্ষতি দেখে সহমর্মিতা প্রকাশ করেন এবং যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দেন। এসময় মেয়র নিজেই অনেকগুলো সমস্যা চিহ্নিত করেন এবং তা সমাধানে প্রয়োজনীয় উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহনের জন্য সঙ্গে থাকা কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলীসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিদের্শ দেন।
এদিকে ২০১৫ সালে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃক নির্মিত মহেশখালের বাঁধ ও স্লুইস গেইট বসানোর কারণে মহেশখালের বিপরীতের জনপদগুলো ভয়াবহ জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে বলে অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা। তারা জানান, শনিবার দুপুরে রোয়ানু আঘাত হানার পর মহেশখাল বাঁধের বিপরীতে বিস্তির্ণ এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। নগরীর পোর্ট পুরাতন মার্কেট, এছাক ব্রাদার্স কন্টেইনার ইয়ার্ড, আদর্শ পাড়া, দিঘীর পাড়া, মুন্সী পাড়া, এক নম্বর সাইট পাড়া, নিশ্চিন্তা পাড়া, ধোপপুল, মাইজ পাড়া, ঈশান মিস্ত্রীর হাট, পুরাতন ডাকঘর, হাজী আব্দুল মালুম বাড়ী এলাকার কোথাও কোমর সমান পানি আবার কোথাও হাঁটু পানিতে তলিয়ে যায়। এসব এলাকার কয়েক হাজার বাসিন্দার ঘরে পানি উঠে যায়।
এ ব্যাপারে বন্দর থানার ওসি একেএম মহিউদ্দিন সেলিম বলেন, জলাবদ্ধতার শিকার হয়ে জনতার মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এসময় তারা সংঘবদ্ধ হয়ে মহেশখাল বাঁধ ভেঙ্গে দেয়ার জন্য আসে। খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গেলে তারা আমাদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এসময় আমরা ৩০ থেকে ৩৫ রাউণ্ড শটগানের গুলি এবং চার রাউণ্ড টিয়ার শেল ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি।
ইটের আঘাতে তার ডান হাত মারাত্মকভাবে জখম হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সংঘর্ষের পর পুলিশ মহেশখাল বাঁধ ঘিরে পাহারা বসিয়েছে। তবে এখনও থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
বিডি-প্রতিদিন/ ২১ মে ১৬/ সালাহ উদ্দীন