১০ ডিসেম্বর, ২০১৯ ১৭:২৪

সাফারি পার্কে ভালুক-সিংহের ঘরে নতুন অতিথি

মাহবুবুর রহমান, শ্রীপুর (গাজীপুর):

সাফারি পার্কে ভালুক-সিংহের ঘরে নতুন অতিথি

গাজীপুরের শ্রীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে মা ভালুক একটি বাচ্চা দিয়েছে। গত শনিবার (৭ডিসেম্বর) ভালুক শাবকের জন্ম হলেও সোমবার সন্ধ্যায় পার্ক কর্মকর্তাদের চোখে পড়ে। এছাড়া একই পার্কে সিংহের পরিবারেও এসেছে নতুন অতিথি। সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (এসিএফ) তবিবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তবিবুর রহমান জানান, কালো ভালুকের বাচ্চা প্রসবের ঘটনায় তারা আনন্দিত। তবে বাচ্চাটি নর নাকি মাদি তা এখনো পর্যন্ত জানা যায়নি। বাচ্চাটি সুস্থ রয়েছে। তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।

পার্কের বন্য প্রাণী তত্ত্বাবধায়ক আনিসুর রহমান জানান, গত শনিবার তারা ভালুক শাবকটির কান্নার আওয়াজ শুনতে পান। ওই সময়ই ধারণা করছিলেন কোনো একটি ভালুক বাচ্চা প্রসব করেছে। সোমবার বিকেলে বাচ্চাটি দেখে তাঁরা নিশ্চিত হয়েছেন। জন্মের পর থেকেই ঝোপের মধ্যে বাচ্চা নিয়ে লুকিয়ে ছিল মা ভালুক। খাবার দেওয়া হলে গত দুদিন মা ভালুক সামনে আসলেও বাচ্চাটি আসেনি। তাই গর্তের ভেতর অবস্থান করা ভালুকের কয়টি বাচ্চা হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তা ছাড়া তাদের নিরাপত্তার কথা ভেবে কাছে যাওয়া হয়নি। কয়েক দিনের মধ্যেই বাচ্চার সংখ্যা জানতে চেষ্টা করা হবে। ভালুক সাধারণত একসঙ্গে এক থেকে তিনটি বাচ্চার জন্ম দেয়। ভালুকের পালে প্রথমবারের মতো বাচ্চার জন্ম হওয়ায় নতুন সম্ভাবনা দেখছেন সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ।

তিনি আরো জানান, ২০১৩ সাল থেকে কয়েক দফায় দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে একটি পশু আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আনা হয় এশীয় জাতের কালো ভালুক। সদ্য জন্ম নেওয়া বাচ্চাসহ পার্কে বর্তমানে ভালুকের সংখ্যা ১২টি। এর মধ্যে চারটি মাদি ভালুক। এরা গর্ভধারণের আট মাস পর বাচ্চা প্রসব করে। এরা সাধারণত এককভাবে চলাফেলা করতে অভ্যস্ত। ভালুক ২০ থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত বাঁচে। তবে আবদ্ধ পরিবেশে ৩০ থেকে ৩৫ বছর বেঁচে থাকে। সাধারণত এক থেকে তিনটি বাচ্চার জন্ম দিয়ে থাকে এরা। মাদি ভালুকের ওজন ৪০ থেকে ১২৫ কেজি আর নর ভালুকের ওজন হয় ৬০ থেকে ২২০ কেজি পর্যন্ত।

এবারই প্রথম সাফারি পার্কে কালো ভালুক বাচ্চা প্রসব করেছে। বিলুপ্তির ঝুঁকিতে থাকা এই প্রাণী সংরক্ষণে প্রজননের উদ্যোগ নেয় তারা। অবশ্য আবদ্ধ অবস্থায় কালো ভালুকের বাচ্চা প্রসবের ঘটনা বাংলাদেশে এটি দ্বিতীয়। এর আগে ২০১২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারায় অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে একটি কালো ভালুক বাচ্চা দিয়েছিল।

সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (এসিএফ) তবিবুর রহমান জানান, সিংহ পরিবারেও নতুন অতিথির আগমন ঘটেছে। সোমবার দুপুরের দিকে সিংহের বেষ্টনীতে মা সিংহকে বাচ্চা নিয়ে ঘুরতে দেখা যায়। সিংহ শাবকের জন্মের সময় সাধারণত চোখ ফুটে না।

এদের চোখ ফুটতে ৩ থেকে ১১ দিন সময় লাগে। নতুন জন্ম নেয়া শাবকটির চোখ ফুটে গেছে, দেখে মনে হচ্ছে শাবকটির বয়স অন্তত ১৫ দিন। জন্মের সময় এদের ওজন ১-৫ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। এ সময় সিংহ শাবককে জঙ্গলের আড়ালে রেখে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখে এবং সেখানে অন্য সঙ্গীদের পর্যন্ত যেতে দেয় না।

শাবকরা ১০ থেকে ১৫ দিনে হাঁটতে শেখে। ৪ থেকে ৫ মাস বয়সে মায়ের দুধের পাশাপাশি অন্যান্য খাবার খাওয়ানো শেখানো হয়। এরা প্রায় বছর দুয়েক পর্যন্ত মায়ের কাছাকাছি থাকে। এদের প্রধান খাদ্য গো মাংস ও প্রতি শুক্রবার জীবিত খরগোস দেয়া হয়।

এ নিয়ে পার্কে সিংহের সংখ্যা দাঁড়াল ১৬টিতে। তবে নতুন শাবকটি পুরুষ না মাদী তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ পর্যন্ত সাফারি পার্কে ১১টি সিংহ শাবকের জন্ম হয়েছে। তবে বিভিন্ন ধাপে এ পার্ক থেকে ঢাকার জাতীয় চিড়িয়াখানায় চারটি সিংহ সরবরাহ করা হয়েছে। সদ্য জন্ম নেয়া ভালুক ও সিংহ শাবকের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রাখা হচ্ছে। 


বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর