ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেছেন, ‘শিক্ষকদের সম্মানজনক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রে শিক্ষা খাতে অগ্রাধিকার দিতে হবে। তাতে মেধাবী শিক্ষার্থী পাওয়া যাবে। মেধাবী শিক্ষার্থীরা শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত হতে আগ্রহী হবে। মেধাবী শিক্ষক না হলে শিক্ষার মান বৃদ্ধি পাবে না। জাতীয় অগ্রগতিও সম্ভব নয়।’
শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন মিলনায়তনে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত ‘জন-বাজেট-সংসদ’ শীর্ষক ছায়া বাজেট সংসদে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এতে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ‘জন-বাজেট-সংসদ’র উদ্বোধন করেন অর্থ-মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ড. আব্দুর রাজ্জাক।
জাতীয় পরিকল্পনা ও বাজেট সম্পর্কিত সংসদীয় ককাস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার অন বাজেট অ্যান্ড পলিসি এবং গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলনের যৌথ উদ্যোগে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক শিক্ষাখাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ এবং অগ্রাধিকারের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘শিক্ষিত জনগোষ্ঠীই সর্বোত্তম প্রতিরক্ষা। প্রতিরক্ষা খাতের প্রয়োজন আছে। তবে দক্ষ জনশক্তি না থাকলে, শিক্ষিত মানবসম্পদ না থাকলে ভাল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পাওয়া যাবে না। দক্ষ ডাক্তার না থাকলে ভাল স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যাবে না। কৃষিতে ভাল ছাত্র না থাকলে ভাল কৃষি বিশেষজ্ঞ পাওয়া যাবে না। সুশিক্ষিত রাজনীতিবিদ না থাকলে দেশকে এগিয়ে নেয়া যাবে না।’
নারায়ণগঞ্জে শিক্ষক লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে উপাচার্য বলেন, ‘দায়িত্বের দিক থেকে আমাদের সকলকে সংবেদনশীল হতে হবে। শিক্ষককে সম্মান করতে হবে। একজন জনপ্রতিনিধি যদি শিক্ষককে হেয় করেন তাহলে সেটা অত্যন্ত দুঃখজনক।’
তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা ৮ম শ্রেশি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা পুনঃসংস্কারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। অথচ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কুদরত-এ-খোদা শিক্ষা কমিশন গ্রহণ করে শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়ে সর্বোপরি রেখেছিলেন প্রাথমিক শিক্ষা। আজকে তাই সবচেয়ে অগ্রাধিকারের বিষয় হলো প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে অধিকতর বরাদ্দ বৃদ্ধি করা। প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে মানসম্মত শিক্ষা এবং অভিজ্ঞ শিক্ষক বিশেষ প্রয়োজন। উচ্চ শিক্ষা পর্যায়ে শিক্ষকরা যেমন বিদেশে গিয়ে পড়াশুনা ও প্রশিক্ষণের সুযোগ গ্রহণ করেন সেরকম প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক শিক্ষকদেরও সে সুযোগ দিতে হবে। সে জন্য শিক্ষা খাতে জাতীয় বাজেট বাড়ানো আবশ্যক।’
ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘এই ‘ছায়া বাজেট সংসদ’-এর বিশ্লেষণধর্মী ও বাস্তবসম্মত প্রস্তাবনা গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলনে এক সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে সাফল্য লাভ করবে- যদি দেশে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ বিরাজ করে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। শিক্ষায় বাজেট বরাদ্দের বিকল্প নেই তবে পল্লী বাংলার দিকেও দৃষ্টি দিতে হবে। কল্যাণমূলক বাজেট পেতে হলে জনগণকেও অংশগ্রহণের দায়িত্ব নিতে হবে, নিয়মিতভাবে সকলকে কর দিতে হবে।’ জনসম্পৃক্ততা নিয়ে বাজেট প্রণয়নে এই ‘ছায়া বাজেট সংসদ’ অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- বাজেট সম্পর্কিত সংসদীয় ককাসের সহ-সভাপতি কবি কাজী রোজী এমপি, ককাসের সাধারণ সম্পাদক জনাব নাজমুল হক প্রধান এমপি, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ও জ্যেষ্ঠ সচিব অধ্যাপক ড. শামসুল আলম, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক জামালউদ্দীন আহমদ, একশন এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির, গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলনের সভা প্রধান ড. প্রতিমা পাল মজুমদার প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. কাজী মারুফুল ইসলাম। উদ্বোধনী অধিবেশনে ‘জাতীয় বাজেট ২০১৬-১৭ জনঅংশীদারিত্বের সন্ধানে’ শীর্ষক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন অতিথিরা।
বিডি-প্রতিদিন/ ২১ মে ১৬/ সালাহ উদ্দীন