১১ ডিসেম্বর, ২০১৯ ১৭:১২

টিপু রাজাকারের ফাঁসির রায়ে উচ্ছ্বসিত শহীদদের স্বজনরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

টিপু রাজাকারের ফাঁসির রায়ে উচ্ছ্বসিত শহীদদের স্বজনরা

টিপু রাজাকার (ফাইল ছবি)

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে রাজশাহীর আবদুস সাত্তার ওরফে টিপু রাজাকারের ফাঁসির রায়ে খুশি শহীদদের স্বজনরা। বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রায় ঘোষণার পর থেকেই রাজশাহীতে সন্তোষ প্রকাশ করছেন তারা।
 
রায় ঘোষণা হবে, এ খবর আগেই পেয়েছিলেন শহীদ পরিরারের সন্তানরা। তাই বুধবার সকাল ১০টা থেকেই তারা নগরীর তালইমারী শহীদ মিনারে অবস্থান নেন। ছিলেন মামলার স্বাক্ষীরাও। এরপর রায় ঘোষণা হলে শহীদদের স্বজনরা আনন্দিত হন, তারা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। এখন টিপু রাজাকারের রায় যেন দ্রুত কার্যকর করা হয়, সেই দাবিও সরকারের কাছে জানান শহীদের স্বজনরা।
 
শহীদ চাঁন মোহাম্মদের ছেলে হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ‘এটি একটি প্রত্যাশিত রায়। আমার বাবাকে একাত্তরের ১ নভেম্বর টিপুসহ ১০ রাজাকার ৩০-৪০ জন পাকিস্তানি সেনা নিয়ে এসে ধরে নিয়ে যায়। আমরা ছাদ থেকে দেখতে পাই, বাবাকে ধরে ট্রাকে তোলা হচ্ছে। ট্রাকে বাবা ছাড়াও আরও অনেক মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তাদের সবাইকেই হত্যা করা হয়।’
 
শহীদ পরিবারের আরেক সদস্য শহীদ সইজুদ্দিন শেখের ছেলে হাসানুজ্জামান হাসানী বলেন, ‘১৩ এপ্রিল আমাদের বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। এরপর বাবা ও আমার মামাকে ধরে নিয়ে যায়। এরপরের দিন বাড়ির পাশেই আমরা বাবার লাশ পাই। এই রাজাকারের রায়ে আমি খুব খুশি। এখন দ্রুত যেন কার্যকর হয়।’ 
 
রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারাও। মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ডা. আবদুল মান্নান বলেন, সে সময় প্রকাশ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের উপর নির্যাতন চালাতো টিপু রাজাকার ও তার দলবল। তাদের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে টর্চার সেল ছিল। সেখানে ধরে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করা হতো। এই রাজাকারের মৃত্যুদণ্ডে আমরা খুশি। এখন গ্রামগঞ্জে আরও যে রাজাকার আছে তাদেরও বিচারের দাবি জানাই।
 
মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতে ইসলামী ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের কর্মী ছিলেন টিপু রাজাকার। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতা করেছেন তিনি। অংশ নিয়েছেন গণহত্যায়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ছাত্রসংঘের নাম বদলে হওয়া ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজনীতিতেও যুক্ত হন তিনি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে লেখাপড়া করা টিপু ১৯৮৪ সালে নাটোরের গোপালপুর ডিগ্রি কলেজে যোগ দেন সহকারী অধ্যাপক হিসেবে। এরপর ২০১১ সালে সেখান থেকেই তিনি অবসরে যান। ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি বিস্ফোরক আইনের এক মামলায় নগরীর মতিহার থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। পরে তাকে যুদ্ধাপরাধ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। এ মামলায় বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন।
 
বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর