স্ত্রীর গাইনী সমস্যা নিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে গিয়েছিলেন নগরীর কাউনিয়া প্রধান সড়কের বাসিন্দা সানাউল ইসলাম। চিকিৎসক তার স্ত্রীর রোগ নির্নয়ের জন্য চারটি পরীক্ষা করতে দিলেন। গত ১২ মে তিনি সবগুলো পরীক্ষা করালেন নগরীর সাউথ এ্যাপোলা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। শতভাগ নিশ্চিত হতে পরদিন একই পরীক্ষা ল্যাব এইড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে করান তিনি। এরপর দুটি রিপোর্ট নিয়ে যান বরিশালের একজন গাইনী বিশেষজ্ঞ ও সার্জন শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজের এক সহযোগি অধ্যাপকের প্রাইভেট চেম্বারে। চিকিৎসক সবগুলো রিপোর্ট ওলোট-পালট করে দেখার সময় বিড়বিড় করে কি যেন বলছিলেন। সামনের চেয়ারে বসে রোগী ও তার স্বামী বিষয়টি খেয়াল করে শুনলেন- ডাক্তার বলছেন, এ্যাপোলোর গ্লুকোজ র্যানডম ব্লাড, সিইউএস র্যানডমের রিপোর্টে এসেছে অরেঞ্জ (অরেঞ্জে ১৮ পয়েন্টের বেশি হয়), আবার ল্যাব এইডের রিপোর্টে এসেছে ১৪.৮ (রিপোর্ট নম্বর-১৫১৬০৫০৩৪৩৮১, ডেলিভারি তারিখ : ১৫ মে ২০১৬)। এখন কোনটা যে বিশ্বাস করি! এ নিয়ে চিকিৎসকের দ্বিধাদ্বন্ধ দেখে বিচলিত হয়ে পড়েন রোগী ও তার স্বামী। শেষ পর্যন্ত একটি রিপোর্টকে মোটামুটি আস্থায় নিয়ে রোগীকে ব্যবস্থাপত্র দেন ওই চিকিৎসক। এটা একটা ঘটনা। এভাবে প্রতিনিয়ত ডায়াগনস্টিক রিপোর্ট দেখেও অনুমানের উপর ভিত্তি করে চিকিৎসা করতে হচ্ছে বরিশাল নগরীর চিকিৎসকদের।
জানা গেছে, নারীদের আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট নিয়েও প্রায়ই বিভ্রান্তিতে পড়েন গাইনী চিকিৎসকরা। বিশেষ করে শের-ই বাংলা মেডিকেলের সামনে বান্দ রোডের ডায়াগনস্টিক সেন্টারের আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট যথার্থ হয় না বলে অভিযোগ করেন একজন গাইনী বিশেষজ্ঞ।
নাম না প্রকাশের শর্তে ওই চিকিৎসক বলেন, ডিগ্রিধারী সনোলজিস্ট ডাক্তার হয়েও অনেকে সঠিক রিপোর্ট দিতে পারেন না। কোন সনোলজিস্টের রিপোর্টে সন্দেহের সৃষ্টি হলে অন্য কোন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আবারো ওই একই রিপোর্ট করতে দেন। এরপর দুটি আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট যাচাই করে যেটা সম্ভাব্য সঠিক মনে করেন সেই অনুযায়ী রোগীকে ব্যবস্থাপত্র দেন তিনি।
বরিশালের আরেকজন গাইনী বিশেষজ্ঞ বলেন, পরীক্ষা নিরীক্ষার রিপোর্ট যথার্থ না হলে রোগীর ভোগান্তি হয়, দ্বিতীয়বার পরীক্ষা করাতে অতিরিক্ত অর্থ খরচ হয়, চিকিৎসকরাও বিভ্রান্ত হয়। রোগীর সু-চিকিৎসার জন্য রোগ নির্নয় করা জরুরি। এজন্য প্রতিটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে দক্ষ সনোলজিস্ট্র রাখা আবশ্যক। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেটা নেই।
বরিশাল ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স এ্যাসোশিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সহযোগি অধ্যাপক ডা. জহুরুল হক মানিক বলেন, যিনি রিপোর্ট করেন তার দক্ষতার উপর সঠিক রিপোর্ট নির্ভর করে। কেউ-ই খারাপ রিপোর্ট করতে চান না। অনেক সময় চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট দেখে কনফিউজড হন। তখন অন্য ডায়াগনস্টিক সেন্টারে দ্বিতীয়বার ওই পরীক্ষা করিয়ে দুটি রিপোর্ট পর্যালোচনা করে রোগীকে ব্যবস্থাপত্র দিতে হয়। তিনি স্বীকার করেন, মাঝে মধ্যে কোন কোন রিপোর্টে একটু হের ফের হয়ে যায়।
বরিশালের সিভিল সার্জন ডা. এএফএম শফিউদ্দিন বলেন, জেলার ১০ উপজেলা এবং নগরীতে ২ শতাধিক প্যাথলজি এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। এরমধ্যে জেলায় ৩০ ভাগের এবং নগরীতে ২০ ভাগের লাইসেন্স নেই। যাদের লাইসেন্স আছে, তাদের দক্ষ লোকবল নেই। তিনি বলেন, টেকনিশিয়ান পরীক্ষা-নিরীক্ষার উপাদান প্রস্তুত করবেন। কিন্তু রিপোর্ট করবেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। তিনি বলেন, কেউ ৩ মাসের কোর্স করে কিংবা কারো কাছ থেকে শিখে রিপোর্ট তৈরি করেন, আবার কেউ ২ বছরের কোর্স সম্পন্ন করে রিপোর্ট তৈরি করেন। তাই রিপোর্টে তারতম্য হওয়া স্বাভাবিক।
সিভিল সার্জন বলেন, কোথায় গ্যাপ আছে সেটা তিনি জানেন। বরিশালের ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিক সমিতির নেতাদের এসব গ্যাপ পূরণ করতে বলেছেন তিনি। রমজানে সকল ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিকদের ডেকে একটি নির্দেশনা দেওয়া হবে। সেই নির্দেশনা না শুনলে ঈদের পর তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবেন তিনি।
বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ