বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের রামানন্দের আঁক গ্রামে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ২৪০ বছরের পুরনো মারবেল মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পৌষ সংক্রান্তির গোসাই নবান্ন উৎসবে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান ও শুভ অধিবাসের মধ্য দিয়ে মেলা ও সংকীর্ত্তন অনুষ্ঠিত হয়।
বুধবার ভোরে ঐতিহ্যবাহী মারবেল মেলা শুরুর পর বেলা বাড়ার সাথে লোকেলোকারন্য হয়ে পড়ে। আগৈলঝাড়াসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন উপজেলার বিভিন্ন বয়সের হাজার-হাজার শিশু ও নারী-পুরুষ মেলার প্রধান আকর্ষণ ‘মারবেল খেলা’য় অংশ গ্রহণ করে। ওই গ্রামের মা সোনাইচাঁদ আউলিয়ামন্দির আঙ্গিনায় ঐতিহ্যবাহী মারবেল খেলার প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
মেলায় মন্দির এলাকার আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে মারবেল খেলার আসরে মজে বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ ও শিশুরা। বাড়ির আঙ্গিনা, অনাবাদী জমি, বাগান ছাপিয়ে রাস্তার উপরেও বসে মারবেল খেলার আসর। অনাবাদী জমিতে বসে বাঁশ-বেতশিল্প সামগ্রী, মনোহরী, খেলনা, মিষ্টি, ফল, চটপটি, ফুঁচকা সহ হরেক রকমের খাদ্যদ্রব্য ও নিত্য প্রয়োজনীয় পন্যের দোকানের পসরা। মেলার নিরাপত্তায় পুলিশও ছিল সতর্ক।
মেলা পরিচালনা কমিটির সভাপতি বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক (নিওনেটোলজি) ডা. বিধান চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ওই গ্রামে ৬ বছর বয়সে সোনাইচাঁদ নামে এক শিশুর বিয়ে হওয়ার বছর না ঘুরতেই তার স্বামী মারা যান। স্বামীর মৃত্যুর পর শ্বশুর বাড়িতে একটি নীম গাছের নীচে সদ্য বিধবা শিশু দেব-মহাদেবের আরাধনা ও পূঁজার্চনা শুরু করেন। পূঁজার্চনা থেকে সাধনা। এক সময় সাধনার উচ্চ মর্গে সিদ্ধ হলে সোনাইচাঁদের অলৌকিক কর্মকাণ্ড এলাকা ছাপিয়ে বাইরেও প্রচার পায়। সোনাই’র জীবদ্দশায় আনুমানিক ১৭৮০ খ্রিঃ‘সোনাইচাঁদ আউলিয়া মন্দির’ স্থাপন করা হয়। সোনাইর মৃত্যুর পরেও তার স্থাপিত মন্দির আঙ্গিনায় চলে নাম সংকীর্ত্তন ও নবান্ন উৎসব। স্থানীয়দের উদ্যোগে ২০১২ সালে ওই মন্দিরটি পুনঃনির্মাণ করা হয়।
প্রতিবছরের পৌষ সংক্রান্তির দিন নাম সংকীর্ত্তন ও গোসাই নবান্ন মহাউৎসবকে সামনে রেখে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। আর এই উৎসবকে ঘিরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে গ্রামীণ ঐতিহ্যের ধারক মারবেল মেলা। বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষরা এই দিন মারবেল খেলায় মেতে ওঠেন। আর মারবেল খেলাকে কেন্দ্রে করেই বসে মারবেল মেলা।
স্থানীয় প্রবীনরা জানান, শীতকালে মাঠ-ঘাট শুকিয়ে যাওয়ায় তাদের পূর্ব পুরুষরা মেলার এই দিনে মারবেল খেলার প্রচলন শুরু করেন। যা ঐতিহ্যের ধারক হিসেবে এখনও অব্যাহত আছে। উত্তরসূরী হিসেবে এখন তারাও গ্রামীণ ঐতিহ্যর মারবেল খেলা ধরে রেখেছেন। এ দিনটিকে সামনে রেখে রামানন্দের আঁক গ্রামে কয়েক দিন পর্যন্ত উৎসবের আমেজ বিরাজ করে।
মারবেলা মেলা উৎসবমুখর এবং শান্তিপূর্ণ করতে সেখানে কঠোর নজরদারী করার কথা জানিয়েছেন আগৈলঝাড়া থানার ওসি মো. আফজাল হোসেন।
বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম