ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুতে চট্টগ্রামের ৫টি উপজেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর বাইরে আরো ৫টি উপজেলা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চট্টগ্রাম নগর ও উপকূলীয় এলাকার ১০৪ টি ইউনিয়নের ৪ লাখ ৮৩ হাজার ৮৬ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এর মধ্যে সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন ৮১ হাজার ৪১১ জন মানুষ। আর আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন ৪ লাখ ১ হাজার ৬৭৫ জন মানুষ।
ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চাল ও নগদ টাকা দিয়ে সহযোগিতা করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। তবে এই সহযোগিতা পর্যাপ্ত নয় বলে জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। বাঁশখালী ও আনোয়ারায় সোমবার পর্যন্ত অনেক পরিবার শুকনো খাবার ও পানি খেয়ে দিন পার করেছে। পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এবং ঘর-বাড়ি ভেঙ্গে ও ভেসে যাওয়ায় চুলোয় আগুন জ্বলেনি অনেক পরিবারে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা বাঁশখালী উপজেলায় সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ১০ হাজার পরিবার এবং আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪২ হাজার পরিবার। এছাড়া ১০ বাড়িঘর সম্পূর্ণভাবে এবং ১২ হাজার বাড়িঘর আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখানে ১০০ একর ফসলী জমি সম্পূর্ণভাবে এবং ১২৫০ একর আংশিকভাবে নষ্ট হয়েছে। এছাড়া ১৩ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ৩টি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে বাঁশখালীতে ২০ কিলোমিটার রাস্তা ও ৭কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সম্পূর্ণভাবে এবং ৫০ কিলোমিটার রাস্তা ও ১৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখানে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ৫০ মেট্টিক টন চাল ও ২লাখ নগদ অর্থ বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া মৃতের পরিবারগুলোতে ১লাখ ৮০ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়ছে।
এদিকে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলা আনোয়ারা উপকূলের ৫ হাজার পরিবার সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত এবং ২ হাজার ৮০০ পরিবার আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সম্পূর্ণভাবে ভেসে গেছে প্রায় ২০০ বাড়িঘর ও আংশিক ক্ষতি হয়েছে ২ হাজার ৫০০ বাড়িঘর। ফসলী জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ১০০ একর এবং আংশিক ক্ষতি হয়েছে ৩৫০ একর জমি। এখানে তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও দুইট ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ৬ কিলোমিটার রাস্তা ও ৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সম্পূর্ণ এবং ২০কিলোমিটার রাস্তা ও ১০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, আনোয়ারায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ৩৩ টন চাল ও একলাখ নগদ অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে সন্দ্বীপে রোয়ানুতে ৭ হাজার ৯১২টি পরিবার সম্পূর্ণ ও ৪৮০৫টি পরিবার আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। সম্পূর্ণভাবে বাড়িঘর ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৮হাজার এবং আংশিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫ হাজার। এছাড়া ১৮ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ২টি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান আংশিকভাবে ক্ষতি হয়েছে। সন্দ্বীপের প্রায় ১৭ কিলোমিটার রাস্তা ও ১১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখানে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫০ টন চাল ও ২ লাখ নগদ অর্থ বিতরণ করা হয়েছে।
সীতাকুণ্ডে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, এখানে রোয়ানুর প্রভাবে ৫০০ পরিবার সম্পূর্ণভাবে এবং আরো ৬ হাজার পরিবার আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাড়িঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৫০০টি। এর বাইরে অন্য কোন ক্ষতি হয়নি। এখানে জেলা প্রসাসন কর্তৃপক্ষ ৩০ টন চাল ও নগদ ৫০ হাজার টাকা বিতরণ করেছে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে। এছাড়া মৃতের পরিবারকে দেওয়া হয়েছে ৪০ হাজার টাকা। একইভাবে দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলায় ৯৭৫টি পরিবার সরাসরি ও ২হাজার ৪২৫ পরিবার আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া ৯৭৫টি সম্পূর্ণ এবং ২ হাজার ৪২৫টি বাড়িঘর আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ৪০ একর ফসলী জমিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এরবাইরে অন্যান্য উপজেলার মধ্যে সাতকানিয়া, রাউজান, ফটিকছড়ি, হাটহাজারি ও মীরসরাই উপজেলায় রোয়ানুর প্রভাবে হালকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এদিকে ক্ষতিগ্রস্তদের একজন বাঁশখালীর গণ্ডামারা ইউনিয়নের বাসিন্দা আবুল হোসেন জানান, এলাকায় যে পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেভাবে কোন সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ পাওয়া যায়নি।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন মেজবাহ উদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে আরো সাহায্য-সহযোগিতা দেওয়া হবে। আমাদের আরো চাল ও আর্থিক সহযোগিতা দেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে। পর্যায়ক্রমে এ সহযোগিতা বাড়ানো হবে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের পরদিন রবিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সেমিনার কক্ষে এক ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থদের সহযোগিতায় ত্রাণ বিতরণ বিষয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় দ্রুত সময়ের মধ্যে ত্রাণ পৌঁছে দিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়।
সোমবার সকালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া চট্টগ্রামের ক্ষতিগ্রস্থ উপজেলাগুলোতে সরেজমিন পরির্দশন করেন। জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বার্হী অফিসার, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তারা এসময় উপস্থিত ছিলেন। পরির্দশনকালে মন্ত্রী ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থদের মধ্যে দ্রুত সময়ের মধ্যে অবকাঠামো নির্মাণে টিন ও অর্থ সহায়তা পৌঁছানোর আশ্বাস দেন।
বিডি-প্রতিদিন/ ২৩ মে ১৬/ সালাহ উদ্দীন