কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হকের বিরুদ্ধে প্রার্থীর এনআইডি কার্ড জালিয়াতি করে গ্রাম পুলিশে নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।তবে এ দায় অস্বীকার করেছেন এনামুল হক। তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের এক ইউপি সদস্য
এদিকে, অভিযোগ দেওয়ায় ওই ইউপি সদস্যের ওয়ার্ডে বরাদ্দকৃত প্রকল্পের সহায়তাও বন্ধ করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে ওই এনামুল হকের বিরুদ্ধে। এদিকে, এনআইডি জালিয়াতি করে ইউনিয়ন পরিষদে গ্রাম পুলিশ পদে অপ্রাপ্তবয়স্ক এক কিশোরকে নিয়োগ দেয়ায় অন্য প্রার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
ইতোমধ্যে রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার, দুর্নীতি দমন কমিশন ও সমন্বিত জেলা কার্যালয়, রংপুর এর উপ-পরিচালক বরাবর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন ওই ইউপি সদস্য।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ জালিয়াতির অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করলেও এখনও কোন সিদ্ধান্ত জানাতে পারেননি। স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) গ্রাম পুলিশ বাহিনী গঠন, প্রশিক্ষণ, শৃঙ্খলা ও চাকরির শর্তাবলী সম্পর্কিত বিধিমালা (সংশোধিত ২০১৭) অনুযায়ী গ্রাম পুলিশ নিয়োগে বাছাই কমিটির সভাপতি হচ্ছেন সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসার। এ কমিটিতে ইউপি চেয়ারম্যান পদাধিকার বলে নিয়োগ কমিটির সদস্য। লিখিত অভিযোগে জানা যায়, সম্প্রতি রাজারহাট ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডে গ্রাম পুলিশ (মহল্লাদার) মারা গেলে পদটি শূন্য হয়। পরে ওই পদে চলতি বছরের জুলাই মাসে গৌতম রায় নামে এক কিশোরকে নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু গৌতম রায় নামে ওই এলাকায় কোনও কাউকে পাওয়া না যাওয়ায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এ ব্যাপারে রাজারহাট ইউপির ২ নং ওয়ার্ড সদস্য শহিদুল ইসলাম বাবু অনিয়মের অভিযোগ তুলে বিভিন্ন দফতরে জমা দেন। ওই পদে নিয়োগ পাওয়া গৌতম রায় হচ্ছেন ওই ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের নির্মল কুমার রায়ের ছেলে নিপ্পন কুমার রায় (১৭)। অভিযোগ অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজারহাট ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের গ্রাম পুলিশ প্রফুল্ল কুমার রায় মারা যাওয়ার পর পদটি খালি হয়। এতে তার নাতি নিপ্পন কুমার রায়কে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেন সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান মো. এনামুল হক। এ জন্য নিপ্পন কুমারের নাম ও জন্ম তারিখ পরিবর্তন করে অষ্টম শ্রেণি পাশের সনদ এবং এনআইডি কার্ড তৈরি করে আবেদন করার পরামর্শ দেন।সে অনুযায়ী নিপ্পন কুমারের নাম পরিবর্তন করে গৌতম রায় এবং জন্ম তারিখ পরিবর্তন করে ১২ ডিসেম্বর, ১৯৯৬ দেখিয়ে আবেদন করে নিয়োগ পান নিপ্পন। যদিও এসএসসি পাশের সনদ অনুযায়ী, তার নাম নিপ্পন কুমার রায় এবং জন্ম তারিখ ১০ সেপ্টেম্বর ২০০৩ সাল।
অভিযোগকারী ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম বাবু বলেন, আমার ২নং ওয়ার্ডে গৌতম রায় নামে কেউ নেই। মূলত আমার ওয়ার্ডের স্থায়ী বাসিন্দা নির্মল কুমার রায়ের একমাত্র ছেলে নিপ্পন কুমার রায়কে গৌতম রায় পরিচয় দিয়ে গ্রাম পুলিশ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তার নাম, পরিচয়, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ ও এনআইডি কার্ড জালিয়াতি করে এই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। গৌতম রায় নামে যে এনআইডি কার্ড (১৯৯৬৪৯১৭৭৭৩৮৯৮৫৯৬) আবেদনে দেওয়া হয়েছে তা নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে সার্চ করলে কোনও তথ্য পাওয়া যাবে না।
মোটা অংকের অর্থের লেনদেনে চাকরি দেয়া হয়েছে অভিযোগ করে শহিদুল ইসলাম বাবু আরও বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান ও তৎকালীন ইউএনও মিলে জালিয়াতির মাধ্যমে এই নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন।
নাম পরিবর্তন করে অর্থের বিনিময়ে গৌতম কুমার নামে নিয়োগ পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন অভিযুক্ত গ্রাম পুলিশ নিপ্পন কুমার রায়। তিনি বলেন, চেয়ারম্যান এনামুল হকের পরামর্শে নাম পরিবর্তন করেছি। চেয়ারম্যান আর মেম্বারের দ্বন্দ্বে এখন আমার যত সমস্যা হচ্ছে। নিজেদের দারিদ্রতা ও অক্ষমতার কারণে মৃত দাদার পদে নিয়োগ নিয়েছেন বলেও জানান এ কিশোর।
নিপ্পন ও গৌতম একই ব্যক্তির নাম স্বীকার করলেও প্রার্থীর কাছে টাকা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রাজারহাট ইউপি চেয়ারম্যান মো. এনামুল হক। তিনি বলেন, এ নিয়োগ দিয়েছেন তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। আমি নিয়োগ কমিটির সদস্য।
এনামুল হক বলেন, এনআইডি জালিয়াতি হয়ে থাকলে তা আমার জানা নেই। তদন্তে প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির চাকরি চলে গেলে আমার কিছু বলার নেই।
প্রসঙ্গত, নিপ্পন কুমার রায়ের জন্ম নিবন্ধন সনদে তার জন্ম তারিখ ১০ সেপ্টেম্বর ২০০৩ সাল। সেখানে চেয়ারম্যান এনামুল হকের স্বাক্ষরও রয়েছে।
ইউপি সদস্যের অভিযোগের ব্যাপারে এনামুল হক বলেন, তার প্রার্থীকে চাকরি না দেওয়ায় এরূপ অভিযোগ সবখানে করছেন বলে দাবি করেন তিনি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুরে তাসনিম বলেন, গ্রাম পুলিশ নিয়োগে অনিয়মের বিষয়টি অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত করে বাদী ও বিবাদীর শুনানি করেছি। সেইসাথে প্রার্থীর এনআইডি কাগজপত্র ও জন্ম নিবন্ধন যাচাই করে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের নিকট প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। তবে এ ব্যাপারে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. হাফিজুর রহমান বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজারহাট তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দিয়েছেন। এখন কালেক্টরেট কর্মচারিদের কর্মবিরতি চলছে। কর্মবিরতি শেষ হলে এবং রিপোর্ট হাতে পেলে অবশ্যই আইনগতভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা